ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি ডাকসু

সিনজাত রহমান সানি, ঢাবি

প্রকাশিত : ২২:৫৫, ৫ মার্চ ২০২০

দীর্ঘ ২৯ বছরের অচলায়তন ভেঙ্গে গত বছরের ১১ই মার্চ নির্বাচনের পর ২৩ই মার্চ ডাকসুর প্রথম কার্যকারী সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডাকসুর ১ বছর মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এলেও শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অপ্রাপ্তির খাতায় যোগ হয়েছে ভিপির সঙ্গে জিএস-এজিএস এর বৈরী সম্পর্ক। আবাসান সংকট, গণরুম সমস্যা, গেস্টরুম কালচার,বহিরাগত সমস্যা, অধিভুক্ত সাত কলেজ বাতিল করার মতো মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে কাজ করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও  কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি ডাকসু।

ডাকসু কাজ করতে না পারার আপেক্ষ প্রকাশ করে ভিপি নুরুল হক নুর  একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ভিপি হয়ে আমি নিজের রুমে হামলার শিকার হয়েছি, যখন যে হলে কাজ করতে গিয়েছি তখনি ছাত্রলীগ দ্বারা হামলার শিকার হয়েছি। ছাত্রলীগের রাজনীতি সিটকে কেন্দ্র করে কাজই তারা গণরুম-গেস্টরুমের প্রথা বন্ধ করতে চাইবেনা আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ছাত্রলীগ মার্কা। সরকারের আর্শীর্বাদ পুষ্ট এই প্রশাসন সবসময় চায় ছাত্রলীগকে খুশি রাখতে। আমারা নির্বাচিত দুইজন চাইলেও কিছু করতে পারিনা। সম্বনিত ভাবে আমরা কাজ গুলো করতে পারতাম কিন্তু ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধির অসহযোগিতার কারণে তা হয়ে উঠেনি।

অধিভুক্ত সাত কলেজ নিয়ে ভিপি নুর বলেন, শিক্ষার্থীরা চায় সাত কলেজ বাতিল হোক, তারা আন্দোলনও করেছে, আমারা তাদের সাথে ছিলাম।ছাত্রলীগের ভয় যদি তারা দাবি আদায়ে  স্থির না হয় তাহলে ভিপি হয়ে আমার একার পক্ষে সম্ভব না।

ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন কোন ছাত্র সংগঠনের কর্মী না হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসাবে হলে থাকতে পারে , সে জন্য আপাতত পাঁচটি হলে বাঙ্ক বেডের পাইলট প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্ল্যান তৈরি প্রায় শেষের পথে,এটা হলে অনেক গুলো নতুন হল,একাডেমিক ভবন,লাইব্ররী সহ উন্নইয়ন মূলক কাজ হবে।

তিনি বলেন, গত ১১ মাসে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ টি বিভাগের উন্নয়ন ফি কমাতে পেরেছি,মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিরে জন্য ভেন্ডিং মেশিন,জো-বাইক,বিভিন্ন অনুষদের ফলাফল জোটের সমাধান,সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা,সম্বনিত পরীক্ষায় না যাওয়া,সুফিয়া কামাল,বঙ্গমাতা হলে যাতায়াতে জন্য বাস ট্রিপের সংখ্যা বৃদ্ধি ,লাইব্ররী সময়সীমা বাড়ানোসহ নানা কাজ করেছি। সাত কলেজ সমস্যা নিয়ে সাদ্দাম বলেন,বিশববিদ্যালেয়ের শিক্ষক  ও প্রশাসন যেন শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বব্ধ থাকে  এবং বিশববিদ্যালেয়ের কোন সিন্ধাতে যেন শিক্ষর্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।

সম্বনিত ভাবে হয়নি কাজ
ডাকসুর বিভিন্ন সদস্য বিছিন্নভাবে কিছু শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করলেও এক মঞ্চে পরিকল্পনা মাফিক কোনও কাজই করতে পারেনি।ব্যক্তিগত ভাবে এজিএস সাদ্দাম হোসেন,ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ,সদস্য রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য,তানভীন হাসান,সংস্কতি সম্পাদক আসিফ তালুকদারকে সরব দেখা গেছে।পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক শামস ঈ নোমানের তত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতকে সহজ করার জন্য জো-বাইক ও সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবিরের উদ্যোগে প্রকাশিত  হয়েছে সাহিত্য সাময়কী।

আগের মতোই  চলছে গণরুম-গেস্টরুম
বিশ্ববিদ্যালইয়ে আবাসন সংকট থাকায় নবীন শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে হলে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে হলের গণরুমে উঠতে হয়।যেখানে রুমের আয়তন ভেদে ৩০-২০০ শিক্ষার্থী এক রুমে গাঁদাগাদি করে থাকতে হয়।ছেলেদের আবাসিক হল গুলোতে প্রশাসনের বিপরীতে সিট প্রদান করে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ,ফলে আবাসিক হলে থাকার বিনিময়ে এক প্রকার বাধ্য হয়ে সংগঠনের নিয়মিত কর্মসূচিতে যেতে হয় ।নির্বাচিত ছাত্রলীগের প্যানেল ও ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ইশতেহারে গণরুম-গেস্টরুম সমস্যা সমাধান সামনের দিকে থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি ।

ভিপির সাথে জিএস-এজিএস এর বৈরী সর্ম্পক
জিএস-এজিএসসহ ডাকসুর ২৫ টি পদের মধ্যে ২৩ টিতে জয় পায় ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে,বাকি দুইটিতে (ভিপি ও সমাজ সেবা সম্পাদক) জয় পায় কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া  ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ।এই দুই প্যানেলের নেতাদের আশর্দিক দ্বন্দ্ব থাকায় সম্বনিত ভাবে কোন কাজ করার বদলে একে অপরকে দোষারোপ করেই দায় সেরেছেন ভিপি-জিএস।

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ
বিশ্ববিদ্যালইয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মতে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারেনি ডাকসু ।তারা মনে করছেন ডাকসু সদস্যরা সম্বনিত ভাবে শিক্ষার্থী বান্ধব আরো কাজ করতে পারতো।তাদের মতে গণরুম,গেস্টরুমের সমাধানে ডাকসুর ফলাফল শূণ্যের কোটায়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন,আমরা যখন অধিভুক্ত সাত কলেজ বাতিলের আন্দোলন করছেলিাম তখন আমাদরে উপর হামলা করা হলো,ক্লাস-পরীক্ষা র্বজন করে আর তিন-চারটা দিন যদি সব প্রশাসনকি ভবনে তালা লাগিয়ে রাখতে পারতাম তাহলে ঠিকই একটা ব্যবস্থা হয়ে যেত,কিন্তু ডাকসু জিএস প্রতশ্রিুতি দিলেন সাত কলজে বাতলি না হলে তিনি নিজে মাঠে নামবেন,ডাকসুর এজিএস বললেন, এই আনহ্যাপি ম্যারজিরে পিসফুল ডির্ভোস করাবেন,কিন্তু কাজরে বেলায় কিছুই হলো না।

হল সংসদ যা করেছে
হল সংসদ  গুলো ১১ মাসেও বাজেট দিতে না পারলেও , শিক্ষার্থী বান্ধব বিভিন্ন কাজ  করেছে।তবে তা শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে  পারেনি।

ভিপি-জিএস ছাড়াই ডাকসুর খরচ সাড়ে ৮৩ লাখ
ডাকসুর বার্ষিক বাজেট ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। গত ৯ মাসের ব্যয়ের হিসাব দেখা যায়, বাজেটের ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার মধ্যে ৯ মাসে ৮৩ লাখ ৫১ হাজার ৩০৪ টাকা উত্তোলন করেছেন ডাকসুর বিভিন্ন পদে থাকা নেতারা। অন্যদিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্পনসর থেকে ডাকসু ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৫০৪ টাকা পেয়েছে। এ ছাড়া ডাকসু কার্যালয় ব্যবস্থাপনা খাতে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।তবে ব্যয়ের খাতে ভিপি নুরুল হক নুর ও জিএস গোলাম রাব্বানীর নামে কোনো হিসাব নেই। ডাকসুর বিভিন্ন সম্পাদক ও সদস্য জিএসের অনুকূলে বরাদ্দ করা অর্থ তুলে ব্যয় করেছেন।

বাজেটে ভিপির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৫ লাখ টাকা।এই বরাদ্দ থেকে একটি টাকাও তুলতে পারেননি ভিপি নুর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু গত ৯ মাসে আমি একটি টাকাও তুলতে পারিনি।নুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাকে নামে মাত্র ডাকসুর এক্সিকিউটিভ কমিটিতে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যত খরচ হয়েছে, জিএস ও এজিএসের সিদ্ধান্তেই সব হয়েছে।

ভিপি নুরুল হক জানান, তিনটি চিঠিতে তিনি ৪০ হাজার টাকা চেয়ে আবেদন করেছিলেন কিন্তু তার কোনো আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। এ জন্য তিনি জিএস ও এজিএসের অদৃশ্য প্রভাবকে দায়ী করেন।

আরকে/
    


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি