শার্শায় শাশুড়ির নির্যাতনে মা ও দুই শিশুর আত্মহত্যা
প্রকাশিত : ১৭:৫৫, ২৭ মে ২০১৯
যশোরের শার্শা উপজেলার পল্লীতে দুই শিশুকে বিষ খাইয়ে মা আত্মহত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।ওই দুই শিশুও মারা গেছে। গতকাল রোববার রাতে উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের দীঘা গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
প্রাথমিক অবস্থায় আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ না জানা গেলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের ধারণা, শাশুড়ির নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে পুলিশ জানান।
আত্মহত্যাকারী ওই মায়ের নাম হামিদা খাতুন (৩৫)। তাঁর দুই সন্তান শরিফা খাতুন (১২) ও সায়েম হোসেন (৫)। হামিদা খাতুন শার্শা উপজেলার দীঘা গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের স্ত্রী। এ ঘটনায় পুলিশ হামিদা খাতুনের শ্বশুর আরাফাত হোসেন, শাশুড়ি মরিয়ম বেগম ও প্রতিবেশি সিদ্দিক হোসেনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পুলিশ লাশ তিনটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য যশোর মর্গে পাঠিয়েছে। খবর পেয়ে যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
নিহত হামিদা খাতুনের মা কোহিনুর খাতুন ও ভাই-ইউনুস আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার মেয়েকে তার শ্বশুর-শাশুড়ি নির্যাতন করে আসছিল। তার শাশুড়ীর সঙ্গে প্রতিবেশী যুবকের পরকীয়া ছিল। বিষয়টি হামিদা দেখে ফেলায় হামিদাকে হত্যা পরিকল্পনা করা হয়। পরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মেরে ফেলা হয়েছে। আত্মহত্যা বলে প্রচার করছেন তারা। প্রতিবেশি ছিদ্দিকের সঙ্গেও হামিদার শাশুড়ি মরিয়ম বেগমের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। আর এটা জেনে ফেলায় আমার মেয়ের জন্য কাল হয়েছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
হামিদা খাতুনের স্বামী ইব্রাহিম হোসেন জানান,উপজেলার চালিতাবাড়িয়া বাজারে তাঁর একটি চায়ের দোকান আছে। তাঁর মা ও বাবার সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর প্রায়ই ঝগড়া হতো। রোববারও তাঁদের ঝগড়া হয়। রাতে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। রাত ১১টার দিকে গোপনে তাঁর স্ত্রী দুই ছেলেমেয়েকে ইঁদুর মারার ট্যাবলেট খাওয়ান। তিনি নিজেও ট্যাবলেট খান। এতে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর রাত ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁরা মারা যায়।
এ বিষয়ে কায়বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান ফিরোজ টিংকু বলেন,‘আমার জানা মতে মেয়েটি খুব ভালো ছিল। কিন্তু তার শাশুড়ির স্বভাব ভালো না। ওই বাড়িতে প্রায়ই বাইরের মানুষ যাতায়াত করতো। এতে তার ছেলের বউ বাধা দিত। তাই শাশুড়ি বিভিন্নভাবে তাকে নির্যাতন করতো। রোববার ইব্রাহিম ও হামিদা পারিবারিক কলহে জড়িয়ে দিনভর গন্ডগোল করে। এতে হামিদার শাশুড়ি ছেলের পক্ষ নিয়ে তাকে মারধর করলে রাগে ক্ষোভে সন্তানসহ `বিষ ট্যাবলেট` খেয়ে আত্মহত্যা করে। অপরাধীদের সাজা হওয়া প্রয়োজন’ বলে তিনি মত প্রকাশ করেন তিনি।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মসিউর রহমান জানান,পারিবারিক কলহে তাদের মৃত্যু’র ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালে মা, ছেলে ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে যশোর মর্গে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইব্রাহিমের বাবা আরাফাত হোসেন (৬৫), মা মরিয়ম বেগম (৪৫) ও প্রতিবেশি ছিদ্দিক হোসেনকে (৫০) আটক করা হয়েছে।
পারিবারিক কলহ আত্মহত্যার কারণ হিসেবে ধারনা করা হচ্ছে তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় শার্শা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে সকালে খবর পেয়ে যশোর পুলিশ সুপার মইনুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ধারের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেআই/
আরও পড়ুন