শান্তি ও উন্নয়নের অগ্রদূত শেখ হাসিনা
প্রকাশিত : ০০:০১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
শেখ হাসিনা শুধু একটি নাম নয়, তিনি একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার রূপকার, শত প্রতিকূলতার বিপরীতে অবিচল দেশপ্রেমিক শাসক, দুঃখী মানুষের দুঃখ ভোলানো হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা, তৃতীয় বিশ্বের অগণিত মানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। স্রোতের বিপরীতে চলা এক দুর্গম পথের অভিযাত্রী। যিনি ক্রমাগত চলেছেন অন্ধকার থেকে আলোর পথের সন্ধানে। কঠিন সংগ্রামের পথ বেয়ে আত্নবলে বলীয়ান শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে চলেছেন। আত্মস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হয়ে ওঠেন এক পরম বিস্ময়। তার নিজের জীবনের ঘটনা পরম্পরা ও অশ্রুতপূর্ব বিরল বিষাদময় ঘটনা; কালো অক্ষরে বিকৃত যেন আরেক অসমাপ্ত আত্মজীবনী।
২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এইদিন তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। নিজের শৈশব নিয়ে তিনি লেখেন, “আশ্বিনের এক সোনালি রোদ্দুর ছড়ানো দুপুরে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে আমার জন্ম। আমার শৈশবের স্বপ্নরঙিন দিনগুলো কেটেছে গ্রামবাংলার নরম পলিমাটিতে, বর্ষায় কাদাপানিতে, শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে, ঘাসফুল আর পাতায় পাতায় শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে, জোনাকজ্বলা অন্ধকারে ঝিঁঝির ডাক শুনে, তালতমালের ঝোপে বৈচি, দীঘির শাপলা আর শিউলি ফুলকুড়ি মালা গেঁথে, ধুলোমাটি মেখে, বর্ষায় ভিজে খেলা করে।” শেখ হাসিনার লেখা পড়লেই বোঝা যায় বাংলা ও বাঙালি জীবনের কত গহীন থেকে তিনি উঠে এসেছেন।
শিশুকালটা গোপালগঞ্জে কাটলেও শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন মূলত ঢাকা শহরেই কেটেছে। তার ছাত্রজীবনকাল এ অঞ্চলের উত্তাল আন্দোলনের সময়।তার সময়কালে ষাটের দশক হলো ছাত্র আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল সময়। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাও ছিলেন ওই সময়ের গৌরবের সমাচার রচনায় সক্রিয় যোদ্ধা। তিনি মিছিলে-স্লোগানে সোচ্চার ছিলেন। কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে নিজের নেতৃত্বগুণের পরিচয় দিয়েছিলেন। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবেই তিনি কেবল রাজনীতির পাঠ গ্রহণ করেননি, তার পরিবারই ছিল রাজনীতির বৃহত্তর পাঠশালা। বাবা শেখ মুজিব ছিলেন চিরউন্নত শির। তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে জানতেন না। পিতা তাকে রাজনীতির অনিরাপদ, অনিশ্চিত, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পথে না জড়ানোর জন্য বিয়ে দিয়েছিলেন একজন পরমাণু বিজ্ঞানীর সঙ্গে। অথচ ভাগ্যের কি পরিহাস, রাজনীতি থেকে দূরে রাখার পিতৃবাসনা পূরণ হলো না। বরং সেই কন্যাকেই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে হল, পিতার স্বপ্ন ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো’র কঠিন দায়িত্ব, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নিজের কাঁধে তুলে নিতে হলো। জাতির পিতার কন্যা এখন জাতির অভিভাবকে পরিণত হয়েছেন ।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। সে সময় বিদেশে থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা । ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ডাক আসে দেশমাতৃকার হাল ধরার। ওই বছরের ১৭ মে প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরে আসেন। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনোকিছুই তাকে তার পথ থেকে টলাতে পারেনি এক বিন্দু। ১৯৮৪ সালে সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন “এই সংসদ জনতার”। গণতন্ত্র ও গণমানুষের সমর্থনের প্রতি অগাধ বিশ্বাসই তার রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিশাল বিজয় পায়। এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় দু-দশকের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায়।
শেখ হাসিনার রাজনীতি ও শাসনামলকে বিভিন্ন প্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করা যায়, সবকিছুর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তার সরকারের আমলেই ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ ২৫ বছরের সমস্যার সমাধান করে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ দুই দশকের অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ইউনেস্কো তাকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার দেয়। ১৯৯৯ সালে অ্যাওয়ার্ড হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ফেদেরিকো মেয়র বলেছিলেন, “জাতি গঠনে আপনার পিতার অনুসৃত পথ অবলম্বন করে আপনি দেশকে শান্তি ও পুনর্মিলনের পথে নিয়ে গেছেন”।
১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার দুঃসাহসিক পদক্ষেপ ছিল। ১৯৭১ সালের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে তিনি আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করেন। বিচারের পথকে যারা রুদ্ধ করেছিল তাদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনাটা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। আইনের শাসনের প্রতি অবিচল আস্থার কারণেই তিনি সফল হয়েছেন। নীপিড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বের একটি কঠিন সিদ্বান্ত। ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে তিনি বাংলাদেশ আশ্রয় দেন। সকল রোহিঙ্গার চোখের জল সেদিন মুছে দিয়েছিলেন। রোহিঙ্গাদের পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাঁড়ানোর অবদানের কথা উলেখ করে 'অক্সফোর্ড নেটওয়ার্ক অব পিস স্টাডিজ' (অক্সপিসের) দুজন শিক্ষাবিদ ড. লিজ কারমাইকেল এবং ড. অ্যান্ড্রু গোসলার মনে করেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন তা সারাবিশ্বের জন্য এক অনুকরণীয় বার্তা। তারা দুজনই শেখ হাসিনাকে 'মানবিক বিশ্বের প্রধান নেতা' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস স্ট্যাডিজ বিভাগের তিন অধ্যাপক ড. অলডো সিভিকো, ড. দীপালী মুখোপাধ্যায় এবং ড. জুডিথ ম্যাটলফ যৌথভাবে শেখ হাসিনাকে বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
কারও সঙ্গে বিরোধ না করেও বিভিন্নভাবে আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান করা যায় তারই বাস্তব মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়, পরবর্তীতে বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্তের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি। সীমান্তে ছিটমহল সমস্যা ছিল ইতিহাসের অমীমাংসিত বিষয়, এ যেন গলার কাঁটা। শেখ হাসিনার সফল পররাষ্ট্রনীতি ও বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে পারস্পরিক আস্থার কারণে এসমস্ত অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান সম্ভাব হয়েছে। চলমান আছে বন্ধুপ্রতিম দু-দেশের মাঝে সু-সম্পর্ক।
উন্নয়ন দর্শনের বিচারে শেখ হাসিনার অবদান গুরুত্ত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও নীতির কারণে বাংলাদেশ অর্জন করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মুদ্রাস্ফীতি নেমে আসে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশে। দারিদ্র্য হ্রাস পায়। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্রীড়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে একটি নিবন্ধে লিখেছেন “দারিদ্র্য হচ্ছে অশান্তির মূল”। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তার এই যুদ্ধ আজ দেশের জন্য ঈর্ষনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে। খাদ্যসংকট বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অন্যতম একটি বড় সমস্যা। এক সময় বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় মঙ্গার খুব প্রভাব ছিল। শেখ হাসিনা বিচক্ষণ পদক্ষেপে আর সঠিক তত্ত্বাবধানে উত্তরবঙ্গের সেই মঙ্গা দূর করে খাদ্য ভাণ্ডারের অঞ্চলে পরিণত করেছেন। বাংলার কৃষক, সাধারণ মানুষ কেউ আজ না খেয়ে থাকে না। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি কর্তৃক 'সেরেস পদক' লাভ করেন শেখ হাসিনা।
একসময় দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতে হয়েছে। শেখ হাসিনার কল্যাণমুখী নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলেছে। বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে গত ৩রা অক্টোবর উল্লেখ করে, “Bangladesh tells the world a remarkable story of poverty reduction and development”। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো প্রফেসর অরবিন্দ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, ১৯৮৭ সালে যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল পাকিস্তানের অর্ধেক, আর ২০০৭ সালে ছিল ভারতের দুই-তৃতীয়াংশ, সেই বাংলাদেশ ২০২০ ছাড়িয়ে গেছে ভারত-পাকিস্তানকে। অবাক চিত্তে তিনি নিবন্ধ লিখেছেন “The Paradoxes of the Bangladesh Miracle” শিরোনামে বিখ্যাত প্রজেক্ট সিন্ডিকেট পত্রিকায়।
কিন্তু ব্যাপারটা হলো প্রফেসর অরবিন্দ সুব্রামানিয়ান আসল কারণ বিশ্লেষণ করেননি। বাংলাদেশের উন্নয়ন কোনো গায়েবি ঘটনা নয়। কোনো জাদুবলেও আসেনি এই উন্নয়ন। এসেছে 'সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই' অনুভূতি থেকে উঠে আসা সোনার মানুষের হাত ধরে। বাংলাদেশের দিনবদল হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে। ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির এই দেশে আর্থিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থপাচার ও কিছু ব্যক্তিস্বার্থের খবর দেখা যায়, যা দেশের উন্নয়নের অন্তরায়। এ সমস্ত অন্তরায়কে পেছনে ফেলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে একমাত্র নেতৃত্ব ও রাষ্ট্র ক্ষমতায় শেখ হাসিনার ধারাবাহিকতার জন্যে। সমালোচনা থাকতে পারে, কিন্তু চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, শেখ হাসিনার শাসন দেশেকে একটি শক্ত অর্থনীতির ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছে। যার ফলে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, মহামারী ও অর্থনৈতিক নিম্নগামিতার মধ্যেও বাংলাদেশ টিকে আছে স্বমহিমায়।
শেখ হাসিনার উন্নয়ন ভাবনা, গণতন্ত্র, শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই ও কর্ম সারা পৃথিবীতে সমাদৃত। তাইতো বিশ্বের অনেক দেশ ও সংগঠন তাকে বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত করেছেন। ২০০৫ সালের জুন মাসে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তির পক্ষে অবদান রাখার জন্য 'পিপলস ফ্রেন্ডসশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া' শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি বিশ্বখ্যাত ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক ২০০৯ এ ভূষিত হন জননেত্রী শেখ হাসিনা। ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বার্কো শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দূরদর্শী নেতৃত্ব, সুশাসন, মানবাধিকার রক্ষা, আঞ্চলিক শান্তি ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে তার অনবদ্য অবদানের জন্য ‘গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেন। শেখ হাসিনার চিন্তায় মানবকল্যাণ, পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা, নেতৃত্বে দূরদৃষ্টি, গণতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার, সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। ২০১২ সালে ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সভায় ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনে শেখ হাসিনার দেয়া ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ এবং ‘শান্তির সংস্কৃতি’ প্রস্তাব পাস হয়। নারী ও কন্যাশিশুদের সাক্ষরতা ও শিক্ষা প্রসারে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনেস্কো ‘শান্তি বৃক্ষ (ট্রি অব পিস)’ স্মারক প্রদান করে শেখ হাসিনাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আবদুল কালামের নামে প্রতিষ্ঠিত ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এডভাইজরি কাউন্সিলের ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ পান। ওই একই বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেয় ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব পরিবেশ সংরক্ষণ কল্পে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও অবদান ইতোমধ্যে স্বীকৃত। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে রক্ষা করা উন্নত দেশগুলোর দায়িত্ব। শেখ হাসিনা উন্নত দেশগুলোর প্রতি এ বিষয় খুব জোরের সাথে তুলে ধরেন।পরিবেশ ভাবনা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্যে তাকে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। যেমন, ২০১৫ সালে শেখ হাসিনা বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিবেশ বিষয়ক পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দূরদর্শী পদক্ষেপে নেওয়ায় তাকে সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই বছরই জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আইসিটির ব্যবহারে প্রচারণার জন্য শেখ হাসিনাকে ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয় ।
জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সর্বোচ্চসংখ্যক শান্তিসেনা প্রেরণকারী দেশ। অন্যান্য দেশের সঙ্গে এ দেশের শান্তিসেনারা আফ্রিকাসহ বিশ্বের জাতিগত সংঘাত-সংঘর্ষ কবলিত দেশগুলোতে শান্তি রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে। ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও অশিক্ষা দূরীকরণ, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত, বিরোধ মীমাংসায় সশস্ত্রপন্থা পরিহার, শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বা জাতিগত সংঘাতসহ যেকোনো বিরোধ মীমাংসা ইত্যাদি সুপারিশসহ শেখ হাসিনা ২০১১ সালে জাতিসংঘে এক শান্তির মডেল পেশ করেছিলেন, যা সাধারণ পরিষদে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশন এবং ওআইসি কন্ট্যাক্ট গ্রুপের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে ছয়টি পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব তুলে ধরেন, যা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের উপযুক্ত প্রস্তাব বলে সকলে একমত হন।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও উন্নত সমৃদ্ধ দেশের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে তার নেওয়া পদক্ষেপের বস্তবায়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে রেখে চলা অবদান সারা বিশ্বেই প্রশংসিত। শেখ হাসিনার যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি এনে দিয়েছে। সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘ভ্যাকসিন হিরো’, ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’, ‘স্টেট ম্যান’, ‘ইস্টার অব ইস্ট’, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ ইত্যাদি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও আইসিটি উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি তাকে সনদ প্রদান করে। উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) ও ইউনেস্কো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীকে ‘ডব্লিউআইপি গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ২০১৯ সালে তাকে এ পদক দেওয়া হয়। নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য ২০১৪ সালে শেখ হাসিনাকে ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার দেওয়া হয় ।
পরিশেষে বলব শেখ হাসিনা একটি বটবৃক্ষ, যার ছায়াতলে বাংলার মানুষ নিরাপদে আছে, দেশ দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। জাতির পিতা শেখ মুজিব একটি দেশ, একটি মানচিত্র দিয়েছিলেন; আর তার কন্যা শেখ হাসিনা উপহার দিয়েছেন একটি উন্নত, সমৃদ্ধশালী ও শান্তিময় বাংলাদেশ। তাইতো পিস অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান ড. হেনরিক উরডাল মনে করেন, সত্যিকার অর্থেই যদি শান্তিতে অবদানের জন্য কোনো পুরস্কার থাকে তাহলে সে পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি হলেন শেখ হাসিনা।
লেখক: অধ্যাপক, পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।