সাধনা ও আত্মবিশ্বাস থাকলে বিসিএস উত্তীর্ণ হওয়া যায়
প্রকাশিত : ২৩:৫৩, ১১ জুন ২০১৯ | আপডেট: ২৩:৫৫, ১১ জুন ২০১৯
মো. মঈনউদ্দীন
বিসিএস যেন এক সোনার হরিণ। এই হরিণকে ধরার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অনেকে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সকাল থেকে রাত অবধি শুধু পড়া আর পড়া। অসম্ভব সাধনার ফলেই অনেকে কাঙ্খিত সাফল্যে লাভ করে থাকেন। বিসিএস উর্ত্তীণ হয়ে হাসি ফোটান সবার মুখে।
বিসিএসের এই দীর্ঘ পথযাত্রায় কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে বা কোন পথ অবলম্বন করলে সহজে উর্ত্তীণ হওয়া যায় এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মো. মঈনউদ্দীন। তিনি ৩৫ তম বিসিএস’এ উত্তীর্ণ (তথ্য ক্যাডার) হয়েছেন। বর্তমানে তিনি তথ্য অধিদফতর’র (পিআইডি) আঞ্চলিক তথ্য অফিসের তথ্য কর্মকর্তা পদে খুলনায় কর্মরত আছেন। যশোরের ছেলে মঈন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছেন।
গেল মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষার বাছাই পর্ব। কয়েক মাসের মধ্যে ৪১ তম বিসিএস’র বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করবে সরকারী কর্ম কমিশন। যারা ৪১ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেবেন তারা এখনই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
যারা আগামী বিসিএস এ অংশ নেবে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিসিএস যতটা না মেধার পরীক্ষা, তার চেয়ে বেশি ধৈর্য্যর পরীক্ষা। বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত নিয়োগ সম্পন্ন হতে প্রতিটি বিসিএস’এ প্রায় দুই বছর কেটে যায়। অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয় এই সময়ে। বিসিএস এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরীক্ষা। এক একটি বিসিএস প্রিলিমিনারী পরীক্ষাতে তিন থেকে চার লক্ষ প্রার্থী এই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। কিন্তু চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পায় মাত্র দুই থেকে আড়াই হাজার প্রার্থী। এই দীর্ঘ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরীক্ষায় অনেকেই ধৈর্য হারিয়ে ছিটকে পড়েন। যেহেতু বিসিএস অত্যন্ত প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষা, তাই শুরু থেকেই খুব সতর্ক প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। তাই প্রথম থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
মো. মঈনউদ্দীন বিসিএস‘এ উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ৪টি বিষয়ের কথা বলেছেন। যা বিসিএস প্রত্যাশীদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ:
এক, বিসিএস‘র জন্য কমিটমেন্ট প্রয়োজন। ‘হলে হোক না হলে না হোক’ এ রকম নয় বরং বিসিএস যদি স্বপ্নই হয়ে থাকে তাহলে যে কোন মূল্যে এটা পেতেই হবে। এ ধরনের একটি অঙ্গিকার নিজের কাছে থাকতে হবে। বিজয় না আসা পর্যন্ত সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ঠান্ডা মাথায় নীরব সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। জীবনের লক্ষ্য অর্জনে কঠোর সাধনা চালিয়ে যেতে হবে। সর্বস্ব ত্যাগের প্রস্তুতি থাকতে হবে।
দুই, আত্মবিশ্বাস। এটা অনেকটা ডিম আগে না মুরগী আগে এ রকম একটা বিতর্কের বিষয়। অনেকে মনে করেন এক বা একাধিক অর্জন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। আবার অনেকে মনে করেন কোন কিছু অর্জন করার জন্য আত্মবিশ্বাসটা প্রথমে জরুরি। সেই বিতর্কে না গিয়েও বলা যায় আত্মবিশ্বাস এবং অর্জন একে অপরের পরিপূরক। মাঠে নামার আগে আপনাকে এ বিশ্বাসটা নিয়ে মাঠে নামতে হবে যে আপনিই গোল দিবেন। এটা না করতে পারলে খেলতে নামার আগেই আপনার পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাবে। তাই বিসিএস এর জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে ‘আমি পারব’ এই আত্মবিশ্বাসটা ধরে রাখা।
তিন, বিসিএস’র জন্য অপরিহার্য হলো অধ্যাবসায়। আপনি কেমন মেধাবী, কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেছেন সেগুলো বিসিএস’র ক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাবক হিসেবে কাজ করে না। আপনি যদি স্বপ্নের সাথে লেগে থাকতে পারেন, ভালো না লাগা স্বত্ত্বেও বিসিএস’র বিরক্তিকর পড়াশুনাগুলো আকড়ে থাকতে পারেন, ক্রমাগত অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারেন তবে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি কেউ আপনাকে রুখতে পারবে না। আর জানেন তো বড় আনন্দ পাওয়ার জন্য অনেক সময় ছোট ছোট আনন্দকে হাসিমুখে না বলতে হয়। বিশ্বকাপ ক্রিকেট, প্রিমিয়ার লীগ, ভালো সিনেমা এসব জীবনে বহুবার আসবে। স্বপ্নের জন্য এসব আপাতত শিঁকেই তুলতে হবে।
চার, ভাগ্য একটা বড় বিষয়। অনেকেই হয়ত এ বিষয়ে আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। বলবেন মানুষ নিজেই তার ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক। হ্যা, আমি এটা বিশ্বাস করি যে চেষ্টার মাধ্যমে, প্রার্থনার মাধ্যমে ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। কিন্তু আমি এটাও বিশ্বাস করি যে কিছু কিছু বিষয় সৃষ্টিকর্তা যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তা খন্ডন করার সাধ্য কারো নেই।
তিনি বলেন, আপনার জন্য কোনটি সহজলভ্য তা আপনার চেয়ে আপনার সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। তবে, না মরে ভূত হওয়ার কোন মানেই হয় না। তাই চেষ্টা না করে বসে থেকে কেবল কপালের দোষ দেওয়া নিতান্ত বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।
বিসিএস প্রস্তুতির বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, অনেককে পেছনে ফেলে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। তাই শুরু থেকেই প্রস্তুতিটা হতে হবে সুসংগঠিত। এলোমেলো অগোছালো নয়। সুশৃঙ্খলভাবে এবং একাগ্রচিত্তে প্রস্তুতি নিতে না পারলে অনেক পড়াশুনা করেও আপনি পিছিয়ে পড়বেন। আপনার সময়ের অপচয় হবে। অর্জনটা পিছিয়ে যাবে।
অনেকে গাদা গাদা বই পড়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। কোন বিষয়ে হয়ত ভালো প্রস্তুতি কিন্তু অন্য বিষয়ে ডাব্বা। মনে রাখতে হবে বিসিএস কোন এক্সপার্টিস পরীক্ষা নয়। এখানে কোন বিষয়ে আপনার গভীর পান্ডিত্যের দরকার নেই। বরং সব বিষয়ে আপনার মোটামুটি ধারণা থাকা দরকার। অনেকেই বাংলা এবং সাধারণ জ্ঞানে ভালো কিন্তু গনিত ও ইংরেজিতে দুর্বল। সে ক্ষেত্রে তার পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
আবার বাছাই বা প্রিলিমিনারি, লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভার জন্য ভিন্নভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা যেহেতু সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এই পর্বে সিংহভাগ প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয়। তাই এ পর্বে টিকে থাকার জন্য আপনাকে কৌশলী হতে হবে। যে বিষয়গুলোতে সাধারণত অধিকাংশ প্রার্থী দুর্বল যেমন ইংরেজি, গনিত, বিজ্ঞানে বেশি জোর দিলে আপনি এগিয়ে যাবেন।
তার মতে, প্রিলিমিনারি পরীক্ষার কোন সুনির্দিষ্ট পাস নম্বর না থাকলেও লিখিত পরীক্ষায় শতকরা ৫০ ভাগ নম্বর পেলে মৌখিক পরীক্ষা বা ভাইভায় ডাক পাওয়া যায়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণে কোন ভূমিকা রাখে না। কিন্তু চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হতে হলে আপনাকে ভালো নম্বর নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তবেই আপনার স্বপ্ন পূরণে আপনি এগিয়ে থাকবেন।
এমএস/এসি
আরও পড়ুন