লাঞ্ছিতের পর ১২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ, মিছিল নিয়ে থানায় ছাত্রীরা
প্রকাশিত : ১৪:২৪, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১৪:৩৩, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
রাজশাহীর একটি ছাত্রীনিবাসে নিম্নমানের খাবারের প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রীকে মারধর করার পর অন্য ছাত্রীদেরও ১২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে পুলিশ এসে উদ্ধার করলে ওই মেসের ছাত্রীরা মিছিল সহকারে থানায় গিয়ে মামলা দেন। এই মামলায় ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার রাতে থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা। ঘটনাটি নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকায় ‘ঝলক-পলক মেস’ ছাত্রীনিবাসে। ছাত্রীনিবাসটিতে প্রায় ৩০০ ছাত্রী থাকেন।
আটককৃতরা হলেন ওই ছাত্রীনিবাসের মালিক আব্দুল মতিন ও তার দুই ছেলে ঝলক ও পলক।
ছাত্রীদের অভিযোগ, রোববার বেলা ১১টার দিকে নিম্নমানের খাবারের প্রতিবাদ করার জের ধরেই ঘটনার সূত্রপাত। পরে দিনভর গেটে তালা মেরে রেখে ছাত্রীদের ছাত্রীনিবাসে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে পুলিশ গিয়ে দুজনকে আটক করে এবং ছাত্রীদের মুক্ত করে।
পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে মামলা করতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বোয়ালিয়া থানায় যায় ছাত্রীরা।
এ সময় ছাত্রীরা জানান, তাদের বেশিরভাগ ছাত্রীই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির প্রস্তুতির জন্য এই ছাত্রীনিবাসে আছেন। এই ছাত্রীনিবাসে টাকা বেশি নেওয়া হলেও খাবারের মান খুবই খারাপ।
ছাত্রীরা আরও জানায়, রোববার সকালে নিম্নমানের খিচুড়ি পরিবেশনের প্রতিবাদ করেন এক ছাত্রী। এ ঘটনার পর তিনি এই ছাত্রীনিবাসে থাকবেন না বলে মালিককে জানিয়ে দেয়। এ সময় মালিক ওই ছাত্রীকে জানায়, ছাত্রীনিবাসে ওঠার সময় তিনি যে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন সেখানে আছে যে ৭ মাসের আগে ছাত্রীনিবাস ছাড়া যাবে না। ওই ছাত্রী চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে মালিক জানান আইনজীবী ছাড়া এটা দেখানো যাবে না।
নিজের স্বাক্ষর করা চুক্তিপত্র দেখতে আইনজীবী লাগবে কেন, এমন প্রশ্ন তুললে ছাত্রীনিবাসের মালিক আব্দুল মতিন তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় মালিকের দুই ছেলে ঝলক ও পলক এসে ওই ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় অন্য ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ঝলক ও পলক তার বন্ধুদের নিয়ে গিয়ে ছাত্রীদের হুমকি দেয়। এ সময় তারা বলে বেশি ঝামেলা করলে রাজশাহীতেই থাকতে দেওয়া হবে না।
ছাত্রীদের অভিযোগ, সকালের ওই ঘটনার পর মালিকপক্ষ দিনভর তাদের ছাত্রীনিবাসে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাদের বলা হয়, রাতে ফটকের তালা খুলে দেওয়া হবে। তখন সবাইকে একযোগে ছাত্রীনিবাস ছাড়তে হবে। তখন ছাত্রীরা ফোন করে তাদের বন্ধুদের সহযোগিতা চান।
খবর পেয়ে সেখানে যান নগরের বোয়ালিয়া থানার ওসি মেহেদী মাসুদ। তিনি ছাত্রীনিবাস থেকে দুজনকে আটক করে নিয়ে যান। এ সময় তিনি মামলা করার জন্য ভুক্তভোগী ছাত্রীদের থানায় ডাকেন।
পরে রাত ১২টার দিকে ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে থানায় যান। ভুক্তভোগী ছাত্রী মামলা করার পর রাত ২টার দিকে তারা থানা থেকে বের হন।
ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘আমি খবর পেয়েই সেখানে গিয়ে দুজনকে আটক করি। পরে অভিযান চালিয়ে আরও একজনকে আটক করা হয়। ভুক্তভোগী ছাত্রীর মামলায় ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রীনিবাসটিতে মালিক ও মালিকের ছেলেরা এক ছাত্রীকে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন, শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছেন। খবর পেয়েই পুলিশ সেখানে যায় এবং তিনজনকে হেফাজতে নেয়।’
তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে অনেক মেস। এটা আমাদের মাথাতেই আসেনি যে, স্টুডেন্টরাও এ রকম থ্রেটের মুখে থাকে। এটা এখন আমাদের নলেজের মধ্যে আসলো। আমরা সজাগ থাকব। কেউ এ রকম ঘটনার মুখোমুখি হলে ৯৯৯ বা থানায় ফোন করলে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
প্রতিবেশীরা জানায়, মেস মালিক আব্দুল মতিন ও তার ছেলেরা এর আগেই ছাত্রীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। প্রতিবেশীরাও তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। কেউ কিছু বলতে গেলে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হুমকি দেয় তারা।
এএইচ
আরও পড়ুন