ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪

শহীদ নূর হোসেনকে ‘অ্যাডিকটেড’ বলে বিতর্কে রাঙ্গা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১৭, ১১ নভেম্বর ২০১৯

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অগ্নি শিখা রূপি নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর, ফেন্সিডিলখোর’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। গতকাল রোববার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে মহানগর উত্তর শাখা আয়োজিত দলের ‘গণতন্ত্র দিবস’র এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। তার এই মন্তব্য ইতোমধ্যে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। যে নূর হোসেনকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বলে মনে করা হয়। তাকে নিয়ে এমন বিরুপ মন্তব্য দেশপ্রেমিক সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারছেন না। কারণ একটাই আশির দশকের শেষ দিকে স্বৈরাচার এরশাদ পতনের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল নূর হোসেনের আত্ম ত্যাগের মধ্য দিয়েই।

মশিউর রহমান রাঙ্গা রোববার তার বক্তব্যে বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন। নূর হোসেন কে? যে একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেন্সিডিলখোর।’

শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে রাঙ্গা আরও বলেন, ‘নূর হোসেনকে নিয়ে গণতান্ত্রিক দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নাচানাচি করে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির গণতন্ত্রটা হলো এমন, যারা অতি ফেন্সিডিলখোর, ইয়াবাখোর, যারা ক্যাসিনোর ব্যবসা করে, তারাই হলো গণতন্ত্রের সোনার সন্তান। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখবেন নূর হোসেন দিবস। সেই নূর হোসেন চত্বর এরশাদ করেছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এরশাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক ছিলেন।’

রাঙার এমন বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়াসহ সর্ব স্তরে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। অনেকই বলছেন, ‘রাঙ্গাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’

আবার অনেকেই মনে করছেন শুধু ক্ষমা চাইলেই হবে না তাকে শাস্তি পেতে হবে।

উন্নয়ন কর্মকর্তা মিথিলা সরকার তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক প্রফাইলে লিখেছন, ‘নূর হোসেনে শুধু একজন আন্দোলনকারী যুবকই নন। তিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতিক। গণতন্ত্রের জন্য তার আত্মত্যাগ আমাদের শিক্ষা দেয়। তাকে নিয়ে একজন রাজনৈতিক নেতার এমন মন্তব্য কাম্য নয়। তিনি যে অপরাধ করেছেন তা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, শাস্তিযোগ্য অপরাধা করেছেন তিনি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ বলেন, ‘কোথাকার কোন রাঙ্গা কি বলল তা নিয়ে এত ভাবনা কিসে। তাকে ধরে জেলে ঢুকিয়ে দেলেই হয়। যে নূর হোসেনকে নিয়ে এমন মন্তব্য করে সে আর যা হোক সুস্থ মস্তিকের নয়।’

রাঙ্গা পাগলের প্রলাক করছেন উল্লেখ করে মাহমুদ আহসান নামের এক সাংবাদিক তার ফেইসবুকে লিখেন, ‘কেউ পাগল বা নেশাগ্রস্ত না হলে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে এমন বাজে মন্তব্য করে না। একজন স্কুলের শিক্ষার্থীও জানে নূর হোসেনকে সম্মান দেখাতে হয় আর তিনি কিনা এক নেতা। এমন নেতা না থাকাই উত্তম।’

বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ বলছেন, ‘নূর হোসেন ব্যক্তিজীবনে কি ছিলেন তা দেখার বিষয় না। যদিও তিনি ব্যক্তি জীবনে এক পরিশ্রমী শ্রমিক ছিলেন। তিনি কখনই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন। তাকে নিয়ে মশিউর রহমান রাঙ্গার এমন মন্তব্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছাড়া কিছুই নয়। বিতর্ক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। তবে অনেকেই সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন যে, তাকে যেন শাস্তির আওতায় আনা হয়।’

উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালের ১০ অক্টোবর তৎকালীন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন চলাকালে রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন যুবলীগ নেতা নূর হোসেন। বর্তমান জায়গাটি শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার নামে পরিচিত।  বুকে-পিঠে গণতন্ত্র মুক্তি পাক/স্বৈরাচার নিপাত যাক লিখে বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে পুলিশ তাকে গুলি করে। এরপর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বেগবান হয়। আর নব্বইয়ে বিদায় নিতে বাধ্য হয় তৎকালীন স্বৈরাচার সরকার।
এমএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি