‘সমন্বিত শিল্পকর্ম: বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী শিল্পীদের খোঁজে’
প্রকাশিত : ১৮:৫৪, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯
“শিল্পের অন্য নাম শিল্প, তা সে যে মাধ্যমেই হোক না কেন। কবিতা, সঙ্গীত বা ছবি অথবা কৌতুক কিংবা মঞ্চ নাটক; সবই সৃষ্টিশীল মানুষের অনবদ্য শিল্পকর্ম এবং এক বিশেষ নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলতেই এগুলোর সৃষ্টি।" রাজধানীর সিক্স সিজনস হোটেল চত্বরে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী "সমন্বিত শিল্পকর্ম: বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী শিল্পীদের খোঁজে" শীর্ষক একটি আয়োজনে আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে।
ঢাকা থিয়েটার এবং ইনফরমেটিক্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) এর সাথে যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের জন্য ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ডিজেবিলিটি আর্ট: রিডিফাইনিং এমপাওয়ারমেন্ট-ডিএআরই এর শুরুর তিন বছর পূর্তিও পালন করা করা হয়।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথিদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব খাদিজা নাজনীন; ওয়াইপিএস-এর ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন, টেকনোলজি এন্ড রিসোর্স সেন্টার অন ডিজ্যাবিলিটিজ (আরআরসিডি)-এর প্রধান ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ভাস্কর ভট্টাচার্য; ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টম মিশশা এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু নিউটন।
প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং এ জন্য শিল্পের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ধারার মানুষদের একসাথে আনতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রথম দিনের আলোচনায় বাংলাদেশের শিল্পচর্চার সামগ্রিক অবস্থা, প্রতিবন্ধী এবং শিল্প ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণের চিত্র স্থান পায়। প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে অনুষ্ঠানে নীতি প্রণয়ন, অবকাঠামোগত সহযোগিতা, যোগাযোগ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অর্থায়ন বিষয়ক চারটি ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনা থেকে প্রতিবন্ধী এবং শিল্প ক্ষেত্রে কী কী করণীয় সেসব বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা রাখা হয়।
প্রথম দিনব্যাপী চিন্তাভাবনা এবং নীতি সংক্রান্ত আলোচনার পর ২য় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। ধারণাগতভাবে প্রতিবন্ধী এবং তাদের শিল্পকর্ম নিয়ে আলোচনা আরম্ভ হয়। প্রতিবন্ধী অথবা স্বাভাবিক মানুষ যেই শিল্পকর্ম সৃষ্টি করুক না কেন শিল্প শুধুমাত্র শিল্প বলেও পরিগণিত হওয়া উচিত-এমন তত্ত্বের ওপর জোর দিয়েই আলোচনা এগিয়ে নেয়া হয়। প্রতিবন্ধী শিল্পী না প্রতিবন্ধী দর্শক, কে বেশি গুরুত্ব পাবে এই বিষয় নিয়ে অর্থবহ আলোচনা হয়। ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের হেড অব আর্টস নাহিন ইদ্রিসের মতে, দুইদিকেই এটি হওয়া উচিত। শুধু শিল্পী না শিল্প সৃষ্টির সময় এর দর্শকদের কথাও চিন্তা করতে হবে। কারণ, প্রতিবন্ধী শিল্পীরা যেমন শিল্পকর্ম প্রদর্শনের সময় কারিগরি সহায়তা পান সেই সুবিধা তাদের মত দর্শকদেরও নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা এবং খ্যাতনামা চলচিত্র পরিচালক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, প্রতিবন্ধীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারলে তা সমাজে চমৎকার প্রভাব ফেলবে। ২০১৬ সালে ১৮ জন প্রতিবন্ধী শিল্পী নিয়ে 'আ ডিফেরেন্ট রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট' নামের মঞ্চ নাটক নির্দেশনার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি মনে করেন, এই উদ্যোগ পারফর্মিং আর্টের ক্ষেত্রে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।
অভিব্যক্তি প্রদর্শনের শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশের সমাজে শিল্পকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়। সেই সাথে শিল্পীদেরও রয়েছে বেশ কদর। আর তাই শিল্পের সাথে শারীরিক এবং মানসিকভাবে প্রতিবন্ধীদের মেলবন্ধন ঘটলে তাদের নিয়ে সমাজের অনেক কুসংস্কার দূরীভূত হতে পারে।
'সমাজ পরিবর্তনে শিল্প' এই ধারণাকে উপজীব্য করে শিল্পের মাধ্যমে সমাজে গুণগত পরিবর্তন আনতে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের আর্টস প্রোগ্রামিং কার্যক্রম দেশে একটি শক্ত ভীত তৈরী করেছে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের নতুন উদ্যোগ 'ডিজেবিলিটি আর্ট: রিডিফাইনিং এমপাওয়ারমেন্ট' এর অংশ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের শিল্পচর্চার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিল্প, প্রতিবন্ধী সম্প্রদায় এবং সমাজের মাঝে একটি সেতুবন্ধন রচনার প্রয়াসে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী এবং শিল্প বিষয়ক দুই জগতের সংশ্লিষ্ট অনেকেই একত্রিত হয়েছিলেন। এসবের সমন্বয়ে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করা সম্ভব।
আরকে//
আরও পড়ুন