সাওতালি ঢংয়ে কমলিকা গাইলেন-‘কালো জলে কুচলা তলে’
প্রকাশিত : ২০:৪১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ | আপডেট: ১৬:০০, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪
কমলিকা চক্রবর্তী, কলকাতার নন্দিত কণ্ঠশিল্পী। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে সংগীতচর্চা করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে দর্শক ও শ্রোতাদের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সংগীত উপহার দিয়েছেন এ শিল্পী।
‘কালো জলে কুচলা তলে ডুবল সনাতন/আজ সারা না, কাল সারা না পাই যে দরসন/লদীধারে চাষে বঁধু মিছাই কর আস ঝিরিহিরি বাঁকা লদি বইছে বার মাস...’ -অনিন্দ্য নৃতাত্ত্বিক সংস্কৃতির গানটি নতুন করে গেয়ে শ্রোতা সমাজে বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি। সম্প্রতি এ শিল্পীর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে গানটি প্রকাশিত হয়েছে। সংগীত পরিচালায় ছিলেন অপু দেবনাথ।
মৌলিক গানের পাশাপাশি ইদানীং নিজের পছন্দের গানগুলো নতুন আয়োজনে গাইছেন তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় উন্মুক্ত করলেন নতুন করে পুরোনো এই জনপ্রিয় গানটি। ভিডিও ধারণ করেছেন মনোজ কাপুরিয়া। পশ্চিমবঙ্গের গাগনাপুর ফরেস্টে এর ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে।
গান নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যত ভাবনা জানতে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন একুশে টেলিভিশনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন এর প্রতিবেদক কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক।
একুশে টেলিভিশন: আপনার নতুন গান সম্পর্কে শুনতে চাই?
কমলিকা চক্রবর্তী : ‘কালো জলে কুচলা তলে ডুবল সনাতন/আজ সারা না, কাল সারা না পাই যে দরসন/লদীধারে চাষে বঁধু মিছাই কর আস ঝিরিহিরি বাঁকা লদি বইছে বার মাস...’ এই গানটি বেশ পুরোনো। বেশ কয়েক বছর আগে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘উত্তরা’ চলচ্চিত্রে ব্যবহার হয়েছিল গানটি। গেয়েছিলেন অভিজিৎ বসু। গানটি বীরভূম অঞ্চলের লোকসংগীত হিসেবে পরিচিত হলেও এটি মূলত সাঁওতালি গান। এটাকে ঝুমুর গান বলে। সাঁওতালী ভাষায় গাওয়ার চেষ্টা করেছি। ‘সাঁওতালিদের গানের সংস্কৃতি খুবই সমৃদ্ধ। তবে অধিকাংশ সাঁওতালি গান পশ্চিম বাংলায় বিভিন্ন অঞ্চলে বহুল প্রচলিত। কিছু কিছু গান আঞ্চলিক গান হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে।
একুশে টেলিভিশন: নতুন গান নিয়ে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
কমলিকা চক্রবর্তী: বাংলা ভাষায় রচিত সীমিতসংখ্যক সাঁওতালি গানের মধ্যে ‘কালো জলে কুচলা তলে’ গানটি অন্যতম। তাদের নিজস্ব ঢং গায়কীতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এ নিয়ে শ্রোতাদের কাছ থেকেও বেশ সাড়া পাচ্ছি।
নতুন এ গানটি ছাড়াও ‘সময় জানে’, ‘আমার প্রেমের ইতি’ মৌলিক গান ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি’, নির্মলেন্দু চৌধুরীর ‘সোহাগ চাঁদ বদনী ধ্বনি’ গানের কাভার করেছেন তিনি। শিগগিরই গানগুলো তাঁর নিজম্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পাবে বলে জানান এই কণ্ঠশিল্পী।
একুশে টেলিভিশন : আপনার সঙ্গীত জীবনের সূচনা কিভাবে হয়েছিল? এই ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা কোথায় পেলেন?
কমলিকা চক্রবর্তী : আমার মায়ের কাছেই সংগীতে হাতেখড়ি। পরবর্তী সময়ে আমি তালিম নিয়েছি পণ্ডিত দিননাথ মিশ্র, হৈমন্তী শুক্লা, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, কল্যাণ সেন বরাদসহ প্রমুখ সংগীতশিল্পীর কাছে। নজরুল ক্ল্যাসিকাল সংগীতের ওপর ৬ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেছেন চণ্ডীগড় কলাকেন্দ্র থেকে। তিনি রবীন্দ্র সংগীত ছাড়াও নজরুল, আধুনিক ও লোকসংগীত পরিবেশনে পারদর্শী। রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে ‘রবি কথা’ ও ‘পথ চাওয়াতে আনন্দ’র শিরোনামে রয়েছে তাঁর দুটি অ্যালবাম।
একুশে টেলিভিশন : আপনি কি ধরনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
কমলিকা চক্রবর্তী : আমি নিয়মিত গানের রেওয়াজ করছি। এছাড়া পানিয়াটি উৎসব ও কলকাতা বইমেলা, দমদম ফেয়ারে গান পরিবেশন করেছি। আগামি ৩০ জানুয়ারি সুন্দরবন উৎসবে গান পরিবেশন করব। কলকাতায় এখন উৎসবের সময়। তাই অনেক কাজ হাতে রয়েছে। গান নিয়ে নতুন কিছু পরিকল্পনা আছে। সম্প্রতি আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম সেখানে একুশে টেলিভিশনের গানের ওপাড়ে অনুষ্ঠানে গান গেয়েছি।
একুশে টেলিভিশন : আপনার গান এবং অ্যালবামের সংখ্যা কত?
কমলিকা চক্রবর্তী : আমার এই পর্যন্ত ২৫টি মিউজিক ভিডিও বাজারে এসেছে। এরমধ্যে দুটো এ্যালবাম রয়েছে। আমার এই পথ চাওয়াতে আনন্দ এবং রবিকথা।
একুশে টেলিভিশন : সংগীত জীবনে কি কি প্রতিকূলতা পেরিয়ে এসেছেন?
কমলিকা চক্রবর্তী : অনেক চড়াই-উতরাই পাড় করেছি গানের জগতে। এখনও প্রতিনিয়তই লড়াই করছি। গানের মধ্যে মূলত মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাই। আমি প্রাণে প্রাণে সঙ্গীতের সুরের মুগ্ধতা ছড়াতে চাই। আমি গান দিয়ে ভালো কিছু করতে চাই। ‘নানা প্রতিকূলতার মধ্যে গান করে যাচ্ছি। সম্প্রতি শ্রোতাদের পছন্দসই নতুন কিছু গান করেছি। যা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ হবে। সবসময়ই ইচ্ছা থাকে শ্রোতাদের ভালো গান উপহার দেওয়ার। আগামীতেও এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
একুশে টেলিভিশন : আমরা জানি আপনি রাজনীতি সচেতন। ভবিষ্যতে কি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?
কমলিকা চক্রবর্তী : আমি কলকাতায় রাজনীতি করতে চাই। এখন যদিও রাজনীতি থেকে অনেক দূরে আছি। আপাতত করতে চাই না। তবে সঠিক সময় সুযোগে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হব।
উল্লেখ্য, দু'বাংলায় সংগীত জগতে বরেণ্যদের তালিকায় শীর্ষে আছেন কমলিকা। বাংলাদেশে করোনাকালীন একুশে টেলিভিশনের ফেসবুক পাতায় দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন তিনি। অবরুদ্ধ সময়ে (লকডাউন) এ অনুষ্ঠান দুই বাংলার শিল্পীদের মেলবন্ধনের কাজ করছে অনুষ্ঠানটি। স্টেজ শোর পাশাপাশি কলকাতাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে নিয়মিত গান করেন কমলিকা।
কেআই//