ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

সাগর-রুনীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২৪, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৪:৪৫, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে আমাদের প্রিয় দুই সহকর্মী মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনী রাজধানীর রাজাবাজারে তাদের নিজ বাসায় নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। এই ঘটনার খবর পেয়ে সহকর্মী সাংবাদিকদের পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সাগর-রুনীর বাসায় ছুটে যান। যাদের মধ্যে ছিলেন সেই সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। ভয়াবহ এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে তিনি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন। পেশাদার দুই সাংবাদিকের এই নৃশংস হত্যার খবর জেনে সারা দেশের মানুষ শিউরে উঠে। ঘটনার দু’দিন পর পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক সাংবাদিক সম্মেলন করে সাগর-রুনী হত্যাকান্ডের ‘প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতির’ কথা জানান।

এরপর একে একে ছয়টি বছর পার হয়েছে। খুনীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার তো দূরের কথা তদন্তের বিশ্বাসযোগ্য ও প্রামাণ্য কোনো অগ্রগতিও দেখাতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ অবস্থায় সাগর-রুনী হত্যা মামলা নিয়ে সাংবাদিক সমাজসহ সাধারণ মানুষ একই সঙ্গে হতাশ ও ক্ষুব্ধ।

সাগর-রুনী হত্যাকান্ডের পর থেকেই বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই অংশ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এবং অপরাপর সাংবাদিক সংগঠন খুনীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু রাজনৈতিক মতাদর্শে বিভক্ত সাংবাদিক সংগঠনগুলোর ইস্যুভিত্তিক এই ঐক্য খুব বেশি দিন ধরে রাখা যায়নি। ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে গেছে সাগর-রুনী হত্যার বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলন। শুধু সাগর-রুনী হত্যাকান্ড দিবস এলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) বা অন্য কোনো সংগঠন কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু এক চুলও অগ্রসর হয়নি লোমহর্ষক এই হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া। পুলিশের পর র‌্যাবও হত্যাকারীদের খুঁজে পাচ্ছে না। আদালতের কাছ থেকে বার বার সময় নিচ্ছে তারা। এভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আলোচিত এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে আমাদের সংশয় বাড়ছে।

হত্যার শিকার হওয়ার কিছুদিন আগেই জার্মানি থেকে ফিরেছিলেন সাগর সারোয়ার। তিনি সেখানে জার্মান রেডিও ডয়েচে ভেলেতে কাজ করতেন। ডয়েচে ভেলের অফিসে যেই ডেস্কটিতে বসতেন সাগর সারোয়ার। সেখানে সাগর-রুনীর একটি যুগল ছবি সযত্নে রেখে দিয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা। ছবিটির সামনে রাখা আছে একটি ডায়েরি ও মোমবাতি। প্রতিদিন তাঁর স্মরণে মোমবাতিতে আলো জ্বালান ডয়েচে ভেলের সাংবাদিকরা। এর পাশে একটি কাগজে জার্মান ভাষায় লেখা রয়েছে, ‘২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ঢাকায় নির্মম হত্যার শিকার সাংবাদিক গোলাম সারোয়ার ও তার স্ত্রী মেহেরুন রুনির স্মৃতিতে।’

বছর তিনেক আগে ডয়েচে ভেলে অফিসে গিয়ে সাগরের ডেস্কের সামনে সহকর্মীদের ভালবাসার এই নির্দশনের ছবি তুলেছিলেন সমকালের ফটো সাংবাদিক কাজল হাজরা। ২০১৬ সালে আমি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে ছবিটি আমাকে দিয়েছিলেন তিনি। ছবিটি দেখলে চোখের পানি ধরে রাখতে কষ্ট হয়। মাত্র ক’দিনের সহকর্মী হয়েও সাগর-রুনীকে ভুলে যাননি ডয়েচে ভেলের সাংবাদিকরা। কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি দিন দিন। ১১ ফেব্রুয়ারি এলে অনেক অনেক কথা হয়। কিন্তু তারপর সব স্বাভাবিক। প্রতিদিন অসংখ্য ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তৎপর থাকি আমরা সাংবাদিকরা। সোচ্চার হই অসংখ্য মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার পক্ষে। সেটা আমরা করেই যাবো, সত্য উদঘাটন আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই আমাদের পেশা।

কিন্তু নিজেদের দুই সহকর্মীর নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার নিশ্চিত করতে আমরা যে কিছুই করতে পারছি না! নিজেদের বিষয়ে কী এতোই অসহায় সাংবাদিকরা? বিচারের দাবিতে বহু সভা-সমাবেশে বড় কথা বলেছি, নিস্ফল হুঙ্কার দিয়েছি কতোবার। কিন্তু ছয় বছর পর এসে আজ প্রিয় সাগর ভাই আর রুনীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া আর কোনো পথ দেখছি না। তারপরও আশায় থাকবো, একদিন সাগর-রুনীর খুনীরা চিহ্নিত হবে, দাঁড়াতে হবে তাদের বিচারের কাঠগড়ায়।

লেখক-ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি