ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

সাইকোপ্যাথ ও সোসিওপ্যাথ কারা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:১১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সাইকোপ্যাথ এবং সোশিওপ্যাথ, শব্দদুটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। ব্যক্তিজীবনে বা সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ঘটনায়, আড্ডায় আমরা অনেকেই কমবেশি এই শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকি। যদিও মেডিকেল সাইন্সে কারো মধ্যে সাইকোপ্যাথের কোন ট্রেইট দেখা গেলে, এটাকে অফিশিয়ালি Antisocial Personality Disorder (ASPD) নামে ডাকা হয়। মুভি, সিনেমা বা থ্রিলার বইগুলাতে সাইকোপ্যাথদের চিত্রায়ণে তাদের সিরিয়াল কিলার বা ভায়োলেন্ট চরিত্রে দেখানো হয়। 

কিন্তু আসলেই কি তাই? চলুন, তার জন্য জেনে নেই মনোবিজ্ঞান কী বলে তাদের নিয়ে।

অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই মনে করেন, সাইকোপ্যাথ আর সোশিওপ্যাথের মধ্যে পার্থক্য নেই। কিন্তু অপর একদল ভিন্ন মতামত পোষণ করেন। মাইকেল টপকিন্স নামের একজন সাইকোলজিস্ট এবং রাইটার এর মতে, একজন সাইকোপ্যাথির মধ্যে বিবেকের তাড়না কাজ করে না। সে আপনার ক্ষতি করার জন্য আপনাকে মিথ্যা বলতে পারে, কিন্তু তার জন্য তার ভিতরে কোন অনুশোচনা কাজ করে না। সোশিওপ্যাথির মধ্যে আবার বিবেকবোধ কাজ করে কিন্তু তা এতটাই দুর্বল যে, তা তাকে ভুল কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। 

এরন কিপনিস নামে আরেকজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টও একই মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যদের জন্য কোন এমপ্যাথি কাজ করে না। সাইকোপ্যাথদের মধ্যে এটা বেশি প্রবল। অন্যরা তাদের কাছে শুধুমাত্র তাদের স্বার্থ উদ্ধারের একটা বস্তু। 

মুভি, টিভি সিরিজে সাইকোপ্যাথদের সিরিয়াল কিলার হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা সত্য নয়। অনুমান করা হয় যে, প্রতি একশজনে একজনের মধ্যে সাইকোপ্যাথির যে ক্লিনিক্যাল বৈশিষ্ট্য আছে, তা পাওয়া যাবে এবং প্রতি পাঁচজনে একজন বিজনেস লিডাদের মধ্যে সাইকোপ্যাথের ট্রেইট আছে। যদি সব সাইকোপ্যাথ সিরিয়াল কিলার হতো, তাহলে আমাদের জীবন কেমন হতো, ভাবুন! 

বাস্তব জীবনে, সাইকোপ্যাথরা সবাই ভায়োলেন্ট হয় না। কিন্তু তারা ম্যানিপুলেটিভ আচরণ করতে পারে। তারা যা চায় তা পাওয়ার জন্য বেপরোয়া আচরণ দেখাতে পারে এমনকি তার জন্য প্রয়োজনে অন্যের ক্ষতিও করতে পারে। আপনি হয়ত আপনার পরিবারের মধ্যে বা কর্পোরেট লাইফে অফিসের কলিগদের মধ্যে এরকম আচরণ দেখতে পারেন। কিন্তু তাই বলে হুট করে তাদেরকে সাইকোপ্যাথ বা সোশিওপ্যাথ ভেবে বসবেন না। এই ধরনের আচরণ নিঃসন্দেহে স্বার্থপরতা। আর স্বার্থপর হলেই কেউ সাইকোপ্যাথ হয়ে যায় না। আর সাইকোপ্যাথের মধ্যে সর্বোচ্চ খারাপ যেটা হতে পারে - একজন সাইকোপ্যাথি ঠাণ্ডামাথার খুনি বা সিরিয়াল কিলার হতে পারে। কিন্তু, সেটা খুব সচারাচার ঘটে না। অন্তত মুভিগুলোতে যেভাবে স্টেরিওটাইপড কাহিনী দেখায়, সেরকম না।

সাইকোলজিস্টরা সাইকোপ্যাথদের কোল্ড হেডেড বলেছেন আর সোশিওপ্যাথদের বলেছেন হট হেডেড। সোশিওপ্যাথরা তাদের আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয় তারা শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবে। এমনকি তারা তাদের আচরণের জন্য অন্যদের দোষারোপ করতে পারে। সাইকোপ্যাথ তাদের থেকে ভালো প্লেয়ার। তারা তাদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আপনাকে মুগ্ধ করে ফেলতে পারবে। অন্যর অনুভুতিকে তারা এত সহজেই অনুকরণ করতে পারে যে, তাদেরকে সহজে ধরা যায় না। তারা দেখায় যে তারা অন্যের প্রতি সহানুভুতিশীল কিন্তু আদৌতে তারা শুধু নিজেদের প্রয়োজনে অন্যদের ব্যবহার করে। তারা খুব হিসেবি হয় এবং ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করে। 

যেমন ধরুন, অফিসে একজন কলিগ সাইকোপ্যাথ। সে যদি টাকা অথবা স্ট্যাটাসের পিছনে ছুটে, তার জন্য পরিকল্পিত হয়ে সে আগাবে। তার টার্গেট পূরণের জন্য যা করা প্রয়োজন সে তাই করবে, এমনকি যদি তাতে অন্যের জব বা সম্মান চলে যায়, তাতেও তার কিছু যায় আসে না।

সাম্প্রতিক কিছু স্টাডি প্রকাশ করেছে যে, বাহ্যিক দিকথেকে সাইকোপ্যাথদের ব্রেইনের সাধারণ মানুষদের ব্রেইন থেকে ভিন্ন হতে পারে। এটার প্রকাশ তাদের চরিত্রের মধ্যেও দেখা যায়। যেমন- মুভিতে কোন ভায়োলেন্ট সিন দেখলে যেখানে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হতে পারে, হার্ট বিট ফার্স্ট কাজ করতে পারে, কিন্তু একজন সাইকোপ্যাথের ক্ষেত্রে তা হবে না। সে বরং শান্ত থাকবে। কিন্তু এর মানে আবার এটাও নয় যে তারা এগুলোকে উচিত কাজ ভাবছে বা এগুলো তারাও করে বসতে পারে। এদের সম্পর্কে আসলে মনোবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যার চাইতে তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা ও চিন্তা-ভাবনা থেকে জানা গেলে বুঝতে সহজ হয়।

একজন সাইকোপ্যাথি জানিয়েছেন, “প্রাকটিসের মাধ্যমে সহানুভুতি ও সমবেদনার মতো অনুভুতিগুলো সহজেই নকল করা যায়। একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আমার নিজেকে স্বাভাবিক মনে হতো এবং যারা কোন কিছু হারিয়ে বা কাওকে হারিয়ে কান্না করতো, তাদেরকেই নাটকবাজ মনে হতো। কাছের কোন আত্নীয় মারা গেলেও আমি কিছুই অনুভব করতাম না। তারপরেই আমি নিজেকে প্রশ্ন করা শুরু করি। মিডিয়া যদিও আমার মতো লোকজনকে সিরিয়াল কিলার হিসেবে দেখায়, আমি নিজে কখনো কারো ক্ষতি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি নাই। তবে হ্যাঁ, আমার কাছে মনে হয় সমাজে পজিটিভ উন্নয়নের জন্য ‘সহানুভূতি’ নামক অনুভূতিকে প্রয়োজনীয় মনে হয় না। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় আমার কোন পোষা প্রানি থাকা উচিত নয়। আমার কিছু মাছ ছিলো যেগুলা সময়ের আগেই মারা যায়। আমার মনে হয়, কুকুর বা বিড়াল পুষলে একই ঘটনা ঘটবে।“

আরেকজন জানায়, “ডে টু ডে লাইফে আমার কোন সমস্যা হয় না। এমনকি, স্ট্রেসফুল সিচুয়েশনে ইমোশনাল স্ট্যাবিলিটির জন্য আমি প্রশংসাও পেয়েছি। মিডিয়া যদিও প্রত্যেক সাইকোপ্যাথকে সিরিয়াল কিলার হিসেবে দেখায়, এটা আসলে রুপকথার গল্পের মতো। আমি একজন কিলার নই। যদিও মার্ডার কোন  নিদির্ষ্ট প্রবলেমের একটি সমাধান হতে পারে, কিন্তু প্রত্যেক সাইকোপ্যাথ জানে যে তার চেয়েও বড় সমাধান আছে আর তা হলো – সুইসাইড।
 
প্রত্যেকটা লস আমার কাছে মুক্তির মতো যেটা আমার বোঝা কমায়। আমি জানি এই ধরনের সিচুয়েশনে কি করতে হয়। কিন্তু আমার মনে হয় অন্যদের অনুভুতির অনুকরণ না করে পাথরের মতো নিশ্চল থাকাটা অন্যদের কাছে আমাকে আর বেশি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। সবাই ভাবে আমি আমার কষ্টকে ভিতরে চাপা দিয়ে রেখে শক্ত থেকে বাকীদের জন্য শক্তি যুগিয়ে যাচ্ছি। সবাই এটাকে সম্মান দেখাবে। আসলে যে কিনা আমার মতো কিছুই অনুভব করে না তার জন্য এটা উপযুক্ত ছদ্মবেশ।“

অন্য একজন সাইকোপ্যাথ শেয়ার করেন, “আমাদের লাইফে সবাই আমাদের কাছে বস্তুর মতো এবং আমরা সবকিছুই ম্যালিপুলেটিভ করি, এটা একটা রুপকথার মতো। তবে হ্যাঁ, আমি প্রচণ্ডভাবে ম্যানিপুলেটিভ হতে পারি, কারণ বাকীদের মতো আমি আবেগে ক্ষতবিক্ষত হই না এবং জানি কীভাবে অন্যদের ইমোশন কাজে লাগিয়ে আমার প্রয়োজনে তাদেরকে ব্যবহার করতে হয়। এটার মানে এই না যে আমি সবসময় এটা করি। বরং যখন প্রয়োজন শুধু তখন আমি করি। এই অন্যদের থেকে কম ইমোশনাল হওয়াটা আমাকে অন্যদের সাথে এটাচ হতে বাধা হিসেবে কাজ করে।“

এমএম/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি