ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বনানী-বিমানবন্দর

সবুজ-শ্যামলে ঘেরা ডিজিটাল সড়ক

প্রকাশিত : ১৮:৩৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১২:২১, ১০ মে ২০১৮

রাস্তার পাশে বনসাইয়ের সবুজ শ্যামল সুন্দর বাগান, আলোর ঝরনা, পথিকের দু`দণ্ড বিশ্রামের স্থান। পাথুরে ফোয়ারার জলে ভেজা বাতাস শ্রান্তির দুপুরে পথিককে এনে দেয় প্রশান্তি। জলে খেলা করে মাছ। হঠাৎ কেউ দেখলে মনে করবে ইউরোপ ও আমেরিকার কোনো সড়ক। তবে এটা বিদেশের কোনো শহর সড়ক নয়। রাজধানীর বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের দু`পাশ এমন দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে গড়ে তোলা হয়েছে।

উন্নত বিশ্বের সড়কগুলোর আদলে তৈরি করা হচ্ছে বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার সবুজ-শ্যামল ঘেরা ডিজিটাল সড়ক। এছাড়া সড়কের পাশে গড়ে তুলা হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাসহ ১২টি যাত্রী ছাউনি। এগুলোর হিংসভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চলছে জোরেশোরেই। গত বছরের জুলাই মাসে এই সড়কের আধুনিকায়নের কাজ শুরু করা হয়। ২০১৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সবকাজ শেষ হলে আগামী জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সবুজ শ্যামল ঘেরা সড়ক উদ্বোধন করবেন।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এ সড়কটির আধুনিকায়নের কাজ করছে ভিনাইল ওয়ার্ল্ড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তবে এ প্রকল্পে সরকারের কোনো টাকা ব্যয় হচ্ছে না। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে তাদের লগ্নি করা এই খরচ তুলে নেবেন বলে জানা গেছে। বনানী-বিমানবন্দর ডিজিটাল সড়কে রয়েছে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামের বিভিন্ন ঘটনার ম্যুরাল। এসব ম্যুরাল অক্ষত রেখেই সৌন্দর্য বর্ধনের এই কাজ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুড়িল, শেওড়া, কাওলা ও বিমানবন্দরসহ কয়েকটি এলাকায় ১২টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যাত্রী ছাউনি থাকছে ক্যাফে ও নামাজের স্থানের পাশে। ক্যাফে থেকে হালকা খাবারসহ যে কোনো খাবার কেনা যাবে কয়েন দিয়ে। পাওয়া যাবে মোবাইল ফোন রিচার্জ ও মোবাইল টপ-আপসহ এটিএম বুথ সেবা। এ ছাড়া যাত্রী ছাউনির মধ্যে থাকবে আধুনিক টয়লেট। থাকবে মায়েদের সুবিধার্থে ব্রেস্টফিডিং কর্নার, ডিজিটাল ডাস্টবিন বক্স। যেখানে ময়লা ফেললেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা চলে যাবে নিচে। থাকবে ডিজিটাল বোর্ড। এতে নির্দেশনা দেয়া থাকবে কোন বাস কোথায় যাবে, সময়সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

এছাড়া সড়কটির পাশে বেশ কয়েক জায়গায় ফুলের ছোট বাগান, কৃত্রিম ঝরনা, আলোর খেলা, বাহারি মাছের লেকসহ নান্দনিক দৃশ্য তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। সড়কের দু’পাশে কয়েকটি ঝরনা বসানো হয়েছে, যা থেকে পাহাড়ি ঝরনার মতো পানি ঝরতে থাকবে। বিমানবন্দর থেকে নিকুঞ্জ পর্যন্ত বাইসাইকেল চালানোর জন্য আলাদা লেন করা হয়েছে। নিকুঞ্জ লেকে করা হচ্ছে শিশুদের পার্ক। সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় এলইডি মনিটর বসানো হবে, যার মাধ্যমে জানা যাবে দেশে কোথায় কী হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলার খবর ও বিভিন্ন লাইভ অনুষ্ঠান দেখা যাবে। জানা যাবে আবহাওয়ার খবরও। এ সড়কে বিনামূল্যে ওয়াইফাই সংযোগ পাওয়া যাবে। একসঙ্গে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের সিইও আবেদ মনসুর একুশে টিভি অনলাইনকে  বলেন, সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ পুরোপুরিভাবে চলছে তবে আগামী মাসেই কাজগুলো দৃশ্যমান হবে। তিনি জানান, দেশের যেকোনো অভিজাত হোটেলের চেয়েও সুন্দর ও রুচিশীল করে তৈরি করা হয়েছে শৌচাগার। রাস্তার দু`পাশে থাইল্যান্ড থেকে আনা ২৫ থেকে ৪০ ফুটের শত বছর বয়সী দুই হাজার বনসাই গাছ লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া ১২ মাস যেন সড়কের দু`পাশে ফুল থাকে, সে বিবেচনায় করা হচ্ছে বাগান। ঢাকা শহরে জগিং করার জায়গার বড় অভাব। সে অভাবও দূর করবে এ সড়কের ফুটপাত। যারা এ এলাকায় প্রাতঃভ্রমণ করেন, তাদের জন্য ২০০টি `গার্ডেন বেঞ্চ` করা হয়েছে। একই সঙ্গে ময়লা ফেলার জন্য বসানো হচ্ছে অত্যাধুনিক ডাস্টবিন। প্রতিটি ডাস্টবিনেই থাকবে তাপমাত্রা নির্ণয়, দিন ও সময় জানানোর যন্ত্র। পুরো রাস্তাজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকায় কেউ দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে না। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে।

আবেদ মনসুর জানান, চীন থেকে পরিচ্ছন্নতার যন্ত্র (সাকার মেশিন) আনা হচ্ছে। তা দিয়ে সহজেই রাস্তার ধুলা-বালি পরিষ্কার করা যাবে। রাস্তার দু`পাশেই তিন স্তরে লাইট বসানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে মাঝরাস্তায় ২০২টি লাইট, ফুটপাত সংলগ্নে ৮০০টি লাইট এবং ল্যান্ডস্কেপিংয়ে সংযোগ দেওয়া হয়েছে অসংখ্য লাইট। যা বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।  চীন থেকে আসা দুটি প্রকৌশলী দল পুরো কাজের দেখভাল করছে।

সওজের ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, দেশের জন্য কিছু করার মানসিকতা, শহরকে বদলে দেওয়ার সুচিন্তা, সুপরিকল্পনা, নিজের দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার সৎসাহস থাকলে যে কোনো কাজই সম্ভব।  

/ এআর /

 

 

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি