ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

লিপ ইয়ার কি, কেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৫২, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

লিপ ইয়ার (Leap year)। বাংলায় যাকে অধিবর্ষ বলা হয়। যে বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ২৯ দিন থাকে, সেই বছরটাকেই লিপ ইয়ার বলা হয়। আমাদের অনেকেই হয়তো বিষয়টি জানেন না। কিন্তু লিপ ইয়ারের গল্পটা আরও একটু বড়।

প্রশ্ন আসতে পারে-

লিপ ইয়ারের প্রয়োজনীয়তা কী?

আসলে আমরা বছর গণনা করি ৩৬৫ দিনে। কিন্তু সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে পৃথিবীর ৩৬৫ দিনের কিছু বেশি সময় লাগে। এই সময়টা হলো ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। আমরা প্রতি বছরে কয়েক ঘণ্টা কম হিসাব করি। 

কম হিসেব করা সময়গুলো কোথায় যাবে? সেই ভাবনা থেকেই এসেছে লিপ ইয়ার। প্রতি চার বছরে আমাদের এই না হিসাব করা সময়টা মিলে প্রায় একদিন হয়ে যায়। সেজন্য চার বছর পর পর বছরে একটা দিন বাড়তি হিসাব করা হয়। সেই বছরে থাকে ৩৬৬ দিন। এই বাড়তি দিনটাই হলো ২৯ ফেব্রুয়ারি। আর এরকম বছরকেই বলা হয় লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ।

কোন কোন বছর লিপ ইয়ার হয়?
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে যেই বছরগুলো ৪ দিয়ে বিভাজ্য, সেগুলোই লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে। পৃথিবী সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে ঠিক ৩৬৫.২৫ দিন নেয় না, কিছুটা কম সময় নেয়। তাই চার বছর পর পর বছরে একদিন বেশি হিসাব করলে প্রতি চারশ বছরে তিনদিন বেশি হয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধান করতে যেসব বছর ১০০ দ্বারা বিভাজ্য, কিন্তু ৪০০ দ্বারা নয়- তাদের লিপ ইয়ার হিসেবে গণনা করা হয় না।

২০২০ সালটা কিন্তু লিপ ইয়ার। সেই হিসেবে আজ ২৯ ফেব্রুয়ারি বিশেষ সেই দিন।

এই লিপ ইয়ার কোথা থেকে আসলো?
৪৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রোমান শাসক জুলিয়াস সিজার লিপ ইয়ার ধারণার প্রবর্তন করেন। পূর্বে রোমানদের বর্ষপঞ্জি ৩৫৫ দিনে গণনা করা হতো এবং নির্দিষ্ট ঋতুতে নির্দিষ্ট উৎসব পালন করার সুবিধার্থে একটি ২২ বা ২৩ দিনের মাস প্রতি দ্বিতীয় বছরে যোগ করা হতো। জুলিয়াস সিজার এই নিয়মটিকে সহজ করার জন্য বিভিন্ন মাসে দিন যোগ করে ৩৬৫ দিনে বছরের হিসেব চালু করেন, যা জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি হিসেবে পরিচিত। সিজারের রাজ জ্যোতির্বিদ সোসিজেনেসের গণনা অনুসারে প্রতি চার বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসে ২৮তম দিনের পরে একটি বাড়তি দিন যোগ করে এই চতুর্থ বছরটিকে লিপ ইয়ার ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু জুলিয়াস সিজার প্রবর্তিত জুলিয়ান বর্ষপঞ্জিতেও কিছুটা ভুল থেকে যায়। কারণ জুলিয়াস সিজার যেখানে বৎসরের ব্যাপ্তি ধরেছিলেন ৩৬৫.২৫ সৌরদিবস (৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা), প্রকৃতপক্ষে সেটি হবে ৩৬৫.২৪২২ সৌর দিবস (৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড) যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে ১১ মিনিট ১৩ সেকেন্ড বা ০.০০৭৮ দিন কম। এই সামান্য গরমিলে কয়েক বছরে কোন প্রভাব না পড়লেও জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৪৮৩ বছরে ১১ দিন অতিরিক্ত হয়। ১৫৮২ খৃষ্টাব্দে দেখা যায় বসন্ত বিষুবন ২১ মার্চের পরিবর্তে ১১ মার্চে পড়েছে।

ওই বছর রোমের ত্রয়োদশ পোপ সেন্ট গ্রেগরী (৮ম) গ্রেগরী জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি পরিমার্জন করেন। তিনি ১৫৮২ সালের হিসাব থেকে ১০ দিন বাদ দিয়ে বর্ষপঞ্জি সংশোধন করেন এবং জুলিয়ান পদ্ধতি সংস্কার করে বলেন, যে শতবর্ষীয় সালগুলো ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য নয় সে সাল গুলোকে ‘অধিবর্ষ’ বা লিপইয়ার হিসেবে গন্য করা হবে না। কারণ বছরের দৈর্ঘ্য ৩৬৫.২৪২২ সৌর দিবস হলে প্রতি চারশত বছরে ১০০টি নয় বরং ৯৭টি লিপইয়ার প্রয়োজন। তাই প্রতি চার বছরে যে অধিবর্ষ বা লিপইয়ার ধরা হয় চারশত বছরে তার মধ্যে ৩টি বাদ দিতে হয়। গ্রেগরীয়ান নিয়ম অনুযায়ী চারশত বছরের চারটি শতবর্ষীয় লিপইয়ার সাল থেকে যে সালটি ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য সেটিকে লিপইয়ার ধরে বাকী ৩টিকে লিপইয়ার হিসেবে গণ্য করা হবে না। এই কারণে ১৭০০, ১৮০০ ও ১৯০০ সাল লিপ ইয়ার ছিল না; ২১০০ সালও লিপ ইয়ার হবে না, কিন্তু ১৬০০ ও ২০০০ সাল লিপ ইয়ার ছিল।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি