সাউথ বাংলা ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন কমবে না
প্রকাশিত : ২০:৩১, ১৭ জুন ২০২০
করোনাভাইরাসে উদ্ভুত বিরূপ অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে চতুর্থ প্রজন্মের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক তার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন না কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার ১৬ জুন ২০২০ ব্যাংকটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য উঠে আসে।
এ বিষয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এস. এম. আমজাদ হোসেন বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে আমাদের ব্যাংক কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের সেবা দিয়ে আসছে। করোনার প্রভাবে নেতিবাচক অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে ব্যাংকারদের ফ্রন্টলাইনার যোদ্ধা হিসেবে মনোবল ধরে রাখা প্রয়োজন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্যাকেজ বাস্তবায়নেও ব্যাংকের অনেক ভূমিকা রয়েছে। এমতবস্থায় আমাদের ব্যাংকের পর্ষদ কর্মকর্তাদের বেতন না কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকৃতার্থে বেতনভাতা কম দিয়ে ব্যাংকের খুব বেশি লাভ হয় না।
তিনি আরও বলেন, সারা বিশ্বের মানুষ করোনাভাইরাসের পরিণতিতে বিচলিত হয়ে পড়েছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতেতে এখন বৈশ্বিক মহামন্দা চলছে। এপ্রেক্ষিতে আমাদেরকে ঘুরে দাঁড়াতে ব্যাংকিং সেবার মান ও পণ্যে নতুত্ব আনতে হবে। যা ব্যাংক কর্মকর্তাদের দ্বারা সম্পাদিত হবে। সুতরাং কর্মকর্তাদের বেতন না কমিয়ে অন্যান্য অপব্যয় কমাতে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসবিএসি ব্যাংক চেয়ারম্যানের নির্দেশনার পর ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিকুল ইসলাম চৌধুরী এক চিঠিতে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা সকলেই মহামারী করোনা ভাইরাসের সময় অতিক্রম করছি উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। এই পরিস্থিতিতে আমাদেরকে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর অনুগ্রহ থাকার পরও বাংলাদেশে এর তাড়াতাড়ি সংক্রমণ হয়েছে এবং মৃত্যুর হার, যা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম ছিল তা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
বিশ্ব অর্থনীতি বাংলাদেশসহ কোভিড-১৯ এর ফলস্বরূপ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে চলেছে এবং প্রকৃত অর্থনীতিক ক্ষতি নির্ভর করবে এই মহামারী কত দিন অব্যাহত থাকবে এবং কীভাবে আর্থিক নিয়ন্ত্রকরা এবং নেতারা বিশ্বব্যাপী এর মোকাবেলায় কৌশলী হবে তার উপর। আর্থিক বাস্তুতন্ত্রের একটি ক্ষুদ্র অংশ হিসাবে এসবিএসি ব্যাংকও কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক প্রভাবকে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতিমধ্যে, আমাদের সরকার শিল্প, আর্থিক ও কৃষিক্ষেত্রসহ অর্থনীতিকে সচল করতে সহায়তা করার জন্য প্রচুর প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
এই ধ্বংসাত্মক মহামারীতে আমরা-ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির সদস্যরা স্বাস্থ্য কর্মীদের মতো ফ্রন্টলাইনার হিসাবে দেশের ব্যাংক এবং আর্থিক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে অবদান রাখছি এবং গত ৩ মাসের সাধারণ/লকডাউন সময়কালে, আমাদের কর্মীরা অফিসে যোগ দিচ্ছেন এবং গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সংক্রমণের গুরুতর এবং সম্ভাব্য ঝুঁকির মধ্যে থাকার পরেও প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা প্রদানে আমরা সর্বদা আমাদের কর্মীদেরকে নিয়ে গর্ববোধ করছি।
আমি সোশ্যাল/ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কয়েকটি গুজব/সংবাদ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই, যা বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন কাটা সম্পর্কে লক্ষ্য করেছি। আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই যে, এখন পর্যন্ত আমাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি হ্রাস করে আমাদের কর্মশক্তিকে হতাশায়িত করার মতো কোন পরিকল্পনা নেই। বরং আমরা ক্রেডিট পোর্টফোলিও এবং পেমেন্ট সেবা জোরদারভাবে মূল্যায়ন, বর্তমান এবং আসন্ন তারল্য স্থিতি পর্যালোচনা, আমানত বৃদ্ধি করার জন্য যতটা সম্ভব একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা গ্রহণ করব। উদ্দীপনা প্যাকেজ ব্যবহার করে, এনপিএল (নন পারফর্মিং লোন) কমানো, অপারেশনাল ব্যয় হ্রাস এবং গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা ও বিশ^াস তৈরি করবো।
আমাদের সম্মানিত বোর্ডের সদস্যগণ এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররাও বর্তমান মহামারী পরিস্থিতিতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সুবিধা সম্পর্ক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। যা বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর প্রাথমিক পর্যায়ে প্রণোদনা বোনাস-২০১৯ অনুমোদনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছিল।
আমি বিশ্বাস করি যে, আপনাদের সবার মধ্যে এই অভূতপূর্ব সঙ্কট কাটিয়ে উঠার সম্ভাবনা ও সাহস আছে। যদি আমরা বেঁচে থাকতে পারি, আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারি এবং উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারি তাহলে আমরা আমাদের জীবনের পাশাপাশি জীবিকা রক্ষা করতে সক্ষম হব। তাই আতঙ্কিত হবেন না। দয়া করে একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখুন এবং একে অপরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা সরবরাহ করুন। আমরা একই অফিসে থাকি বা না থাকি, আমরা পরিবারের মতো কাছাকাছি থাকি। নিরাপদে থাকুন, মনোবল দৃঢ় থাকুন।
আরকে//
আরও পড়ুন