ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

সীতাকুণ্ডের বেকার তরুণরা হতাশার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে

প্রকাশিত : ১৭:৩৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৬:১৬, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সীতাকুণ্ডের অন্যতম আলোচিত সমস্যা হল বেকারত্ব। শিল্পাঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও এখানে বেকারত্ব প্রধান সঙ্কট হিসেবে বিবেচিত। শিক্ষিত-অশিক্ষিত মিলে বেকারের সংখ্যা ৩০ থেকে হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এ বেকার সমস্যার প্রভাবে এখানের আর্থ-সামাজিক ভারসাম্য হুমকির মুখোমুখি।

কাজের বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় দেশের অন্য এলাকার মতো সীতাকুণ্ডেও বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা শিক্ষার্থীদের অর্ধেক যোগ্যতানুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না। সীতাকুণ্ডে ১৫ থেকে ২৪বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। তরুণদের অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। অনেকে আবার টিউশনি করে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক খরচ চালাচ্ছে। বেশিরভাগ যুববেকার হতাশার অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে।

সচেতন মহলের প্রশ্ন, শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ডে বেকার কেন থাকবে? দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ স্থানীয় লোকজনকে চাকরি দেয়া হলেও সীতাকুণ্ডের হতভাগ্য বেকারদের কপালে তা জোটে না। সীতাকুণ্ডের বেকারেরাও সংঘটিত নয়, চাকরির দাবীতে কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম করে না বলে মিল মালিকেরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ‘ম্যানেজ’ করে চাকরি দেওয়ার চাপ থেকে মুক্ত রয়েছেন। রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা শিল্পপতিদের করায়ত্বে থাকে বলে স্থানীয় জনগণকে তারা পাত্তাই দেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যস্তরের এক রাজনৈতিক নেতা বলেন, “আমাদের জনপ্রতিনিধিরা শিল্পপতিদের কাছে নিজের সুবিধে চাইবেন আবার লোকজনের চাকরির কথাও বলবেন, তা কী করে হয়? আগে নিজে তারপর জনগণ…”

সীতাকুণ্ডের ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সরকারি হিসেবে চার লাখের মতো বলা হলেও বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রমতে স্থানীয়-অস্থানীয় মিলে জনসংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় লাখ ছাড়িয়ে যাবে। ছোট-বড়-মাঝারি মিলিয়ে দেড় শতাধিক শিল্পকারখানা ও শতাধিক শিপব্রেকিং ইযার্ড রয়েছে এখানে। নতুন নতুন আরও শিল্পকারখানা স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। মিল-কারখানাগুলোতে নগণ্যসংখ্যক স্থানীয় লোক (বড়জোর ২ থেকে ৩ শতাংশ) কাজ করে। শিপইয়ার্ডে শ্রমিক-কর্মচারি প্রায় সকলেই বাইরে থেকে আসা। স্বাধীনতার পর বিজেএমসি, বিটিএমসি, বিএসইসি ও বিসিআইসি’র মিলগুলোতে কিছু লোকের কর্মসংস্থান হলেও পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের চাকরি খুব একটা হয়নি। আশি ও নব্বইয়ের দশক থেকে অদ্যাবধি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এখানে যেসব মিলের গোড়াপত্তন হয় সেখানে স্থানীয়লোকের চাকরির সুয়োগ নেই বললে চলে। স্থানীয় লোক নিয়োগের বিষেয়ে মিল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা সর্বদা নেতিবাচক। কেননা, সীতাকুণ্ডের বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের ওপর শোষণ-বঞ্চনার স্টীমরোলার চালাতে নাকি মিল কর্তৃপক্ষের সুবিধে। অস্থানীয়-শ্রমিকেরা প্রতিবাদ করলেও তাদের ‘শায়েস্তা’ করতে মালিকপক্ষের তেমন কষ্ট হয় না। কিন্তু স্থানীয় শ্রমিকদের ওপর মিল কর্তৃপক্ষের খবরদারি চলে না বলে মিল মালিকেরা স্থানীয় লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে চরমভাবে অনীহা প্রকাশ করে বলে শ্রমিক নেতাদের মন্তব্য।

সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, মুরাদপুর ও সীতাকুণ্ড পৌরসভায় শিল্পকারখানা না থাকায় এসব এলাকায় বেকারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত হলেও তারা টু শব্দ করে না। এখানের বেকার যুবক-যুবতিরা চাকরির দাবীতে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে সাহস পায় না। যে কথা বললে অত্যুক্তি হয় না, তা হল সীতাকুণ্ডের লোকজন তুলনামূলকভাবে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে খুব একটা সচেতন ও সজাগ নয়। যার কারণে মিল-কারখানা ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সাধারণ মানুষের ওপর যেভাবে ছড়ি ঘোরান-তা অন্য কোনো উপজেলায় সেভাবে পারেন না। আরাম-আয়েসে চাকরি করা যায় বলে সরকারি কোনো কর্মকর্তা একবার বদলি হয়ে আসলে আর যেতে চান না কিংবা বার বার বদলি হয়ে সীতাকুণ্ডে আসতে আগ্রহী। ফলশ্রুতিতে সরকারি-বেসরকারি বঞ্চনা ও শোষণ সীতাকুণ্ডবাসীর নিত্যসঙ্গি হয়ে পড়েছে।

সীতাকুণ্ডের কলকারখানার কালো ধোঁয় ও বর্জ্য পদার্থের কারণে এখানের পরিবেশ-প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, উৎপাদিত পণ্য ও কাঁচামালবাহী যানবাহনের শব্দদুষণে জনজীবন আক্রান্ত হবে অথচ এখানের বেকার লোকজনের মিলকারখানায় যোগ্যতানুযায়ী চাকরি দেয়া হবে না- তা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। এ ব্যাপারে যুবসমাজকে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলতে হবে।

 

লেখক- প্রধানসম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী।

 

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি