রোগ প্রতিরোধক খাদ্যের তালিকা
প্রকাশিত : ১৮:০৫, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২২:৩৫, ২০ জানুয়ারি ২০১৮
খাদ্য খুব স্পর্শকাতর বিষয়, কারণ আমরা অনেকে বাঁচার জন্য না খেয়ে খাওয়ার জন্য বাঁচি। খাদ্যবিজ্ঞানীরা বলেন, “আপনি যা খান আপনি তা-ই।” আজকাল যে অনেক জটিল রোগ আমাদের পিছু নিয়েছে তার একটি বড় কারণ হল কৃত্রিম সার ও কীটনাশক বিষ ব্যবহারের এ যুগে খাদ্যের আদি বিশুদ্ধতা অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে। তার ওপরে রয়েছে নানা রকম প্রক্রিয়াজাত, বেজাল মিশ্রিত ও রাসায়নিক উপায়ে সংরক্ষিত খাদ্য যা কোনোভাবেই খাঁটি ও টাটকা খাবারের সমকক্ষ হতে পারে না। ফ্রিজে দীর্ঘদিন রাখা খাদ্যও ক্ষতিকর। অথচ সুস্থ জীবকোষের জন্য বিশুদ্ধ রক্ত দরকার যা শুধু খাঁটি ও টাটকা খাবার থেকেই তৈরি হয়।
খাদ্যে একটি গুণগত উপাদান হচ্ছে আঁশ যা অন্ত্রনালী পরিষ্কার রাখে বলে ক্যান্সার প্রতিরোধ সহজ হয়। গমের আটায় আঁশ আছে, ময়দায় নেই। ময়দা একটি প্রক্রিয়াজাত মৃত খাদ্য যা কোষ্ঠকাঠিন্য ও ক্যান্সারের সহায়ক। এ রকম আরেকটি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য হচ্ছে চিনি। কারণ এটি রক্তের ঘনত্ব বাড়িয়ে অনেক রোগ ডেকে আনে এবং হাড় পর্যন্ত ক্ষয় করে। সুতরাং ময়দা ও চিনির তৈরি খাদ্য পুরোপুরি বর্জন করা ভালো। সেই সাথে তেল, লবণ ও মশলা নামমাত্র পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।
প্রতিদিনের আহার্যের শতকরা ৪০ ভাগ শ্বেতসার, ১৫ ভাগ আমিষ এবং ৪৫ ভাগ শাকসবজি ও ফল দিয়ে পূরণ করুন। তবে শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য যথা ভাত-রুটি-আলু ইত্যাদির সাথে ফল খাবেন না; অন্তত আধ ঘণ্টা পার্থক্য রেখে খাবেন। শ্বেতসারের সাথে আমিষ জাতীয় খাদ্য যথা মাছ-মাংস-ডিম খাওয়া ভালো নয়। সবজিই একমাত্র খাদ্য যা আমিষ কিংবা শ্বেতসার-উভয়ের সাথেই খাওয়া যায়। দিনে অন্তত আধ কেজি সবজি খান। সকাল শুরু করুন বেশ খানিকটা কাঁচা পেঁপে ও ফল খেয়ে। এতে যকৃৎ ভালো থাকবে প্রতিদিন সাত রকম ফল ও সাত রকম সবজি খাওয়া উচিত। অংকুরিত গম, ছোলা, মুগ, সিমবীচি প্রভৃতি এবং আটা ও যবের তৈরি খাদ্য নাস্তা হিসেবে ভালো। শাক, সিম ও কপি রাতের বেলায় পেটে বায়ু তৈরি করে বলে এগুলো দিনে খাওয়া উচিত।
আমিষ হিসেবে ডাল চমৎকার। বিশেষত মুগ, মসুর ও মাসকলাই। তা ছাড়া ছোলার ডাল ও অংকুরিত ছোলা সব বয়সের মানবদেহে আমিষের ঘাটতি পূরণ করে এবং ডায়াবিটিসে ভাল। সেদ্ধ সয়াবিন ডায়াবিটিসে এবং পুরুষের প্রোস্টেট গ্রন্থি ও নারীর জরায়ু রক্ষায় উপকারী। প্রাণিজ আমিষের জন্য মাছ, দেশি মুরগীর মাংস ও ডিমের শ্বেতাংশ ভালো। লাল মাংস অর্থাৎ গরু-খাসির মাংস উপাদেয় হলেও ক্ষতিকর চর্বি থাকায় তা অনেক ভয়াবহ রোগের উৎস।
সকালে দাঁত মাজার আগে ৬৫০ গ্রাম কুসুম গমর পানি পান করার পর ৪৫ মিনিট পানাহার বন্ধ রাখুন। এতে কোষ্ঠ পরিষ্কার হয় ও অম্লতাসহ বহু জটিল রোগ সারে। দিনে ৮/১০ গ্লাস পানি পান করুন। মেয়েরা কখনও দাঁড়িয়ে পানি পান করবেন না, এতে জরায়ুর ক্ষতি হয়। স্বাস্থকর পানীয় হিসেবে দুধ-চিনি ছাড়া হালকা চা ভালো। ডাবের পানিও ভালো, তবে দিনে একটির বেশি নয়। গরমে প্রাণ জুড়াতে লেবুজলে মধু বা অল্প গুড় মিশিয়ে পান করুন এবং কোলাজাতীয় যাবতীয় কোমল পানীয় থেকে দূরে থাকুন। কারণ স্রেফ মুনাফালোভী ফর্মুলায় বাজারজাত এবং ঝলমলে বিজ্ঞাপনে দেখানো সুদৃশ্য বোতলে ভরা, প্রচুর চিনিগোলা ও সুস্বাদু এসব শরবত ডায়াবিটিসসহ অনেক বড় বড় রোগের কারণ। (এগুলোর সাথে এখন ফাস্ট ফুড যোগ হওয়ায় ফাস্ট ডেথ বা দ্রুত মৃত্যুর ভিত্তি তৈরি হয়েছে।)
খাওয়ার পরিমাণ এবং সময়ও গুরুত্বপূর্ণ। কখনও পেট পুরে খাবেন না। প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়া উচিত। রাতের খাওয়া আটটার মধ্যে চুকিয়ে ফেলা ভালো। কারণ বিকেল থেকে হজমশক্তি কমতে থাকে।
যব ডায়াবেটিসে উপকারী, কোলেস্টেরর কমায় এবং ত্বক ও মলাশয় ভালো রাখে। গমাংকুর ক্যান্সার প্রতিরোধক। দৈনিক কিছু পরিমাণ টক দই খেলে এবং সকালে পানি মিশিয়ে তৈরি করে ছেঁকে নেওয়া এক গ্লাস সবুজ পাতার রস (বাঁধাকপি, কলমি, তুলসী, থানকুনি, লেটুস, অ্যালোভেরা, তেলকুচি ইত্যাদি) সম্ভব হলে মধু, আদার রস ও ত্রিফলা অর্থাৎ শুকনো আমলকি, হরিতকি ও বহেরার গুড়োঁ মিশিয়ে পান করলে শরীর সতেজ থাকে। একইভাবে পান করা ভাল কাঁচা পেঁপে, গাজর ও লাউয়ের মত সবজি এবং কামরাঙা ও জাম্বুরার মতো ফলের রস। ক্যামোমাইল চা হজম শক্তি ও স্নায়ুতন্ত্র ভাল রাখে। কাঁচা বেল ফালি করে রোদে শুকিয়ে তৈরি বেলশুঁট ভিজিয়ে বা সেদ্ধ করে পানিসহ নিয়মিত খেলে পেটের অনেক পুরনো অসুখ, যেমন অজীর্ণ ও আমাশয় সেরে যায়। কলমি শাক ত্বক ভালো রাখে ও ঘা সরায়। কচু শাক রক্ত তৈরি ও পরিষ্কার করে। থানকুনি পাতা পেট, চোখ ও চুল ভাল রাখে। পুদিনা পাতা ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড ও পেট ভালো রাখে। আদা বাত ও মাথাব্যথা কমায় এবং হজমশক্তি বাড়ায়। আমলকি ভিটামিন ‘সি’- এর সবচেয়ে ভাল উৎস। তিল তারুণ্য ধরে রাখে। কাঁচা হলুদ রক্ত পরিষ্কারক এবং ঠান্ডা প্রতিরোধক। কালজিরাকে প্রচীন কাল থেকেই বলা হয় হাজার রোগের ওষুধ। স্পিরুলিনা শরীরের ক্ষয় পূরণ করে এবং উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিসহ অনেক রোগে উপকারী। রসুন-সেদ্ধ পানি খেলে সর্দি-কাশি সারে।
মুখের অপরিচ্ছন্নতা থেকে অনেক রোগ হয়। তাই রাতে শোয়ার আগে অবশ্যই দাঁত মাজুন এবং মোটামুটি শক্ত বিছানায় ঘুমানোর আগে শবাসন করতে করতে মনের যত দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন।
এত অল্প কথায় যা বলা হল তা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিশাল জ্ঞান ভান্ডারের একটি ক্ষুদ্র অংশ। তবে অনেকটা স্বচিকিৎসার দ্বারা রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে সুস্থ থাকার উদ্দেশ্যে সংক্ষেপে ও সহজে এ বিষয়ে আরও জানতে চাইলে চিন্মায় সেনগুপ্তের “বিনা ওষুধে রোগ নিরাময়/ প্রিটিকিন প্রোগ্রাম” এবং দেবেন্দ্র ভোরার “আপনার স্বাস্থ্য আপনারই হাতে/অ্যাকিউপ্রেশার ও অন্যান্য প্রকৃতিক চিকিৎসা” নামক বইগুলো পড়তে পারেন।
লেখক: স্বেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যাণ সংস্থা ‘হীল’ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বাংলাদেশ বিমান এর চীপ পার্সার/
একে/টিকে