লন্ডন বইমেলায় শিল্প-সংস্কৃতি পুরস্কার পেলেন বিশ্বজিত সাহা
প্রকাশিত : ২০:৩৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
বাংলাদেশের বাইরে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিল্প ও মননের বিকাশ ও চর্চায় নিরলস অবদানের জন্য ইংল্যান্ডে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ, ইউকে-এর প্রথম বারের মতো প্রবর্তিত পুরস্কারটি পেয়েছেন মুক্তধারা নিউইয়র্ক-এর কর্ণধার ও নিউইয়র্ক বইমেলার প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা। ২৪ সেপ্টেম্বর লন্ডনে ৮ম বইমেলা উপলক্ষে ঘোষিত হয়েছে এই পুরস্কার। ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর রোববার ও সোমবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ, ইউকে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে যাগ দিয়েছেন বাংলাদেশের কবি আসাদ মান্নান। বই মেলার উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরীসহ অতিথিরা।
লন্ডনের এই বইমেলায় ঢাকা থেকে আগামী, অনিন্দ্য প্রকাশন, অন্যপ্রকাশ, উৎস, ইত্যাদি, নালন্দা, বাসিয়াসহ বেশ কয়েকটি স্টল যোগ দিয়েছে। রয়েছে ইংল্যান্ডের বেশ কিছু স্টল। এবারের বইমেলায় যুক্তরাজ্যপ্রবাসী প্রয়াত সাংবাদিক আবদুল মতিন ও তাসাদ্দুক আহমেদের নামে নতুন দুটো পদক ঘোষণা দেয়। এবার আবদুল মতিন সাহিত্য পদক পেয়েছেন কবি রব্বানী চৌধুরী। তাসাদ্দুক আহমদ শিল্প ও সংস্কৃতি পদক পেয়েছেন নিউইয়র্ক মুক্তধারার কর্ণধার বিশ্বজিত সাহা।
একই সময়ে নিউইয়র্কে `বাংলাদেশ বাণিজ্য মেলা`র সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় বিশ্বজিত সাহা লন্ডনে উপস্থিত থাকতে পারেননি। এই সম্মাননা ও পদক তার পক্ষে ইংল্যান্ডে গ্রহণ করেন বাংলাদেশ থেকে আগত ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের অন্যতম পরিচালক আদিত্য অন্তর।
বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিল্প, মননের বিকাশ ও চর্চায় বিশ্বজিত সাহার কর্ম
নিউইয়র্কের বাংলা বইমেলার পথিকৃৎ সংগঠক হিসেবে বহুল পরিচিত বিশ্বজিত সাহার জন্ম নোয়াখালী জেলার লতিবপুর গ্রামে। চৌমুহনী থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের অন্যতম কৃতী পুরুষ প্রয়াত চিত্তরঞ্জন সাহার মুক্তধারা ও পুথিঘর লি.-এ যোগ দেন। পরে বিশ্বজিত সাহা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। প্রকাশনা ও সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার পথচলা। এরপর ১৯৯১ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হন এবং সেখানে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও প্রকাশনা জগতের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন।
বিশ্বজিত সাহা তার প্রতিষ্ঠিত মুক্তধারা নিউইয়র্ক-এর মাধ্যমে ১৯৯২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপন করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সূচনা করেন। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভের পিছনে এই ঘটনাটি অবশ্যই দিশারী হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৯২ সাল থেকে উত্তর আমেরিকায় তিনি বাংলা বইমেলারও সূচনা করেছেন। ২৮ বছর ধরে আমেরিকায় অনুষ্ঠিত এই বইমেলা প্রতি বছর একজন বাঙালি লেখক উদ্বোধন করে থাকেন। ১৯৯১ সালে ‘মুক্তধারা নিউইয়র্ক’ প্রতিষ্ঠার পর আমেরিকায় বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির নব উন্মেষ ঘটে। প্রবাসী বাঙালি শিশু-কিশোরদের জন্য বাংলা লিখন প্রতিযোগিতা শুরু করা হয়। তার উদ্যোগেই ১৯৯৫ সালে আমেরিকায় প্রথমবারের মতো সপ্তাহব্যাপী বাংলা চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের প্রয়াত চলচ্চিত্রকার শেখ নিয়ামত আলী উৎসব উদ্বোধন করেন।
মুক্তধারা নিউইয়র্ক ১৯৯৬ সালে আমেরিকার মূলধারার ৪০টি লাইব্রেরিতে বাংলা বই পাঠানো শুরু করে। ১৯৯৯ সালে মুক্তধারা কর্তৃক শুরু হয় বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বাংলা ডিভিডি প্রকাশনা। ২০০০ সালে বিশ্বজিত সাহার পরিকল্পনায় ও প্রয়াত ড. হুমায়ূন আজাদের রচনায় প্রকাশিত হয় Our Beautiful Bangladesh গ্রন্থটি যা আমেরিকায় জন্ম নেওয়া ও বেড়ে-ওঠা বাঙলি শিশু-কিশোরদের স্কুলে সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০০১ সালে মুক্তধারা নিউইয়র্ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনভিত্তিক প্রথম ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’ প্রকাশ করে। এরপর ২০০২ সালে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশাত্মবোধক কবিতা ও দেশের গানের প্রথম ডিভিডি এবং ২০০৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র ‘সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ’ প্রকাশ করা হয়।
বিশ্বজিত সাহার উদ্যোগে ২০০৫ সালে বহির্বিশ্বের ৩৬টি দেশের বাঙালিদের নিয়ে নিউইয়র্কের ম্যানহাটান সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্বব্যাপী বাংলা ও বাঙালি’বিষয়ক সাড়া জাগানো অনুষ্ঠান। ২০০৭ সাল থেকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন শুরু করে ‘আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব’ যা বর্তমানে আমেরিকায় বাঙালিদের সর্ববৃহৎ উৎসব ও মিলনমেলা হিসেবে পরিচিত। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন-এর উদ্যোগে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে নিউইয়র্কের বোর্ড অব এডুকেশনে ২৬টি বাংলা বই সহায়ক পাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এদিকে বিশ্বজিত সাহার পুরস্কার প্রাপ্তিতে আনন্দের বন্যা বইছে নিউ ইয়র্কপ্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে। ইতোমধ্যে বিশ্বজিত সাহাকে অভিনন্দন জানিয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিল্পকলা গবেষণার প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনসমূহ। নিউইয়র্ক মুক্তধারা আয়োজন করেছে অনবদ্য এক অনুষ্ঠানের। শুভেচ্ছা জানিয়েছে সাংবাদিকদের দুটি সংগঠন।
এসএইচ/
আরও পড়ুন