শীতে টনসিলের ব্যথায় করণীয়
প্রকাশিত : ১৬:৪৪, ৯ জানুয়ারি ২০১৮
অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার
রাজধানীসহ দেশের প্রায় সর্বত্রই জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। তীব্র শীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। শীতের প্রকোপে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে রাজধানীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা । এতে একদিনে কর্মজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। অন্যদিকে বেড়েছে শীতকালীন নানা রোগ। শীতে শিশুসহ সব বয়সী মানুষদের সবচেয়ে বেশি ভোগায় টনসিলের ব্যাথা। টনসিলের ব্যথা থেকে সুরক্ষা পেতে কী করবেন। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চর্ম ও যৌন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টিভি অনলাইন: টনসিল কি ?
ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার : টনসিল ও এডিনয়েড এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি, যা আমাদের গলার ভেতরে শ্বাস ও খাদ্যনালীর মুখে অবস্থিত। শ্বাসও পরিপাকতন্ত্রের প্রবেশপথে প্রহরী হিসেবে টনসিল ও এডিনয়েড কাজ করে। এটা একটি ভাইরাস জড়িত রোগ। টনসিল আক্রান্ত শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে এটা চলতে থাকলে তাদের শ্বাস ও হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ হতে পারে। টনসিল ও এডিনয়েড শিশুদের চার থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে খুব সক্রিয় থাকে।
একুশে টিভি অনলাইন: শীতকালে শিশুদের টনসিলের প্রকোপ দেখা দেওয়ার কারণ কি?
ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার : শীত আসলেই মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে কমে যায়। যে কারণে অন্যান্য সময় থেকে রোগ জীবাণু বেশি আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে শিশুরা শীতকালীর রোগে আক্রান্ত হয়। সাধারণত বয়ঃসন্ধিক্ষণ বা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী সময়ে বিলীন হয়ে যায়। সাধারণত টনসিল ও এডিনয়েডের প্রদাহ ছাড়াও টনসিলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নানা জটিল রোগে ভুগে থাকে। তাই টনসিল ও এডিনয়েডের অসুখ অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। ৭দিনের মধ্যে টনসিল বা গলা ব্যথা না কমলে অবশ্যই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন: টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ ?
ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার : শীতকালে শিশুর ঠান্ডা পানি ও ঠান্ডা খাবার খাওয়া, দুর্বল স্বাস্থ্য, অপুষ্টি এলার্জি জনিত সমস্যার কারণে টনসিল প্রদাহ দেখা দেয়।
ঠাণ্ডার প্রতি খুব বেশি সংবেদনশীলতা রোগ সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। গলায় তীব্র ব্যথা এবং ঢোক গিলতে কষ্ট হয়। ঢোক গিলার সময় কানের ভেতর ব্যথা লাগতে পারে। মাঝে মাঝে শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। জ্বরের সঙ্গে অনেক সময় কাঁপুনি, খিচুনি, মাথাব্যথা ও সারা শরীরে ব্যথাও থাকে। তাছাড়া গলার উপরিভাগের লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় ও ব্যথা থাকে। সর্দি থাকা, নাক বন্ধ থাকা, নাকের নিঃসরণ, মুখে দুর্গন্ধ, খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি এবং গলার উপরিভাগের লসিকাগ্রন্থি সব সময় ফুলে থাকে। সাধারণত স্কুল থেকে এ রোগ শিশুদের মধ্যে সংক্রমিত হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় অবহেলা ইত্যাদি এ রোগের কারণ।
শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিবন্ধকতা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে তাদের শ্বাস ও হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ হতে পারে। যেমন- পালমোনারি হাইপারটেনশন, হৃদরোগ এবং হঠাৎ হৃদযন্ত্রে ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়ে ঘুমের মধ্যে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
একুশে টিভি অনলাইন: টনসিল প্রতিরোধে করণীয় কি?
ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার: সাধারণত রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ঠাণ্ডা পানি ও ঠাণ্ডা খাবার পরিহার করতে হবে। সাধারণত গোসলের সময় পানি হালকা গরম পানি করে নিতে হবে। সঠিকভাবে দাঁত ও মুখের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে।
রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ঠাণ্ডা খাওয়া পরিহার করতে হবে। সুস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের চেষ্টা করতে হবে। সঠিকভাবে শরীরচর্চা করতে হবে। ৭ দিনের বেশি সময় হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নিতে হবে।
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ও প্রতিবন্ধকতা জনিত সমস্যায়-টনসিল ও এডিনয়েড অপারেশনের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া ভালো।
একুশে টিভি অনলাইন : আপনার মূল্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার: একুশে টিভি পরিবারকেও ধন্যবাদ।
/ এআর /