রোজা রাখা অবস্থায় মেনে চলুন কিছু নিয়ম
প্রকাশিত : ০৯:১৮, ৬ মে ২০১৯ | আপডেট: ১০:৫৩, ৬ মে ২০১৯
পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী
[বাংলাদেশের অন্যতম পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী। রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি প্রধান পুষ্টিবিদ হিসেবে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি সচেতনতামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়মিত লেখেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন পাঠকদের জন্য।
রোজা রাখার উপকারিতা কী এবং রোজা রাখা অবস্থায় কী কী নিয়ম মেনে চলা উচিত তা নিয়েই আজ তিনি বলেছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন পাঠকদের জন্য।]
পবিত্র মাহে রমজান মাসে রুটিন মেনে চলার কারণে রোজা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হয়ে উঠে। খাদ্যাভাসের ক্ষেত্রে আমরা সব সময় সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের কথা বলি। রমজানে আমাদের সময় মতো খেতে হয়। যেমন মাগরিবের আজান দিলেই আমাদের ইফতার করতে হয়। অন্য সময়ে সকালের নাস্তা একেকজন একেক সময় করে। কিন্তু রমজানে সেটা হয় না।
মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে রোজা একটা বড় ভূমিকা রাখে। রোজার সময় পুরো ৩০টা দিন আমাদের মধ্যে একটা আমেজ থাকে। এই সময় কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ না করা, কথাবার্তাতে সংযম বজায় রাখা, খারাপ কথা না বলা ইত্যাদি কারণে আমাদের মানসিক প্রশান্তি বাড়তে থাকে।
তাছাড়া রমজানে আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়ার পরিবর্তন হয়। রোজা রেখে কারো কখনো ওজন কমেনা। বরং পরিমিত খাবার ও সময়মতো খাবারের ফলে রমজানে শরীরের সুন্দর ওজন বজায় রাখা সম্ভব হয়। অনেকে মনে করে রোজা রাখলে অ্যাসিডিটি হয়, এটা আমাদের খাদ্যের নির্বাচনের ভুলের কারণে হয়। রোজা আমাদের সংযমী হতে শেখায়। পরিমাণ মতো খাবারে অভ্যস্ত করতে শেখায়।
রমজানে তারাবির নামাজ ও অন্যান্য নামাজও পড়া হয়। অনেকে জামাতে নামায আদায় করে, ফলে আলাদা করে কোনো ব্যায়াম না করলেও এ সময় চলবে। স্বাভাবিক কাজে যেন গতি ঠিক থাকে সে জন্য শরীরের সঠিক পুষ্টি বজায় রাখতে হবে। খুব বেশি ‘এক্সারসাইজ’ না করাই ভাল। অন্য সময় আমরা হয়তো খুব দৌঁড় ঝাঁপ করে কাজ করি। রমজানে ধীরে সুস্থে কাজ করা ভাল। যেমন অন্য সময়ে আমরা লিফট ব্যবহার না করে সিড়ি ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করি। কিন্তু রমজানে বেশি ক্লান্ত থাকলে প্রয়োজনে লিফট ব্যবহারে করা যাবে। রোজায় সবার শারীরিক সামর্থ্য একরকম না। সেহেতু নিজের ওপর অতিরিক্ত চাপ না নেয়ায় ভালো।
আমাদের শরীরে দৈনিক দুই থেকে তিন লিটার তরলের চাহিদা থাকে। যেহেতু এখন গরমকাল তাই আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকা দরকার। এ সময় শরীরে ঘাম হয়, ইউরিন হয়। তাই আমাদের উচিত ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পানি পানের বিষয়টি মাথায় রাখা।
অন্য কাজের ঝামেলায় পানি পানের বিষয়টি মাথায় নাও থাকতে পারে। তাই একটি বোতলে বিশুদ্ধ দুই লিটার পানি রাখা যেতে পারে। আধা ঘণ্টা পর পর সেখান থেকে অল্প অল্প পানি খাওয়া যেতে পারে।
যেমন নামাযের আগে এক গ্লাস, নামাজের পর এক গ্লাস, ইফতারের সময় এক গ্লাস, ইফতারের কিছু সময় পরে এক গ্লাস- এভাবে সময় ভাগ করে করে মোটামুটি ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা যায়।
এছাড়া পানির চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা কিছু তরল খাবারের কথা বলি। যেমন: ফ্রুট জুস, লাচ্ছি, ডাবের পানি, তোকমা ও মধু দিয়ে শরবত, ইসুবগুলের শরবত খাওয়া যেতে পারে।
আবার যারা রাতের খাবার খেতে চান না তাদেরকে আমি পরামর্শ দিই স্যুপ খেতে। অল্প সময়ে এটি প্রস্তুত করে খাওয়া সম্ভব। দুধ ও কিন্তু তরল খাবার। সেটিও আমরা খেতে বলি।
(তামান্না চৌধুরী, প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল)