শিক্ষকদের অনাগ্রহে বন্ধ হচ্ছে না সান্ধ্যকালীন কোর্স
প্রকাশিত : ২০:১৯, ১ মার্চ ২০২০
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য কালীন কোর্স নিয়ে কোন সিন্ধান্তেই পৌঁছাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা। তুমুল তর্ক-বির্তকের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সভা। সান্ধ্য কোর্স'র বিপক্ষে কথা বলা শিক্ষকদেরও এসময় হেনস্তার শিকার হতে হয়। প্রভাবশালী শিক্ষকদের সিংহভাগ সান্ধ্যকোর্স রাখার পক্ষে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক খোলা কাগজকে বলেন, সান্ধ্যকালীন কোর্স কে সংশোধিত, যুগোপযোগী,পরিমার্জিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন অধিকাংশ শিক্ষক এবং তাই হতে যাচ্ছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ২ হাজার ২০০ শিক্ষকের মধ্যে প্রায় ৭২৫ জন শিক্ষক এই কোর্সের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, যা শতাংশের হিসাবে প্রায় ৩৩%। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষকদের ভোটে নির্বাচিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব। তাই ভোটের রাজনীতিও এক্ষেত্রে উল্টো ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন শিক্ষকরা।
সান্ধ্য কোর্স থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করে ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ- প্রায় ৭৮ কোটি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ প্রায় ৬কোটি, বিভিন্ন ইনস্টিটিউট প্রায় ৭ কোটি, কলা অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদ আয় করে প্রায় ৩ কোটি টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানও সান্ধ্যকোর্স চালু থাকার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রো-উপাচার্যের (শিক্ষা) নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দিবেন। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সান্ধ্যকোর্স নিয়ে একটি নীতিমালা প্রণীত হবে। ওই নীতিমালার আওতায় জাতীয় চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা অনুযায়ী কোন বিষয়গুলো খোলা হবে আর কোন বিষয়গুলো খোলা হবে না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
সিন্ডিকেট সভায় সান্ধ্যকালীন বা অনিয়মিত কোর্স সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদকে আহ্বায়ক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী ৫ সপ্তাহের মধ্যে বিধিমালা ও সুপারিশ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
ঢাবির ৫২তম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, সান্ধ্যকালীন কোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও মান বিঘ্নীত করছে। তারপরই বিষয়টি নজরে এনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
কিন্তু সান্ধ্যকোর্স বন্ধ করা ঠেকাতে একাট্টা হয়েছেন ঢাবির সিংহ ভাগ প্রভাবশালী আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা। এ ব্যপারে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বন্ধ না করে এটিকে একটি বিশেষ নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমি কাউন্সিলের সামনে প্রস্তাব তুলে ধরেন।
সান্ধ্য কোর্স পর্যালোচনা ও যৌক্তিকতা যাচাই কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৩৫টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সান্ধ্য কোর্স আছে। মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট, ট্রেনিং কোর্সসহ অনিয়মিত এসব কোর্সের সংখ্যা ৬৯। এর মধ্যে ৫১টি মাস্টার্স, ৪টি ডিপ্লোমা, ৭টি সার্টিফিকেট আর ৭টি ট্রেনিং কোর্স। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কোর্সের বাইরে ১০৫টি ব্যাচে এসব কোর্সে বছরে ৭ হাজার ৩০২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তাঁদের ক্লাস নেন ৭২৫ জন শিক্ষক।
আরকে//
আরও পড়ুন