সচেতন হলেই থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ সম্ভব
প্রকাশিত : ১০:১১, ২ মার্চ ২০২০
থ্যালাসেমিয়া জিনগত একটি রোগ। যা বংশ পরম্পরায় শিশুর দেহে বাসা বাঁধে। এই রোগের ফলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমতে থাকে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের রক্তে লোহিত রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ মারাত্মক কমে যায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই তখন রক্তাল্পতার সমস্যা দেখা দেয়। তবে মানুষ একটু সচেতন হলেই থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ সম্ভব।
যদি বাবা-মা দু’জনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, সে ক্ষেত্রে সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। নবজাতক যে শিশুদের এই সমস্যা থাকে, তারা কিন্তু জন্মের সময়ে বেশ স্বাস্থ্যবান হয়। তবে জন্মের প্রথম দু’বছরের মধ্যেই এর উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। তবে থ্যালাসেমিয়া কোনও ভাবেই ছোঁয়াচে নয়।
যদি স্বামী-স্ত্রী দু’জন থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন অথবা দু’জনের মধ্যে একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক এবং একজন হিমোগ্লোবিন ই-র বাহক হন, সে ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থাতেই প্রায় ২৫ শতাংশ শিশু এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ৫০ শতাংশ শিশুর আবার এই রোগের বাহক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাকি ২৫ শতাংশ শিশু সম্পূর্ণ সুস্থভাবে জন্ম নিতে পারে বলে মত চিকিৎসকদের। আবার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন যদি সুস্থ থাকেন, সে ক্ষেত্রে নবজাতকের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকে না। তবে থ্যালাসেমিয়ার বাহক হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ
প্রধান লক্ষণ হলো রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া। হলদে ত্বক বা জন্ডিস, দেহে অতিরিক্ত আয়রন জমা হওয়া, সংক্রমণ, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, মুখের হাড়ের বিকৃতি বা মঙ্গলয়েড ফেসিস, শারীরিক বৃদ্ধি হ্রাস পাওয়া, পেট বাইরের দিকে প্রসারিত হওয়া, গাঢ় রঙের প্রস্রাব, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা ইত্যাদি।
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ কী ভাবে করবেন?
* বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, এই রোগের বাহকদের একে অপরকে বিয়ে না করাই ভাল। সেই জন্য বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। এ নিয়ে সকলের মধ্যে সচেতনতা জরুরি। তবেই এই রোগকে অনেকটা দূরে সরিয়ে রাখা যায়।
* যদি দু’জন থ্যালাসেমিয়ার বাহকের বিয়ে হয়েও যায়, সে ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। গর্ভস্থ সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কি না, জানার জন্য কোরিয়োনিক ভিলাস স্যাম্পলিং, অ্যামনিওসেনটেসিস, ফিটাল ব্লাড স্যাম্পলিং— এই পরীক্ষাগুলো করা প্রয়োজন।
* পরিবারের একজন যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তবে বাকিদেরও রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত।
* চিকিৎসকরা বলেন, থ্যালাসেমিয়া মানেই জীবন শেষ হয়ে গেল, তা একেবারেই নয়। বরং নিয়মিত চিকিৎসা করালে সুন্দরভাবে বাঁচা সম্ভব। বিয়ে করে সংসারও করতে পারেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীরা। বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা নেই। তবে নিজেকেই নিজের যত্ন নিতে হবে। সঙ্গে একটু সচেতন হতে হবে, যাতে আর কোন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু না জন্মায়।
* থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের জন্য বেশি প্রচার দরকার। প্রয়োজন মানুষকে সচেতন করাও। তবেই হয়তো এই রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।
এএইচ/