ঢাকা, শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্তিতে চলছে দৌঁড়ঝাপ

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

প্রকাশিত : ১৪:৩৭, ২৫ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১৮:০৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

বর্তমানে একুশে টেলিভিশন’র নিজস্ব প্রতিবেদক। তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, ডেইলি নিউএইজ, এনটিভি’র কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ছিলেন ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি’র নেতৃত্ব দিয়েছেন। একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৭’তে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘আসমত আলীর অনশন’ প্রকাশিত হয়। তার বহু গবেষণা প্রবন্ধ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থাপিত হয়েছে।

দেশের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে এমপিওভূক্ত করা হচ্ছে। শীঘ্রই দেশের কয়েক সহস্রাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভূক্ত করা হবে। সরকারের উপর মহলের সম্মতি পেলেই ঘোষণা করা হবে নতুন এমপিওভূক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা।

এদিকে আগামী বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়লেও তা যথোপযুক্ত নয় বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। অন্যদিকে শেষ মুহূর্তে এমপিওভূক্তির জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে তদবিরের দৌঁড়ঝাপ চলছে।

জানা যায়, বেসরকারী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভূক্ত করতে নীতিমালার শর্ত কিছুটা শিথিল করতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইছে হাওড়, বিল, পাহাড়, চরাঞ্চলসহ দেশের সব অঞ্চলে এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকুক। এর মধ্যে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অনগ্রসর এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে এমপিও’র তালিকায় আনতে এই শর্ত শিথিলের চিন্তা করা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এমপিওভূক্তির জন্য বিভিন্ন মহল থেকে বেশ চাপ রয়েছে। তবে নীতিমালা অনুযায়ী তালিকা করে রেখেছে মন্ত্রণালয়। সরকারের সম্মতি পেলেই এ তালিকা প্রকাশ করা হবে। নিজ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভূক্ত করতে অনেক সংসদ সদস্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।

সম্প্রতি সংসদের এক অধিবেশনে এক সাংসদ এ নিয়ে কথা বললে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, নীতিমালার বাইরে এমপিওভূক্ত করার কোন চিন্তা মন্ত্রণালয়ের নেই। সেই সাথে যে সব এলাকায় এমপিওভূক্তির জন্য যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই সে সব এলাকার জন্য শর্ত শিথিল করতে পারে মন্ত্রণালয়।

প্রতিটি উপজেলায় অন্তত দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভূক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। দীর্ঘ ৯ বছর পর এ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এবার অন্তত তিন হাজার বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হতে পারে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।

এ দিকে দেশের শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারের বিশেষ গুরুত্ব পেলেও শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এ খাতের বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। তারা শিক্ষার জন্য পৃথক বাজেট দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী অর্থবছরের শুরুতেই শিক্ষা খাতের অগ্রাধিকারগুলো ঠিক করে নিয়ে ব্যয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তদারকি বাড়ানোর কথা বলছেন তারা।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ‘বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দ বাড়ানো প্রস্তাব করা হয়েছে তবে এ বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। শিক্ষাকে মান সম্মত করতে হলে এ খাতে আরও বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।’

মান সম্মত শিক্ষার জন্য শিক্ষকের মান বৃদ্ধি করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকের মান বৃদ্ধির জন্য ব্যাপকভাবে কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। ভালো শিক্ষার জন্য ভালো শিক্ষক দরকার। অন্যথায় ভালো শিক্ষা পাওয়া যাবে না।’

মেধাবীরা আমলাতান্ত্রিক পেশায় বা ব্যাংকিং পেশায় যেতে যতটুকু আগ্রহী ততটুকু শিক্ষকতা পেশায় যেতে আগ্রহী নন বলে মন্তব্য করে এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘মেধাবীদের শিক্ষাকতা পেশায় আনতে হলে সুযোগ ও সুবিধা বাড়াতে হবে।’

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ছাড়া কখনই উন্নয়নের স্থায়ীত্ব আসবে না বলে মনে করেন আরেফিন।

তিনি বলেন, ‘এখনও বাজেট আলোচনা চলছে। শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো সুযোগ এখনও রয়েছে।’

মোট বাজেটের অন্তত ২০ ভাগ এই খাতে ব্যয় করা উচিত বলে মনে করেন অনেক শিক্ষাবিদ।  

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী সোমবার এক গণমাধ্যমকে বলেন, `শিক্ষার বাজেট শুভঙ্করের ফাঁকি। এবারের বাজেটে শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ বরাদ্দ বেড়েছে এ খাতে। এর কারণ, এমপিওভুক্তি ও শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতা চালু। তাহলে শিক্ষার মান উন্নয়নের টাকা কোথায়? টাকা ছাড়া শিক্ষানীতিই বা বাস্তবায়ন হবে কীভাবে?`

আগামী অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে চলতি বাজেটের চেয়ে ১৩ হাজার ২৩১ কোটি টাকা বেড়ে ৭৯ হাজার ৪৮৬ কোটি করা হয়েছে। মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ২ ভাগ অর্থ এবার এই খাতে ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তবে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য এবারের বাজেটেও পৃথক কোনো বরাদ্দ নেই।

এদিকে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছে সরকার বলে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন। তবে বাজেটে ব্যাপকভাবে জনপ্রত্যাশা থাকলেও শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল, শিক্ষক নিয়োগের পৃথক কর্ম-কমিশন ও বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি পূরণের কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, এ বছর এমপিওভুক্তি খাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অন্তত এক হাজার ২১০ কোটি টাকা খরচ করবে। গত জুলাইয়ে এমপিওভুক্তির এমপিও নীতিমালা-২০১৮ জারির পর যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করতে চারটি মানদ ঠিক করে মন্ত্রণালয়। এগুলোর জন্য রাখা হয় ১০০ নম্বর।

গত বছরের আগস্টে অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়। ৯ হাজার ৬১৪টি আবেদন জমা পড়ে। সব শর্ত পূরণ করতে পেরেছে দুই হাজার ৭৬২টি প্রতিষ্ঠান। তবে বাছাইয়ে দেখা গেছে, দেশের সব এলাকা এটি কভার করতে পারেনি।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আবেদন করা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব হবে না। এমপিওবিহীন সাত হাজার ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করতে গেলে বার্ষিক দুই হাজার ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ টাকা লাগবে।

এর মধ্যে এক হাজার ২২৭টি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ২১৯ কোটি ৭১ হাজার ৩০০ টাকা, এক হাজার ৮৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৩৬৮ কোটি ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৮৫০ টাকা, এমপিওভুক্ত তিন হাজার ২৭৫টি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়কে মাধ্যমিকে উন্নীত করে এমপিওভুক্ত করতে ৫২২ কোটি ৬০ লাখ ৮১ হাজার ২৫০ টাকা, ৫১৮টি উচ্চমাধ্যমিক কলেজের জন্য ৩৫৭ কোটি ১২ লাখ ৪৭ হাজার ৪০০ টাকা এবং এমপিওভুক্ত এক হাজার ৩৩টি উচ্চমাধ্যমিক কলেজকে ডিগ্রি স্তরে উন্নীত করে এমপিওভুক্ত করতে ৭১৭ কোটি ৩৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৫০ টাকা লাগবে।

ডিগ্রি কলেজ এমপিওভুক্ত করতে বছরে লাগবে ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক কলেজের জন্য লাগবে ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা, আর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য লাগবে ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫০ টাকা।

এমএস/ 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি