শেখ কামাল: বাঙালি গোয়েবলসদের নিত্য খুনের শিকার
প্রকাশিত : ০৮:৪৬, ৫ আগস্ট ২০২২ | আপডেট: ১০:১১, ৫ আগস্ট ২০২২
পৃথিবীর দেশে দেশে ষড়যন্ত্র ছিল, ষড়যন্ত্র আছে। আমাদের এই জনপদে ষড়যন্ত্রের সূচনা কবে থেকে তার গবেষণা না থাকলেও এর শক্তিমত্তার প্রকাশ ঘটে বেশি করে ব্রিটিশদের আগমনের আগে ও পরে।
ষড়যন্ত্র দেশে দেশে হয়। দেশের অভ্যন্তরে রাজনীতিতে হয়, সমাজে হয়, এমনকি পরিবারেও হয়ে থাকে; ভাইয়ে ভাইয়ে হয়। মহামতি অশোক ৯৯ ভ্রাতাকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্রাট শাহাজাহানের পুত্রদের বিরোধের কথা অজানা নয়। বাদশাহ আলমগীর দারা, মুরাদ, সুজাকে হত্যা করেছেন, এমনকি ভাতিজা সুলায়মান শিকোকেও ছাড় দেননি। পিতা ও ভগ্নিকে বন্দী করেছিলেন।
এগুলোর মূল কারণ ছিল মূলত ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকা। যারা হত্যাকাণ্ড করে রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়েছে তারা আবার রাষ্ট্র এবং সভাসদকে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে মহান হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। চাটুকার সভাসদও নিজস্ব স্বার্থে খুনিকে মহান বানাতে মরিয়া হয়েছে যুগে যুগে। ফলে খুনি বা খলনায়কেরা মাঝে মধ্যে মহান হিসেবে অভিধা পেয়েছে কখনো কখনো।
আমাদের জাতির জীবনে ইতিহাসের খলনায়কদের নায়ক বানানোর প্রচেষ্টা সেই নবাব সিরাজ-উদ- দৌলার সময়কালের আগ থেকেই। সিরাজ-উদ-দৌলার ক্ষমতা হরণের পূর্বে ক্ষমতা হরণকারীরা বিচিত্র চরিত্রে তাকে চিত্রিত করার চেষ্টা করেন। বিভ্রান্তি ছড়াতে সাময়িকভাবে সক্ষম হলেও সফল হননি ইতিহাসের শেষ বিচারে। ব্রিটিশ সহযোগিতায় ক্ষমতাসীনরা দীর্ঘ দু’শত বছর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মীর জাফর আলী খানের গুণকীর্তন করেছে। চেষ্টা করেছে সিরাজ-উদ-দৌল্লাকে নায়ক থেকে খলনায়কে রূপান্তরের, সফল হতে পারেনি।
রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ মিথ্যাচার করলেও জনগণ সে মিথ্যায় কর্ণপাত করেনি। রাষ্ট্রীয় প্রচার-প্রসারের বিরুদ্ধে জনগণই ঘরে ঘরে মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। যে কারণে প্রায় তিনশত বছর আগে খুনের শিকার হওয়া সিরাজ-উদ-দৌল্লা আজ অনেক শক্তিশালী, অনেক গৌরবে বিত্তবান। মিথ্যাচারে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কাজে দেয়নি জনগণের প্রতিরোধে। মীর জাফর আজ ঘৃণার প্রতীক, বেঈমানীর প্রতীক হিসেবে বিবেচিত, যে কারণে হাজারো জননী তার প্রিয় সন্তানের নাম সিরাজ রাখলেও মীর জাফর রাখেন না। কথাগুলো এজন্যে উদ্ধৃত করা হলো কারণ আমাদের জাতির জীবনে অনুরূপ ঘটনা রচিত হয়েছিল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট।
পঁচাত্তরের আগস্টের ঘটনায় ষড়যন্ত্রের প্রকৌশলগত কিছু প্রয়োগ প্রায় ১৭৫৭ সালের মতই ছিল। তবে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের ঘটনার সাথে ১৭৫৭ এর ২৩ জুনের ঘটনার কিছু বৈসাদৃশ্যও বিদ্যমান। সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুতির আগে এবং পরে তার ব্যক্তিগত চরিত্র হরণের ব্যাপক প্রয়াস ছিল। সে আক্রমণ ছিল নিতান্তই সিরাজের বিরুদ্ধে এবং সিরাজ কেন্দ্রীক, যা অন্যকে আক্রান্ত করেনি। তাকে মদ্যপ, জুয়াড়ি, নারী লোভী প্রভৃতি আখ্যা দেয়া হয়েছিল। যদিও ইতিহাসে আমরা সে রকম ঘটনার সত্যতা লক্ষ্য করিনা।
বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর তাকে হত্যার জাস্টিফিকেশন ক্রিয়েটের জন্য চেষ্টা হয়েছে। হত্যাকারীদের দ্বারা বঙ্গবন্ধু পরিবারের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডকে দায়ী করার একটি চেষ্টা জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু শেষ বিচারে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা কোনোভাবেই ব্যক্তিগত আক্রোশ বা ক্ষোভের পরিণতি ছিল না।
আমাদের বিবেচনা করতে হবে বঙ্গবন্ধু খুন হওয়ার পর কারা লাভবান হয়েছে? বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় গেছেন তাদের সামগ্রীক আচরণকে বিবেচনায় নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর সৌদি আরব, চীন প্রভৃতি রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কারো কারো মতে বঙ্গবন্ধু কৌশলে ভুল করেছেন কিন্তু তিনি জনগণের প্রতি ভালোবাসার আদর্শ থেকে চ্যুত হয়েছেন সে কথা তার পরম শত্রুও বলতে পারবে না। তিনি গণতন্ত্র হরণ করেননি।
বাকশাল একটি পদ্ধতি ছিল সেখানে বহু পার্টি নিয়ে একটি ঐক্য হয়েছিল। বাকশালে আমলা, সামরিক বাহিনী, শিক্ষক, সংস্কৃতি কর্মী সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল। বাকশাল শুধু আওয়ামী লীগ ছিল না। বাকশাল ভুল কী সঠিক তা এখনও বির্তকের অবকাশ রাখে। বাকশাল পদ্ধতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষকে শোষণ মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। সেজন্য শিল্প কলকারখানা, শিক্ষাকে জাতীয়করণের (বিশেষত প্রাথমিক শিক্ষাকে) আওতাভুক্ত করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ এর মনুষ্য সৃজিত দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি সামলে দেশকে অগ্রসর করার প্রত্যয় ঘোষণা করলে স্বাধীনতাবিরোধী এবং ধনিক শ্রেণি বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। তাদের উপলদ্ধি হয় যে, বঙ্গবন্ধুকে সরাতে না পারলে তাদের আশায় গুড়েবালি। আর সে লক্ষ্য থেকেই খুনিচক্র ক্যারাম খেলার ন্যায় থার্ড পকেটে খেলতে শুরু করেন। যেহেতু তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে ম্লান করা। কেননা বঙ্গবন্ধু ছিলেন পবিত্র।
কোনোভাবেই কোনো কালিমা তাকে স্পর্শ করেনি। তার বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ নেই, দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না। তিনি পরিবারতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা করেননি। তার জেষ্ঠ্যপুত্র ও কন্যা উভয়ই মন্ত্রী-এমপি হবার মতো যোগ্য ছিলেন। জামাই দেশের বড়কর্তা হতে পারতেন- এসবের কিছুই তার পুত্র কন্যারা হননি। বঙ্গবন্ধু সবকিছুই করতে পারতেন। তিনি পুত্র-কন্যার জন্য কিছু করতে চাইলে নিয়োগকর্তারা সেটি করে কৃতার্থ হতে পারতেন বা তিনি নিয়োগ দিলে কারো কিছুই করার ছিল না। যেমন জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমান বিএনপির কার্যত প্রধান হয়েছেন, কোনো প্রতিবাদ নেই। খালেদার সিদ্ধান্তই ফাইনাল, সেটিই গণতন্ত্র। না মানলে বিরোধীদের পত্রপাঠ বিদায় করার ব্যবস্থা আছে।
বঙ্গবন্ধু সেরকম কোনো পারিবারিক রাজনীতি কায়েম করেননি। আর সে কারণেই পুত্র-কন্যাদের এসবে আনেননি। তিনি গণতন্ত্র চেয়েছিলেন, সেই পথেই ছিলেন। অনেকে অভিযোগ করেন, শেখ ফজলুল হক মনি শেখ সাহেবের ভাগ্নে ছিলেন। অবশ্যই তিনি ভাগ্নে কিন্তু ফজলুল হক মণি শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু হবার অনেক আগে নিজেও নেতা হয়েছিলেন। ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছিলেন। পাকিস্তান সরকারের বহু হামলা, মামলা, কারাবরণের মতো নির্যাতনের নিত্য শিকার ছিলেন।
সেসব থাক; যেজন্য এ নিবন্ধ তার কথাতেই ফিরে আসি। ষড়যন্ত্রকারীদের শত প্রচেষ্টাতেও বঙ্গবন্ধুকে যখন কোনোভাবেই ম্লান করা যাচ্ছিল না তখন ঘাতকরা কৌশল বদল করে পরিবারের ওপর আঘাত করে। প্রচার করতে থাকে বিভিন্নভাবে- শেখ কামালকে বঙ্গবন্ধু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, সে মারাত্মকরূপে অ্যারোগেন্ট। অভিযোগ ছিল, সে টাকার প্রতি এতই লোলুপ যে, ব্যাংক ডাকাতি করে সে চাহিদা পূরণ করত। তার শত কোটি টাকা দেশে এবং বিদেশে। কত হাজার ভরি স্বর্ণ ৩২ নম্বরে শেখ কামাল জমা করেছে তার হিসেব করা কঠিন! এ কথাগুলো তৎকালীন বাকশাল ও আওয়ামী লীগবিরোধী অনেক নেতাকেই বলতে শুনেছি। কথাগুলো এমন করে উপস্থাপন করত যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধেই মানুষের যেন বিষোদগার তৈরি হয়। শেখ কামালকে সে কারণেই সকল সমালোচনার মুখোমুখী করা হয়। শত্রুদের মিথ্যে রটনা গোয়েবলসকেও হার মানায়। আমরা বাঙালি জাতি ভুলটা পরে বুঝি। যে কারণে দুর্ভাগ্য আমাদের পিছু ছাড়ে না।
আজকে যদি স্বাধীনতা বিরোধী ও অতিবিপ্লবীদের বলি, সেদিনের তোমাদের ঐ গল্পের সত্যতা প্রমাণ কর। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর তো শেখ কামাল জীবিত ছিলেন না। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসা তো সেনাবাহিনী ঘিরে রেখেছিল বহু বছর। শেখ হাসিনা দেশে ফেরারও অনেক পর তাকে বাড়িটি বুঝিয়ে দেয়া হয়। সেনাবাহিনীর কতিপয় লোভি কর্মকর্তা মোস্তাক-জিয়াউর রহমান প্রমুখ ক্ষমতা গ্রহণ করে দেশের সূর্য সন্তান বনেছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে কত ভরি স্বর্ণ পেয়েছিলেন? শেখ কামালের নামে কোন ব্যাংকে কত টাকা ছিল? সে ব্যাংকগুলোর নাম, হিসাব নম্বর প্রকাশ করতে পারতেন।
আমরা জানি সবগুলোই ছিল গোয়েবলসীয় প্রচার। একটি মিথ্যাকে বার বার বললে সত্য হবে সেই ধান্ধায় তারা এ অপপ্রচার করেছিল। সফলও হয়েছিল কিছুটা। তবে শেষ-মেষ টিকেনি। কারণ সত্য সোজা, মিথ্যের ডালপালা থাকে। বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হবার পর আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মামলা মোকদ্দমা হয়েছিল, সে সব মোকদ্দমাতেও প্রসঙ্গক্রমে শেখ কামালের যদি অপকর্ম থাকত তা আসতে পারত।
লক্ষ্য করুন, তারেক জিয়ার নামে প্রথমে কোনো মামলা হয়নি, গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের টাকার উৎস সন্ধান করতে গিয়ে বেড়িয়ে পড়ে তারেকের সংশ্লিষ্টতা। যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিযোগ দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি মৃত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল হয়নি। কিন্তু সংশ্লিষ্টতা তো বিচারকালে প্রমাণিত।
অনুরূপ যদি শেখ কামালের কোন অপরাধ থাকত তা কোনো না কোনো মামলায় পাওয়া যেত। দেশের সামরিক-বেসামরিক বহু গোয়েন্দা সংস্থা আছে যাদের নথিতে দেশের যেকোনো অস্বাভাবিক ঘটনার কথার উল্লেখ থাকার কথা কিন্তু শাসক হিসেবে জিয়া-মোস্তাক-এরশাদ কিংবা বিচারপতি সায়েম, সাত্তার কেউই কোনো নথি দৃষ্টে শেখ কামালের বিরুদ্ধে প্রচারিত মুখরোচক কথাগুলোর অস্তিত্ব পেলেন না কেন? দেশে হাজার হাজার গবেষক যাদের অনেকেই জামাত, বিএনপি, জাসদ প্রভৃতি দলের সমর্থক তারা তো নিজেদের আনীত তথাকথিত বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করতে পারতেন। শেখ কামাল নিহত হয়েছেন তার ব্যাংক হিসাব তো মরেনি, ব্যাংকের টাকা তো তিনি কবরেও নিয়ে যাননি। একজন মানুষও তার মৃত্যুর পর বললেন না, শেখ কামালের ব্যক্তিগত কর্মে তিনি ও তার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন!
আমরা সাধারণত দেখি কোন সরকারের দ্বারা যিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন পরের সরকারের সময় তিনি অনেক ফায়দা লাভ করেন। কই, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এরকম একজনও তো তাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন বলে এই সাতচল্লিশ বছরে কোনো খবর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি!
আজকের যুগের মরেতা অন্তত একজন জজ মিয়া তারা আবিষ্কার করতে পারতেন। শেখ কামালের বিরুদ্ধে সে রকমও দেখি না। আসলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হলে কাকে ক্ষতিপূরণ দেবেন? যদি শেখ কামাল সত্যই লুটতারাজ করতেন তাহলে বাড়িতে বা ব্যাংকে টাকা-সোনাদানা থাকার কথা ছিল। সেসব গেল কই?
আমরা পত্রিকায় পড়েছি কেউ কেউ জিয়াউর রহমানকে হযরত ওমর (রাঃ) এর সাথে তুলনা করেছেন কর্মে ও সততায়। শেখ কামাল যদি মন্দ হয়ে থাকেন তবে মৃত্যুর পর বত্রিশ নম্বরের হাজার-হাজার ভরি হিরা-জহরত থাকার কথা কিন্তু সেনাবাহিনীর জব্দতালিকা অনুযায়ী সেসবের কিছুই নেই কেন? তা হলে কী জিয়াউর রহমানরা তা আত্মসাৎ করেছেন? তিনি যদি সৎ হয়ে থাকেন তা হলে নিশ্চয়ই সেসব টাকা, সোনাদানা তার মেরে দেয়ার কথা নয়, সত্য হলে বত্রিশ নম্বরেই থাকার কথা, কারণ বত্রিশ নম্বরের বাড়িতে মশা-মাছিকেও শাসককরা প্রবেশ করতে দেয়নি। যদি সেসব থাকত তাহলেও অন্তত সহজেই প্রমাণ করা যেত সত্যই শেখ কামাল মন্দলোক ছিলেন।
আসলে বঙ্গবন্ধুবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার আগে তার সুনামকে বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছিল। যে ষড়যন্ত্রের প্রথম ও প্রধান শিকার ছিলেন শেখ কামাল। শেখ কামাল একজন মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে যিনি অফিসার ক্যাডেট হয়েছিলেন। যুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধুর সন্তান হিসেবে দিল্লি-কলকাতায় বিলাসী জীবন যাপন করতে পারতেন। তিনি সে পথে হাঁটেননি। নিত্য সহযোগিতা করেছেন কর্নেল ওসমানীর সহকারি হিসেবে। যুদ্ধকালে সমর দায়িত্বের প্রতি তার নিষ্ঠার কথা কেউই অস্বীকার করেন না। আমাদের দেশে যে শিশু আজ আবাহনী মাঠে তার শৈশবকে অতিক্রম করে বিকশিত হয়, যে আবাহনী দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বহু সুনাম দেশের জন্য বয়ে এনেছে তা শেখ কামালেরই কীর্তি।
বঙ্গবন্ধু রাজা হননি, শেখ কামাল রাজপুত্র ছিলেন না, মন্ত্রী হননি, এমপি হননি। যদিও তার চেয়েও কোমল বয়সে অনেকে এমপি হয়েছিলেন। তবুও তিনি রাজনীতিবিদদের কূটকৌশলের শিকার ছিলেন। আজকের আধুনিক যুবরাজ তারেক রহমানের যখন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের সত্য কাহিনী পড়ি, ঘটনার সত্যতায় যখন যুবরাজদের মাসহ জেল হয়, তখন অবাক বিষ্ময়ে পিছন ফিরে দেখি নিরাপরাধ শেখ কামালের করুণ ক্যানভাস। ইতিহাসের নিষ্ঠুর নির্মম ষড়যন্ত্রের বলি শেখ কামাল, যিনি এখনও বাঙালি গোয়েবলসদের দ্বারা নিত্য খুনের শিকার।
লেখক: একুশে পদকপ্রাপ্ত আইনজীবী ও রাজনীতিক।
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।