সন্তানের ওপর নেতিবাচক কথার প্রভাব
প্রকাশিত : ১০:২৮, ২১ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ১০:৩৩, ২১ জুলাই ২০২১
নেতিবাচক কথার প্রভাব যে সন্তানের ওপর কত মারাত্মক হতে পারে তা জানেন না বলেই বহু মা-বাবা ছেলে বা মেয়ের ওপর কোনো ব্যাপারে বিরক্ত হলেই বলেন যে, ‘এর দ্বারা কিছুই হবে না’ বা ‘এ একেবারে গোল্লায় গেছে।’ হয়তো সময়মতো দু’চারদিন পড়তে বসে নি। ওমনি 'তোর দ্বারা তো পড়াশুনা হবে না, খামোকা তোর পেছনে পয়সা নষ্ট করা।’
হয়তো বেকার সন্তান খোঁজাখুঁজি করে চাকরি পাচ্ছে না! বাসায় এসেই জুটছে বকুনি। হয়তো অভিহিত হচ্ছে বিশ্রী কোনো অভিধায়। মা-বাবা হয়তো রাগ বা ক্ষোভ সামলাতে না পেরে কথাগুলো বলছেন, কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া যে কত মারাত্মক ও কত সুদূরপ্রসারী তা তারা বুঝতে পারছেন না। তারা বুঝতে পারছেন না তাদের এই ক্রমাগত নেতিবাচক কথা কীভাবে সন্তানের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দিতে পারে! ক্রমাগত শুনতে শুনতে একসময় তার মনেও ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যেতে পারে যে, তার দ্বারা কোনোকিছু করা সম্ভব নয়।
আমার পেশাগত জীবনে শত শত প্রতিশ্রুতিশীল তরুণের ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করে দেখেছি যে, মা-বাবারা এদের বুঝতে ভুল করেছেন। এদের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রায়শই নেতিবাচক কথা বলেছেন অথবা কোনো ব্যাপারে একবার ব্যর্থতার জন্যে পিতামাতার কাছ থেকে 'অপদার্থ,' 'অকর্মণ্য,' 'নালায়েক' ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত হয়েছে। বাবা অথবা মা কোনো ব্যাপারে আবেগপ্রবণ হলেই ব্যর্থতার প্রসঙ্গ তুলে বার বার খোঁটা দিয়েছেন।
সন্দেহ নেই, মা কখনো সন্তানের অমঙ্গল চান না। কিন্তু কোনো ব্যাপারে সন্তানের সাথে মতের অমিল হলে বা সন্তানের কোনো আচরণে ক্ষুব্ধ হলে মায়েরা অনেক সময় প্রচণ্ড সব নেতিবাচক উক্তি করে ফেলেন। তিনি হয়তো কিছুক্ষণ পরে তা ভুলে যান। কিন্তু এ ধরনের প্রচণ্ড নেতিবাচক উক্তির পুনরাবৃত্তি যে তার প্রিয় সন্তানের জীবনেই 'অভিশাপ' রূপে দেখা দিতে পারে তা তারা কখনো ভাবেন না।
শুধু অশিক্ষিত মা নয়, বহু শিক্ষিত মা-ও আবেগপ্রবণ হলে প্রচণ্ড নেতিবাচক কথা বলে থাকেন, যার সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া তার প্রিয় সন্তানের ওপরই পড়ে।
পক্ষান্তরে মা-বাবার উৎসাহ সন্তানের ব্যর্থতাকেও সাফল্যে রূপান্তরিত করতে পারে। এরূপ অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। একটি উদাহরণ উল্লেখ করছি।
একজন কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট ডা. আলম। আমেরিকা যাবেন। ভিসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন। একবার, দুবার, তিন বার, চার বার। পাসপোর্টে সিল লাগছে, কিন্তু ভিসা মিলছে না।
মা তাকে নিরুৎসাহিত না করে বলছেন, বাবা আবার দেখ। আবার গিয়ে লাইনে দাঁড়া। পাঁচবার, ছয়বার। ভিসা হলো না। এর মধ্যে মা'র একই কথা। আরেকবার দেখতে ক্ষতি কী?
অন্য সবার ধারণা- এতবার পাসপোর্টে সিল পড়ার পর এই পাসপোর্টে আর ভিসা পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু মা'র একই কথা- লাইনে দাঁড়াতে ক্ষতি কী?
সপ্তমবার তার ভিসা হয়ে গেল। নতুন যে অফিসার ভিসা দেন তিনি ডাক্তার আলমের সাথে আলাপ করেই মুগ্ধ হন। পাসপোর্টের সিল মারা শেষ পাতা উল্টে দেখেন নি। আর এটা সম্ভব হয়েছে মায়ের উৎসাহের কারণে।
লেখাটি কোয়ান্টাম মেথডের প্রবক্তা মহাজাতক এর মেডিটেশন বই থেকে সংগ্রহ।
এসএ/
আরও পড়ুন