ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

শার্শায় বারি-১১ বারোমাসি আম চাষে অবিশ্বাস্য সাফল্য

বেনাপোল প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১৮:০২, ২৩ এপ্রিল ২০২৩

যশোরের শার্শার বাগআঁচড়ায় বারি-১১ জাতের আম চাষে অবিশ্বাস্য সাফল্য পেয়েছেন নূর ইসলাম সরদার নামে এক আম চাষী। বারি-১১ জাতের ‘বারোমাসি’ আম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। অসময়ে বাজারে ওঠা এই আমের চাহিদাও ভালো। প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত নতুন জাতের এই আম চাষ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে বলে জানিয়েছেন বাগআঁচড়া ইউনিয়নের পিঁপড়াগাছী গ্রামের আম চাষী নূর ইসলাম সরদার।

তিনি জানান, সাধারণত হিমসাগর, ফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আমের দেশ-বিদেশে চাহিদা রয়েছে। এসব আম এক মৌসুমী হওয়ায় সারা বছর পাওয়া যায় না। তবে নতুন জাতের বারি-১১ আমটি সারা বছর পাওয়া যায়।

নূর ইসলাম জানান, তিনি ২৩ বছর ধরে নার্সারি কাজের সঙ্গে জড়িত। প্রথমে তিনি অন্যের নার্সারিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পরে নিজের বসতবাড়ির পাশে ফলজ নার্সারি গড়ে তোলেন।

নার্সারির পাশাপাশি আগে থেকেই তার আমের বাগান করার পরিকল্পনা ছিল। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আম গবেষনা কেন্দ্র চাপাইনবাবগঞ্জ হতে নতুন উদ্ভাবিত বারি-১১ জাতের আমের চারা সংগ্রহ করেন। সংগ্রহিত চারা হতে প্রথম বছরেই নূর ইসলাম উৎপাদিত সাইন (ডাল) দিয়ে নিজে দুই হাজার দুইশত চারা উৎপাদন করেন।

পরের বছর নিজের ৩ বিঘা ও লিজ নেওয়া ৩ বিঘা মোট ছয় বিঘা জমিতে নিজের উৎপাদিত নতুন জাতের বারি-১১ আমের চারা রোপণ করেন। চারা রোপণের দুই বছর বয়স হতেই বাগানে ফল আসতে শুরু করে। চলতি বছরের জানুয়ারী হতেই নূর ইসলামের বাগানে আম পাড়া শুরু করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ মন আম উৎপাদন হয়েছে। প্রতি কেজি আম বাগান হতে বিক্রি করছেন ৪০০ টাকা কেজি দরে। 

তিনি বলেন, গত বছর প্রায় চার লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। এতে তিন লাখ টাকার উপরে লাভ হয়েছে। আম চাষে বছরে খরচ হয় প্রায় লাখ টাকা। এ বছর এখন পর্যন্ত এক লাখ ৬০ হাজার টাকার আম এবং এ জাতের আমের কলম (চারা) বিক্রি করেছি ৮০ হাজার টাকার মতো। বছরে তিনবার আম পাওয়ার কথা জানিয়ে নূর ইসলাম বলেন,  প্রতি বিঘায় বছরে এক লাখ ৬৮ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, নূর ইসলামের সফলতা দেখে এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক এখন বারি-১১ জাতের আম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আম চাষিদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ উপজেলায় হিমসাগর, লেংড়া, ফজলি, গোপালভোগ, আম্রপালি ও মল্লিকা জাতের ৩ হাজার ১৪৪ টি আমের বাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে দুই হাজারেরও বেশি চাষি অন্তত ৯৫৯ হেক্টর জমিতে আমচাষ করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তরুন বালা বলেন, এ উপজেলায় ল্যাংড়া জাতের আম চাষ হয়েছে ১৩২ হেক্টর, হিমসাগর ৪২০ হেক্টর, রুপালি ১৯০ হেক্টর, বারি-৪- ১৫ হেক্টর, কাটিমন-২ হেক্টর এবং অন্যান্য জাতের আম ২০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। বারি-৪, বারি-১১ এবং কাটিমন জাতের আমগাছ থেকে বছরে তিনবার ফলন পাওয়া যায়। অসময়ে আম হওয়ায় কৃষক দামও ভাল পাচ্ছেন তাই অনেকেই এই জাতের আম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মন্ডল বলেন, অসমে আম উৎপাদন একটি ঝুকিপূর্ণ কাজ, তাই আমি প্রতিনিয়ত নূর ইসলামের বাগানের খোজ রাখি ও পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন নূর ইসলামের মত কৃষক আমাদের গর্ব, যদি কেউ নতুন ফল ও ফসল উৎপাদন করতে চায় আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি। বারি-১১ জাতের আমের স্বাদ ভালো। অসময়ে এই আম বাজারে আসায় চাষিরা ভাল দাম পাচ্ছেন। এ আম গাছ বাসার ছাদেও লাগানো যায় বলে তিনি জানান। 
কেআই//
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি