ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

শীতে শিশুর ব্রংকিওলাইটিস রোধে কী করবেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:১৪, ৪ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২২:৪১, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি

ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি

উত্তর অঞ্চলের শৈত্যপ্রবাহের জেরে রাজধানীতে ঝেকে বসেছে শীত। সুর্যোদয় স্বাভাবিক হলেও শৈত্যপ্রবাহে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। শীতের কারণে নবজাতক বা শিশুদের ঠান্ডা ও শর্দি জড়িত রোগ বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে শূন্য থেকে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ দেখা দেয়। কাশি, শ্বাসকষ্ট এর প্রধান উপসর্গ এমন লক্ষণ দেখা দিলে অনেকেই ধারণা করেন নবজাতক নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়েছে।

এমন ধারণা ভুল। শীত মৌসুমে কাশি ও শ্বাসকষ্টের নবজাতক বা শিশু বেশিরভাগই ব্রংকিওলাইটিস এ আক্রান্ত হয় বলে জানিয়েছেন বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউনেটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি। শীতকালীন নবজাতকের রোগ ও তার প্রতিকার নিয়ে সম্প্রতি একুশে টিভি অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকার তিনি এ তথ্য জানান। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন একুশে টিভির অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।  

একশে টিভি: ব্রংকিওলাইটিস কি ?

ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি: এটি ভাইরাসজনিত রোগ। জীবাণু হলো আরএসডি ভাইরাস। তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা-পেরা ইনফ্লুয়েঞ্জা, এডিনো, রাইনো ও মাইকোপ্লাজমাও কখনো এই রোগ সৃষ্টি করে। বড়দের থেকে নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। ফলে শিশুরা বেশি এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ প্রতিরোধে পিতা-মাতার বাড়তি সর্তক থাকা প্র্রয়োজন।

একশে টিভি: ব্রংকিওলাইটিস রোগের লক্ষণ কি কি ?

ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি: প্রথমে ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি, কাশি দিয়ে শুরু হয়। এরপর চার থেকে পাচঁ দিন পর মাথায় ব্যথা দেখা দেয়। সঙ্গে  তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তীব্রতা অনুযায়ী রোগটিকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।

মৃদু: বুকের দুধ বা পানীয় পান করতে পারে শ্বাসকষ্ট খুব বেশি না-অক্সিজেন মাত্রা স্বাভাবিক ৯২% এর ওপরে। মধ্যম: শ্বাসকষ্টের কারণে বুকের নিচের অংশ দেবে যায় অক্সিজেন মাত্রা ৯২% এর নিচে। তবে অক্সিজেন দিলে তা স্বাভাবিক হয়ে আসে।
মারাত্মক: বুকের দুধ বা পানীয় পান করতে পারে না বুকের নিচের অংশ তীব্রভাবে দেবে যাচ্ছে শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্টকর শব্দ।  অক্সিজেন মাত্রা ৯২% এর নিচে এবং অক্সিজেন দিয়ে মাঝে মাঝে সুফল মেলে।

একুশে টিভি: ব্রংকিওলাইটিস প্রতিরোধে করণীয় কি ?

ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি: এর রোগ প্রতিরোধে পিতা-মাতা কে প্রয়োজন বাড়তি সর্তকতা। নবজাতককে গরম রাখার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে আমাদের যেসব এলাকায় শীত পড়ে। সেসব এলাকায় শিশুদের গরম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যে রুমে শিশুকে রাখা হবে। সে রুমের দরজা জানালাগুলো বন্ধ রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে ঘর কৃত্রিম পদ্ধতিতে গরম রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে। গরম কাপড় পড়িয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজন বোধে বাচ্চাকে হাত-পায়ে মুজা ও মাথায় টুপি পরিধানের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চার শরীরের তাপমাত্র স্বাভাবিক আছে কি না বাচ্চার পায়ে হাতে দিয়ে লক্ষ করতে হবে। যদি দেখা যায় বাচ্চার পা ঠান্ডা থাকে। তাহলে বুঝবেন হবে ‍শিশুর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক নেই। তখন অন্য উপায়ে শিশুর শরীর গরম করার ব্যবস্থা করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে বাচ্চা কোনভাবে ঠান্ডা হয়ে না যায়। শরীর ঠান্ডা থাকলে শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শীত কালে শুধু নবজাতক নয় বড়রাও বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। একারণে একটু বাড়তি সর্তকতা প্রয়োজন। তবে ব্রংকিওলাইটিস নিয়ে অতি উদ্বেগের কিছু নেই। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর সেরে ওঠে। রোগ নির্ণয় করতে তেমন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা লাগে না। তবে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। কেননা এর প্রধান চিকিৎসা অক্সিজেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লাগেনা।

শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বা করমর্দনে রোগজীবাণু ছড়ায়। তাই আক্রান্ত শিশু থেকে অন্য শিশুদের আলাদা রাখা উচিত। তবে মনে রাখতে হবে ব্রংকিওলাইটিস অনেক সময় মৃত্যু হতে পারে যদি সঠিক সময় অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা না যায়। নবজাতকের রোগ প্রতিরোধে মায়ের বুকের দুধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর সাথে সাথে শিশুকে ঘরের তৈরি খাবার খাওয়াতে হবে। বাহির থেকে তৈরি খাবার বাচ্চার জন্য অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়। একরণে পরিস্কার পরিচ্ছনতা নিশ্চিত করে ঘরে তৈরি খাবার ও বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে।

একুশে টিভি: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়া জন্য ধন্যবাদ।

ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি: একুশে পরিবাকেও ধন্যবাদ।  

/ এআর /

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি