শরীর ভাল রাখতে দিনে ১৫০ গ্রাম ভাত
প্রকাশিত : ১৯:০১, ৬ জুন ২০১৯
নিজের ভুড়ি কমাতে আমরা অনেকেই বেছে নিচ্ছি ভাতের বিকল্প। কিন্তু যে ভাত আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির মূল স্তম্ভ, তাকে বর্জন করে আসলে কতটুকু সুস্থ থাকা যায়? আমেরিকান হার্ট অ্যাসোশিয়েশনের মতে, সুষম খাবারের অঙ্গ হিসেবে পরিমাণে অল্প করে ভাত খেলে, সে যদি ফ্যানা ভাতও হয়, ওজন বাড়ে না। এতে বরং উচ্চ রক্তচাপ, মেটাবলিক সিনড্রোম (হৃদরোগের অন্যতম কারণ) ও কোমরের মাপ বাড়ার আশঙ্কা কমে যথাক্রমে ৩৪, ২১ ও ২৭ শতাংশ। কিছু কিছু ক্যানসারকে প্রতিরোধেরও ক্ষমতা বাড়ে। কাজেই শরীর ভাল রাখতে সারা দিনে ১৫০ গ্রামের মতো ভাত খেতেই পারেন।
ভাত মানেই হু হু করে ওজন বাড়বে এমন নয় বলেই দাবি পুষ্টিবিদদের৷ তারা জানিয়েছেন, সকাল–বিকেল এক থালা ভাত নিয়ে বসা যেমন কাজের কথা নয়, ঠিক তেমনই তাকে পুরোপুরি বর্জন করারও দরকার নেই। কারণ সারা দিন ধরে তরতাজা থাকতে হলে, সুস্থ শরীরে কাজকর্ম করে যেতে হলে সকাল বা দুপুরের দু’–মুঠো ভাতের কোনও বিকল্প হয় না। ফ্যান না ঝরানো ভাত হলে আরও ভাল৷ কারণ তাতে ভিটামিন বেশি পাওয়া যায়।
রুটি–পাউরুটি–সিরিয়া
ভাবছেন রুটি না খেয়ে ভাত কেন? আসলে রুটির চেয়ে ভাতে ক্যালোরি কিছু বেশি নেই। ১০০ গ্রাম চাল বা আটা, দুটোতেই আছে ক্যালোরি। কাজেই সকাল–দুপুর–রাত মিলে যদি ১৫০ গ্রাম চালের ভাতও খান, ৫০০ ক্যালোরির বেশি ঢোকে না শরীরে। দিনে ২০০০–২২০০ ক্যালোরি খাওয়ার বরাদ্দ থাকলে এর সঙ্গে স্যালাদ, স্যুপ, কম তেলে রান্না করা ডাল–তরকারি–মাছ–মাংস, যাই খান না কেন, এক দিকে যেমন সুষম খাবারের হিসেব মেলে কাঁটায় কাঁটায়, অন্য দিকে ক্যালোরি বজায় রাখাও সহজ হয়। কারণ ভাত খেলে যে তৃপ্তি হয়, মুখরোচক খাবারের জন্য যত কম আকাঙ্ক্ষা জাগে, খুব কম খাবারেই তা হয়।
তবে ভাতের গ্লাইকোজেন গলতে দেরি করে, রুটির ক্ষেত্রে তুলনায় অনেক তাড়াতাড়ি গলে যায়। তাই অনেকেই ভাতের চেয়ে রুটি বেশি পছন্দ করেন। সেটা ভুল নয়। তবে একেবারে ভাত বাদ দেওয়ার মতো ভয়ের খাবারও নয়। বরং ভাত রুটি মিশিয়ে বা এক বেলা অল্প করে ভাত থেকে সঙ্গের তরিতরকারি বেশি করে খেয়েও দিব্য পেট ভরানো যায়। পূরণ করা যায় প্রয়োজনীয় ক্যালোরিও।
এবার বলি পাউরুটি ও অন্য সিরিয়ালের কথা। হোল গ্রেন বা মাল্টি গ্রেন হলে তবু চলতে পারে, না হলে নয়। কারণ এ সব হল প্রক্রিয়াজাত খাবার। প্রসেসিংয়ের সময় এটা–সেটা মেশানোর ফলে প্রাকৃতিক গুণে ঘাটতি হয়। তার উপর হোল গ্রেন না হলে ফাইবার থাকে না বলে তারা পড়ে যায় সিম্পল কার্বোহাইড্রেটের তালিকায়।
ভাতের উপকার
ভাতকে বলে ‘ফ্রি ফুড’৷ কারণ এতে সোডিয়াম, কোলেস্টেরল, গ্লুটেন ইত্যাদি ক্ষতিকর উপাদান থাকে না। চর্বি থাকেই না প্রায়। বিশেষ করে ট্রান্স ফ্যাট, যা খেলে কোলেস্টেরল বাড়ার আশঙ্কা থাকে। স্যাচুরেটেড ফ্যাটও থাকে না। বরং থাকে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা স্টার্চ, শরীরকে শক্তি জোগাতে যার বিরাট ভূমিকা। ফাইবারের উপস্থিতিও পেটের সমস্যা কমাতে, ওজন–সুগার–রক্তচা বশে রাখতে যার ভূমিকা আছে।
ভাত সহজে হজম হয়। ফলে অসুখবিসুখের মধ্যেও খাওয়া যায়। ডায়াবিটিসেও সে ব্রাত্য নয়। সঙ্গে শাক–সব্জি–সালাদ থাকলে এক–আধ কাপ ভাত খাওয়া যেতে পারে আরামসে।
ভাত হজম হয় ধীরে, হোল গ্রেন চালের হলে আরও ধীরে। ফলে পেট অনেক ক্ষণ ভরা থাকে। ‘ফিল গুড’ হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে বলে অল্প খেলেও শরীর–মন তৃপ্ত থাকে। ভাতে আছে প্রোটিন–ভিটামিন–মিনারেলস। বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিলিয়েমিশিয়ে খেলে সে উপকার আরও বাড়ে।
অতএব ভাত
রুটি খেয়ে অতৃপ্ত থাকা বা পেটের গোলমালে ভোগার দরকার নেই। দিনে একবার কি দু’বার ভাতই খান। তবে চেষ্টা করুন হোল গ্রেন বা আনপলিশ্ড চালের ভাত খেতে।
গ্রেন অর্থাৎ শস্যদানার আদি রূপ হল হোল গ্রেন। অর্থাৎ যখন প্রসেসিং ও পলিশিংয়ের পাল্লায় পড়ে তার উপরের উপকারি অংশের (যাতে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল থাকে অফুরান) বেশ কিছুটা হারিয়ে না যায়।
হোল গ্রেন চাল নানা রকম হয়। বাদামি, লাল, কালো, ওয়াইল্ড ইত্যাদি। অ্যান্থোসায়ানিন নামে উপকারি উপাদানের জন্য লাল চালের রং ইটের মতো। কালো চাল আবার রান্না করলে বেগুনি রং ধরে তাতে৷ ওয়াইল্ড রাইস বা বন্য চাল যদিও আদতে চাল নয়, ঘাষের বীজ, উত্তর আমেরিকার মানুষ খেতেন এক সময়। কিন্তু এর উপকারের প্রমাণ পেয়ে আজকাল তাও চাষ হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এক কাপ বাদামি, লাল, কালো বা ওয়াইল্ড রাইস খেলে সারা দিনে যতটা হোল গ্রেন খাওয়ার কথা তার দুই–তৃতীয়াংশই পূরণ হয়ে যায়।
তবে সমস্যা হয় তাদের স্বাদ–গন্ধ নিয়ে। কালো, বাদামি বা লাল চালের ভাতে বাদামের মতো গন্ধ থাকে, বন্য চালের ভাতে থাকে মাটি মাটি গন্ধ। ফলে অনেকেই খেতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে সাদা ভাতই খান। কারণ তারও অনেক উপকার আছে। তবে পারলে পাতে রাখুন ঢেঁকি ছাঁটা চাল।
সূত্র-আনন্দবাজার
আরকে//