শহীদ মিনার সৃষ্টির নেপথ্যে বহুমাত্রিক ইতিহাস (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১০:৩২, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১০:৫৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করেন
বাঙালির চেতনার বাতিঘর শহীদ মিনার। সংগ্রাম আর সাহস নিয়ে এগিয়ে চলার প্রেরণা। বাঙালির আত্মপরিচয় আর বীরত্বের প্রতীক শহীদ মিনার স্বাধীনতা সংগ্রামেরও দীপশিখা। উচ্চ শির এই স্থাপনা সৃষ্টির নেপথ্যে আছে বহুমাত্রিক ইতিহাস। আছে রক্তক্ষয়, রয়েছে সংগ্রামজাগানিয়া মহাকাব্য।
‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো চার কোটি পরিবার খাড়া রয়েছি তো! যে ভীত কখনো কোন রাজন্য পারেনি ভাঙতে।’
সৃষ্টির ইতিহাস জানতে ফিরতে হয় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। ঢাকা মেডিকেল আমবাগান গেট থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলা দাবিতে মিছিল চলাকালে গুলি করে পুলিশ। শহীদ হন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, শফিউরসহ ছাত্র-জনতা।
পরদিন সিদ্ধান্ত হয় শহীদ মিনার তৈরির।
২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা কাজ শুরু করেন। বদরুল আলম ও সাঈদ হায়দারের নকশায় তৈরি হয় সাড়ে ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট চওড়া মিনার। পুরান ঢাকার পঞ্চায়েতের পিয়ারু সরদার যোগান দেন প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ।
সুর্যোদয়ের পর কাপড়ে ঢাকা মিনারে লেখা হয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ।
শহীদ শফিউরের পিতা মাহবুবুর রহমান উদ্বোধন করেন প্রথম নির্মিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ এসে তা ভেঙে ফেলে। এরপর ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন স্থানে যতোবার গড়ে তোলা হয়েছে, ততবারই ভেঙেছে চেতনার এ স্তম্ভ।
বাঙালি জাতির ইতিহাসে সাহস ও সংগ্রামের ভীত এই শহীদ মিনার। যার ৪৬ ফুট উচ্চতায় বৃহৎ মা কলাম। সঙ্গে ভূপতিত সন্তান। স্থাপনার নকশা করেছিলেন শিল্পী হামিদুর রহমান। ভাস্কর নভেরা আহমেদও শহীদ মিনারের অন্যতম কারিগর।
১৯৫২ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত নানা আঙ্গিক পরিবর্তনের পর স্থায়ী রূপ পায় শহীদ মিনার।
ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান বলেন, ‘পাশে আরও ম্যুরাল হওয়ার কথা ছিল, গ্রন্থাগার হওয়ার কথা ছিল। ডিজাইনে স্ক্যাপ্টারও ছিল। শেষ পর্যন্ত এগুলো হয়নি। এজন্য অনেক চড়াই-উৎড়াই হয়েছে। পাকিস্তান আমলে এগুলো করা সোজাকথা ছিল না। তারপরেও এর চূড়ান্ত রূপ নেয়, এখন যেটা আমরা দেখছি।’
রাষ্ট্রভাষা বাংলার সংগ্রাম, আত্মত্যাগ আর চেতনার প্রতীক হলেও শহীদ মিনার পরবর্তী ধারাবাহিক আন্দোলনের অনুপ্রেরণা। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মিনার দীপ্ত সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক হয়ে জ্বলে উঠেছে বারংবার। আর এ কারণেই পাকিস্তানী জান্তারা বাঙালির বহুমাত্রিক সংগ্রামের আতুরঘর এ শহীদ মিনার গোলার আঘাতে ধ্বংস করে দেয়।
একাত্তরের ২৫শে মার্চ নিশ্চিহ্ন হওয়া এ ভাস্কর্য স্বমহিমায় আজও অমলিন, অবিনশ্বর।
অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান বলেন, ‘একটা ফর্ম যে মানুষকে এত অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করে এবং একটা জাতির চেতনা। আমরা বাঙালিরা যে গর্ব করি এই শহীদ মিনার এখন বিশ্বে সমাদৃত। একটা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমরা পেয়েছি শহীদ মিনারের জন্যে। এর গুরুত্ব অপরিসীম।’
আশির দশকে নকশার পরিকল্পনা বাতিল হলেও ২০১০ সালে উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয় জাদুঘর ও পাঠাগার নির্মাণের। যদিও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি সে নির্দেশ।
এএইচ/