দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
সমঝোতা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিসি’র বৈঠক শেষ
প্রকাশিত : ২১:০৭, ১১ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ২১:৪৬, ১১ অক্টোবর ২০১৯
কোন ধরণের সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিসি’র বৈঠক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ১৪ অক্টোবরের ভর্তি পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রম স্থাগিত রাখার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার বিকালে ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীদের এই ঘোষণার পর অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে যান শিক্ষকরা। এরপর অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন।
‘ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি চাই, হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই’। ‘খুনিদের ঠিকানা এই বুয়েটে হবে না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’। ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘এক আবরার কবরে, লক্ষ আবরার বাইরে’। ‘ফাঁসি ছাড়া যাবো না’। ‘স্থায়ী বহিষ্কার, বহিষ্কার, খুনিদের বহিষ্কার করো,- বলে স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
বৈঠকে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রম চলতে পারে, একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। দাবি বাস্তবায়নে আপনাদের যতটুকু সময় দরকার আমরা দিতে রাজি আছি। তার আগ পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। আবরার খুনের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করে তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া যাবে না বলে দাবি করেন তারা।
এর জবাবে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। তারপরও কেন বুয়েটের পরিস্থিতি অস্থির করার চেষ্টা করছো? কেন ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করছো?
তিনি বলেন, যে কোনোভাবেই ভর্তি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নিতে হবে। আমরা তোমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্মতি জানিয়েছি। তোমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলছি না, আমরা শিক্ষকরা তোমাদের পাশে রয়েছি। তবে কেন বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করছো?
ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বাধা সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে তিনি ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা ড. মিজানুর রহমানের পরামর্শে সাড়া দেননি।
বৈঠকে বক্তব্যের শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নেন ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। বলেন, ‘আমার কিছুটা ভুল হয়েছে, আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার ভুল আমি স্বীকার করেছি, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
‘আবরার আমার সন্তানের মতো ছিল। তোমাদের যেমন কষ্ট লাগছে তার মৃত্যুতে আমারও অনেক খারাপ লেগেছে। এটি আমি মেনে নিতে পারিনি। তার মৃত্যুতে দুঃখ তোমরা পেয়েছ, আমিও পেয়েছি। আমরা সকলেই মর্মাহত।’
এসময় আবরার ফাহাদ হত্যায় বুয়েটের অভিযুক্ত ১৯ জনকে অস্থায়ী বহিষ্কার এবং বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। জানিয়েছেন, আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জের ধরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’ নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
টিআর/এনএস
আরও পড়ুন