ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

‘সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতে বিশেষ তহবিল জরুরি’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৪৭, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১০:৩৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

আধুনিক নগরায়ণ গড়ে তুলতে সারা বিশ্বেই ব্যাংকিং খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মানুষের চাহিদা ও সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে সহনীয় সুদে আবাসন ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। কিন্তু এ খাতে সরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ায় অনীহা দেশীয় আবাসন খাতে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও গত কয়েক বছর ধরে কঠিন সময় পার করেছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগের আবাসন খাত। নকশা অনুমোদনে বিড়ম্বনা, অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি, ক্রেতাপর্যায়ে ঋণসুবিধার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

তবে আশার বাণী হলো দেশের বেসরকারি ব্যাংক থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে আবাসন ঋণ দেওয়া শুরু হয়েছে। এতে ক্রেতাদের পাশাপাশি আবাসন ব্যবসায়ীরা খুশি। এদিকে গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীতে শুরু হয়েছে আবাসন মেলা। এ সব বিষয় নিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনের মুখোমুখি হয়েছেন আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহসভাপতি (প্রথম) লিয়াকত আলী ভূইয়া। একুশে টেলিভিশন অনলাইনের পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইয়াসির আরাফাত রিপন

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আবাসন খাতের বর্তমান অবস্থা কেমন?

লিয়াকত আলী ভূইয়া: সরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ায় অনীহা থাকায় গত কয়েক বছর নাজুক অবস্থায় ছিল। বর্তমানে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি কিছু অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানি এগিয়ে আসায় ভাল অবস্থানে রয়েছে আবাসন খাত। সবচেয়ে বড় কথা এই খাতে ক্রেতাদের যথেষ্ট আস্থা দেখা যাচ্ছে। যা কিছু দিন আগেও ক্রেতাদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল অবস্থানে আছে আবাসন খাত।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: রিহ্যাবের আয়োজনে ঢাকায় পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলা শুরু হয়েছে। এবারে ক্রেতাদের নতুন জন্য কী রয়েছে? আপনাদের প্রত্যাশাই বা কী?

লিয়াকত আলী ভূইয়া: দেশের আবাসন শিল্পের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘রিহ্যাব ফেয়ার। এটি গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে যা সোমবার শেষ হবে। ‘স্বপ্নীল আবাসন, সবুজ দেশ লাল সবুজের বাংলাদেশ’-এ স্লোগানে এবারের মেলায় ২০৩টি স্টল অংশগ্রহণ করেছে। পাশাপাশি রয়েছে  ৩০টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৩টি অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান। মেলাকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা সব সময়ই আশাবাদী থাকে। বিগত বছরের আয়োজিত মেলা থেকেও ভালো  ফল পাওয়া গেছে।

মেলায় নতুনত্ব বলতে ক্রেতার সাদ ও সাধ্যের মধ্যে বিশেষ করে ছোট এবং মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ক্রেতাদের ফ্ল্যাটের জন্য ঋণ দিতে চায়। এসব ফ্ল্যাটগুলো ইতিমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। এতে ব্যবসায়ীরাও খুশি। আর ব্যবসা ভাল থাকলে ব্যবসায়ীরা ভাল থাকবে, দেশের অর্থনীতি ভাল থাকবে। কারণ এ খাত থেকে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা সরকারি রাজস্ব খাতে জমা হয়।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ব্যবসায়ীরা বার বার এক অঙ্ক সুদহারে ঋণের কথা বলে আসছেন। ব্যাংকগুলোও এগিয়ে এসেছে। এতে ব্যবসা কতটুকু বেড়েছে?

লিয়াকত আলী ভূইয়া: বেসরকারি ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসাই প্রথমেই আমি তাদেরকে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি ব্যাংক থেকে আবাসন ঋণের জন্য কোন খবর আসেনি। যদিও হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশন কিছু অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু এটির পরিমাণ খুব কম। আমরা চাই সরকারি ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসুক। হ্যা অর্থলগ্নীকারী কিছু প্রতিষ্ঠান আসাই অনেকেই এখন ফ্ল্যাট কেনায় আগ্রহ দেখাচ্ছে। ব্যবসার অবস্থাও আগের তুলনায় বেশ ভাল।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: এক অঙ্ক সুদহারে ঋণ পাওয়ার পরও আপনারা বিশেষ তহবিলের দাবি করছেন। বিশেষ তহবিল দেওয়া হলে কে বেশি লাভবান হবে ক্রেতা নাকি বিক্রেতা?

লিয়াকত আলী ভূইয়া: আমরা সরকারের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল চেয়েছি। এটি চেয়েছি অর্থনীতির সাথে, দেশের সব মানুষের আবাসন সমস্যা দূর করার সার্থে। এটি দেওয়া হলে অবশ্যই ক্রেতা লাভবান হবে। তারা এখান থেকে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ পাবে। সব শ্রেণীর মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধান হবে। তবে ক্রেতা লাভবান হলে বিক্রেতাও কিছুটা সুফল পাবে। তাদের অবিক্রিত ফ্ল্যাট কমে আসবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আবাসন খাতে বর্তমানে অবিক্রিত ফ্ল্যাটের পরিমাণ কত?

লিয়াকত আলী ভূইয়া: আমাদের কাছে বর্তমানে যে হিসাব রয়েছে তাতে প্রায় ৮ হাজার ফ্ল্যাট এখনও অবিক্রিত রয়েছে। যা গত কয়ে বছর আগে প্রায় ১২ হাজার মতো ছিল। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। আগামীতে আরও কমে আসবে বলে বিশ্বাস করি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনারা সব সময়ই আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগের কথা বলেন।  সরকারও সুযোগ দেয়। এতে কি পরিমাণ বিনিয়োগ আসছে?

লিয়াকত আলী ভূইয়া: ২০১৩ সালে এক হিসাব মতে, বাংলাদেশ থেকে ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। পাচার হওয়া এই অর্থের বড় অংশ গেছে মালয়েশিয়া বা কানাডার বেগম পল্লীতে ফ্ল্যাট ও বাড়ি কেনায়। তবে সরকারের সহযোগিতার সঙ্গে আমরা যদি সুযোগ তৈরি করে দিই, তবে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। এতে সরকারের রাজস্বও বাড়বে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আবাসন খাতে বর্তমান বড় সমস্যা গ্যাস বিদ্যুৎ, এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?

লিয়াকত আলী ভূইয়া: এ খাতে গ্যাস সমস্যা আছে। যেহেতু গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে আমরাও বিল্ডিং-এর নিচে সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করছি। তাছাড়া বিদ্যুতের সমস্যা পুর্বে ছিল, এখন নেই। এগুলো বড় ধরনে সমস্যা না। এগুলোকে কাটিয়েই এ খাত সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনাকে ধন্যবাদ।

লিয়াকত আলী ভূইয়া: একুশে টেলিভিশন অনলাইনকেও ধন্যবাদ।

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি