ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

সময়কে কাজে লাগাবেন কীভাবে

মাসুদ আলম

প্রকাশিত : ২০:০৫, ২৯ আগস্ট ২০১৯

সময় পাই না, সময় হয়ে উঠে না বা সময় যে কীভাবে চলে যায়-এ জাতীয় অজুহাতে আমরা রীতিমত অভ্যস্থ হয়ে উঠেছি। প্রতিদিন আমাদের প্রত্যেকের জন্যই  সমপরিমাণ কর্মঘন্টা বরাদ্দ থাকে। এই  একই পরিমাণ সময় ব্যবহার করে একজন দক্ষ ও চৌকষ কর্মী যিনি সময় ব্যবস্থাপনা জানেন, তিনি অফিসের সকল কাজ অনায়াসে সুসম্পন্ন করতে পারেন। কিন্ত সময় ব্যবস্থাপনা না জানা এবং সময় অপচয় করে এমন একজন কর্মী  একই পরিমাণ সময় পেয়েও দিনের কাজ শেষ করতে অপারগ। 

সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাই সময়ের কাজ সময়ে শেষ করা বাঞ্চনীয়। সময় স্রষ্টার বিশেষ নেয়ামত। সময় অপচয় করা নিজের অজ্ঞাতসারে স্রষ্টার দান ও মহিমাকে অবহেলা করার সামিল।

প্রয়োজন নিরূপণ
সময় বাঁচানোর প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মতালিকা  প্রণয়ন। প্রতি মূহুর্তেই বিভিন্ন ধরণের কাজ করা যেতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে কোন কাজটি বিশেষভাবে করা প্রয়োজন তা নিরূপণ করতে পারা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। 

বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে উঠুন
কাজের ঝামেলা কাটিয়ে উঠার জন্য আপনার জমে থাকা কাজগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করুন। একটি হচ্ছে জরুরী আরেকটি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। জরুরী গ্রুপে অনেক তুচ্ছ বিষয়ও থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, তুচ্ছ বিষয় নিয়েই আমরা বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি মনযোগ দিলে দীর্ঘস্থায়ী সুফল পাওয়া যায় এবং সময়ও অনেক বেঁচে যায়।

দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্যের জন্য সময় বাঁচান
সবসময় দেখবেন জরুরী কাজ করতে করতে সময় পার হয়ে যাচ্ছে। মুহূর্তের প্রয়োজন পূরণ করার পর দূরপ্রসারী কাজের জন্য সময় পাওয়া যাচ্ছে না। দূরপ্রসারী লক্ষ্যের জন্য প্রতিদিন আধাঘন্টা থেকে একঘন্টা সময় ব্যয় করুন। পরবর্তী জীবনে দেখবেন এই আধাঘন্টা-একঘন্টা সময়ই আপনাকে বড় ধরণের তৃপ্তি  ও আউটপুট দিচ্ছে।

সংখ্যার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার ঠিক করুন
আপনার যা যা করা প্রয়োজন তার তালিকা প্রস্তুত করুন। তারপর গুরুত্বের ভিত্তিতে এক থেকে দশ পর্যন্ত নম্বর দিন। এক হচ্ছে সর্বোচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ, আর দশ হচ্ছে সর্বনি¤œ। এরপর তালিকার প্রতিটি বিষয়কে জরুরী ভিত্তিক নাম্বার দিন। এক হচ্ছে সবচেয়ে জরুরী, আর তিন হচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম জরুরী। এরপর গুরুত্ব ও জরুরী এই দুই-এর সংখ্যাকে পূরণ করুন। যে কাজের সংখ্যা সবচেয়ে কম তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী বলে বিবেচনা করুন।

অগ্রাধিকার নিরুপণের কৌশল
অগ্রাধিকার নিরুপণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হচ্ছে প্রতিদিনের কর্মতালিকা প্রস্তুত করা। সারাদিন কী করতে হবে লিখে ফেলুন। তারপর সবচেয়ে জরুরী কাজগুলোর পাশে ‘ক’ চিহ্ন দিন। এরপর এ কাজটি করতে কত সময় লাগতে পারে তা অনুমান করে দেখুন। যদি দেখেন সবগুলো কাজ করতে আট ঘন্টারও বেশী সময় লেগে যাচ্ছে তাহলে তালিকা সংক্ষেপ করুন। সারাদিন তালিকা অনুসারে কাজগুলো করতে চেষ্টা করুন।

গুছিয়ে কাজ করুন
আমাদের অনেকেই আগোছালো অবস্থায় কাজ করি। এতে সময় বেশী লাগে। একটু সচেতনভাবে গুছিয়ে কাজ করলে সময় ও অর্থ দুই-ই বাঁচানো যায়। 
টেবিল গোছানো ও কাজের চাপ কমানোর জন্য যে কাজগুলো আপনার অধীনস্থরা করতে পারে সেই কাগজপত্রগুলোর উপর  তাদের নাম লিখে সরাসরি তাদের কাছে পাঠিয়ে দিন। নিজের টেবিলে যে কাজগুলো শুধু আপনি নিজেই করবেন সেই কাগজগুলো রাখুন। অপ্রয়োজনীয় কাগজে টেবিল জ্যাম করে রাখবেন না। গবেষণায় দেখা গেছে আপনার টেবিলে আসা কাগজপত্রের মাত্র ২০ থেকে ৪০ ভাগ প্রয়োজনীয় কাগজ। ৬০ ভাগ কাগজই অপ্রয়োজনীয়। আর যে কাগজগুলো আপনি ফাইল করে রাখছেন তার মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগ আপনার কাজে আসবে।  তাই অপ্রয়োজনীয় কাগজগুলো নির্দি¦ধায় ফেলে দিন।

সময়ের অপচয় রোধ করুন
আমাদের যে সময় নেই তা নয়, আসলে আমাদের মনে হয় আমরা খুব ব্যস্ত। আমাদের অজ্ঞাতসারে  মূল্যবান সময়ের একটি বিরাট অংশ অপচয় হয়। এ নষ্ট সময়কে বাঁচাতে পারলে  দিনে একাধিক কর্মঘন্টা  যোগ করা সম্ভব।

অনাহূত দর্শনার্থী ও ফোন
আমাদের দিনের ৫০ থেকে ৬০ ভাগ সময় অনাহূত দর্শনার্থীর সঙ্গে ও টেলিফোনে খোসগল্প করতে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এরকম অনাহূত দর্শনার্থী অফিসে আপনার কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথে আপনি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যান। কেমন আছেন? জিজ্ঞেস করার  পরিবর্তে একটু হেসে জিজ্ঞেস করুন, আমি আপনার জন্য কী করতে পারি? অফিসের দেয়ালে একটি বড় ঘড়ি রাখুন, যাতে আপনি প্রয়োজনে ঘড়ির দিকে তাকাতে পারেন। তাহলে দেখবেন আলাপ অহেতুক দীর্ঘায়িত হচ্ছে না।

অনেক সময় কাজ করার প্রস্তুতি নিতেই প্রচুর সময় ব্যয় করে ফেলি। যেমন কাজ শুরু করার আগে এক কাপ চা বা কফি খেয়ে মানসিক প্রস্তুতি নেয়া বা কোন টেলিফোন করার আগে পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়ে নেয়া। এ সব প্রস্তুতি বাদ দিয়ে সরাসরি কাজে বসে যান এবং সেরে ফেলুন। কাজ  শেষ করে নিজেকে চা বা কফি দ্বারা পুরস্কৃত করুন।


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি