বই থেকে নেওয়া
সাধনা ও পরিশ্রম
প্রকাশিত : ১৬:৫২, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৬:৫৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সাধনা ও পরিশ্রম ব্যতীত জগতে কোনো উন্নতি হয় না। কপালের জোরে লক্ষ টাকা পাবে-এ কখনও বিশ্বাস করো না। যে – কোনো কাজই করো না, সম্যক পারদর্শিতা লাভ করতে হলে বহু বছর সাধনা করতে হবে। ছোট নগণ্য ক্ষুদ্রকে ঘৃণা করো না। ক্ষুদ্রের সাহায্যেই বিরাটের সুষ্টি। ক্ষুদ্র মুহূর্তগুলি কাজে লাগালে জীবনে সোনা ফলাতে পারবে। রাতারাতি কেউ বড় মানুষ হয় না। হঠাৎ কোনো সুবিধা কারো হয় না। হলেও তা বিশ্বাস করে নিজেকে দুর্বল করো না।
যারা কাপুরুষ তারাই ভাগ্যের দিকে চেয়ে থাকে। পুরুষ চায় নিজের শক্তির দিকে। তোমার বাহু, তোমার মাথা তোমাকে টেনে তুলবে- তোমার কপাল নয়।
একদিন দুইদিন করে জীবনের দীর্ঘ সময় চলে যাচ্ছে-জগতে যারা বড়, তাঁরা অপচয় সহ্য করবেন না।
ওয়াট যে-সময় দোকানে বসে বেঁচাকেনা করতেন, সেই সময় তিনি রসায়নশাস্ত্র ও জার্মান ভাষা আলোচনা করে উভয় বিষয়েই পন্ডিত হয়েছিলেন। তুমি এ কথা শুনে হয়তো বিস্মিত হবে- স্টিফেনস ইঞ্জিনে কয়লা যোগাতেন আর অঙ্ক করতেন।
যত সময় তুমি হাসিগল্পে ও ঠাট্টায় কাটিয়ে দাও তার ভিতর থেকে বেশি নয়, এক ঘন্টা সরিয়ে রাখো। সমস্ত দিনে রাতেও মাত্র এক ঘন্টা যদি তুমি কোনো কোনো বিষয়ে আলোচনা কর- দেখতে পাবে দশ বছর পরে তুমি একজন বড় পন্ডিত হয়েছে। বন্ধু ও সঙ্গীদের কাছে তোমার সম্মান বেড়েছে। হয়তো তুমি সমস্ত জগতের ইতিহাস জেনে ফেলেছ- অঙ্কশাস্ত্রে প্রভূত পান্ডিত্য লাভ করেছ, একজন বিখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিবিৎসক হয়ে পড়েছ কিংবা অর্থসহ সমস্থ কোরআন শরিফ বা গীতাখানা মুখস্থ করে ফেলেছ।
ডাক্তার ডারউইন বেড়াবার সময়েই তাঁর অধিকাংশ বই লিখতেন। ডাক্তার বার্নে গান শিখাবার জন্য যখন এক ছাত্রের বাড়ি ছেড়ে অন্য ছাত্রের বাড়িতে যেতেন, তখন তাঁর সাথে দেখা যেত ফরাসি ও ইতালীয় ভাষার ব্যাকরণ।
এক উকিলের কেরানি বাসা থেকে অফিসে যাবার পথে শিখেছিলেন গ্রিক ভাষা। ভাত খেতে ডাকলে ডিজুসে সব সময়েই দেরি করতেন। তার মানে, সে সময় তিনি বই লিখতে । খাবার আগের সময়টুকু ও বিনা কাজে ফেঁসে যেতে দিতেন না
কামার ইলিহু বুরিট দোকানঘরের ঠকঠকির মাধ্যে বসে আধুনিক ও পুরাতন ত্রিশটি ভাষায় পন্ডিত হয়েছিলেন।
পথে যদি ৫০০ টাকা পাও, তাহলে তোমার আনন্দের সীমা থাকে না। সময়রুপ অমূল্য রত্ন তোমার পায়ে জড়িয়ে পড়েছে, সেদিকে তোমার ভ্র ুক্ষেপ নাই। মানুষের কাছে টাকা চাও, সে তোমাকে ঘৃণা করবে। সময় সম্পদ নিয়ে তোমার দরজায় দাঁড়িয়ে দয়া করে তার রত্ন উপহারগুলি গ্রহণ কর।
কতকগুলি যুবক বাক্সটারের কাছে দেখা করতে যেয়ে বলেছিল-মহাশয়. আমাদের ভয় হচ্ছে, আপনার সময় নষ্ট করছি। অভদ্র(?)জ্ঞানী বাক্সটার বললেন-নিশ্চয়ই।
জ্ঞানী যাঁরা তাঁরা নিরন্তর সময়ের প্রান্তর হতে মণি-মুক্তা কুড়িয়ে নিচ্ছেন। তুমি আমি সুযোগের আশায়, সময় নাই বলে বা দারিদ্র্যের মিথ্যা অজুহাতে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছি। কাজ কর-কাজ কর- সব অবস্থায় সকল সময় -কোনো কাজ কর, তার ফল পাবে। প্রথম প্রথম হয়তো তোমার পরিশ্রম সার্থক হবে না, তাতে নিরাশ হয়ো না। বিখ্যাত সাহিত্যিক এডিসন স্পেকটেটর লিখে গৌরব অর্জন করবার আগে বস্তা বস্তা কাগজ লিখেছিলেন। সেইগুলি অকেজো ঘরের মধ্যে পড়ে থাকলেও , সেইসব রাবিশ লেখার ভিতরেই তাঁর গৌরব –উন্নতির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল।
**লেখাটি ডা. লুৎফর রহমানের উন্নত জীবন গল্পগ্রন্থ সংকলিত।