ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

শেখ কামাল: অপপ্রচারের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা

রিয়াদুল আহসান নিপু

প্রকাশিত : ২৩:০৩, ৪ আগস্ট ২০২০

Ekushey Television Ltd.

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ১৯৪৯ সালের ৫ই আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন।  তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পড়াশুনার পাশাপাশি ক্রিকেট, ভলিবলসহ বিভিন্ন খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন।

তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা ত্যাগ করেন। ঢাকা ত্যাগ করার দিন তিনি তাঁর মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন ‘মা আমি আজ রাতে ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি, তোমরা আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করো’ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা-৮৩)। সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতে এদেশের নিয়মিত বাহিনীর প্রথম সামরিক অফিসার্স কোর্স (শর্ট সার্ভিস-১) সম্পন্ন করেন এবং কমিশন প্রাপ্ত হন। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর এডিসি হিসেবে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর সামরিক বাহিনী ত্যাগ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তার সম্পর্কে নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত ছিল। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত কামালপুর যুদ্ধের অন্যতম নায়ক মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব) বীর বিক্রম এর আত্নজীবনীমূলক গ্রন্থে বর্ণিত ঘটনা উল্লেখ করা যায়। ১৯৭৩ সালের বিজয় দিবসের আগের রাতে ঢাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে, উগ্র বামপন্থি সিরাজ শিকদার তার দলবল নিয়ে এসে শহরের বিভিন্নস্থানে হামলা চালাতে পারে। এ অবস্থায় সাদা পোশাকে পুলিশ গাড়ি নিয়ে শহরজুড়ে টহল দিতে থাকে। সর্বহারা পার্টির লোকজনের খোঁজে শেখ কামালও তার বন্ধুদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে ধানমণ্ডি এলাকায় বের হন। সিরাজ শিকদারের খোঁজে টহলরত পুলিশ মাইক্রোবাসটি দেখতে পায় এবং আতংকিত হয়ে কোনো সতর্ক সংকেত না দিয়েই গুলি চালায়। শেখ কামাল ও তার ৬ বন্ধু গুলিবিদ্ধ হন। শেখ কামালের কাঁধে গুলি লাগে। তাকে তখনকার পিজি (বর্তমানে বিএসএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেদিন বিজয় দিবস প্যারেড শেষে মইনুল হোসেন চৌধুরী পিজিতে যান শেখ কামালকে দেখতে। তিনি লিখেছেন যে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কামালের সঙ্গে আমারও পরিচয় ছিল এবং তাকে খুব ভালভাবেই চিনতাম। হাসপাতালে বেগম মুজিব শেখ কামালের পাশে বসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার ছেলের ওই রাতের ঘোরাফেরায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন এবং শেখ কামালকে হাসপাতালে দেখতে যেতে প্রথমে অস্বীকৃতি জানান। পরে ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে যান। জেনারেল মইন বইটিতে আরও লিখেছেন, ‘এদিকে স্বাধীনতাবিরোধী ও আওয়ামী লীগ বিদ্বেষীরা এই ঘটনাকে ভিন্নরূপে প্রচার করে। ‘ব্যাংক ডাকাতি’ করতে গিয়ে কামাল পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে তারা প্রচারণা চালায় এবং দেশ-বিদেশে ভুল তথ্য ছড়াতে থাকে। যদিও এসব প্রচারণায় সত্যের লেশমাত্র ছিল না।’(এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য: স্বাধীনতার প্রথম দশক; পৃষ্ঠা ৬৫-৬৬, মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী)।

 ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর কাল রাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি শাহাদতবরণ করেন। মৃত্যুর মাত্র কিছুদিন আগে ১৪ জুলাই ১৯৭৫ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও ক্রীড়াবিদ সুলতানা খুকির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের ৭১ তম জন্মদিনে তার স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক: রিয়াদুল আহসান নিপু
ব্যাংকার, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা।

এমবি//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি