ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

সুখী পরিবার গঠনে

প্রকাশিত : ১৮:৪১, ৩ মে ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

পরিবার হল সমাজ তথা দেশ জাতি গঠনের প্রধান সূতিকাগার। অনুকূল ও প্রেমময় পারিবারিক পরিবেশ মেধার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাফল্যকে তরান্বিত করে, মনকে প্রশান্তি ও আনন্দে পরিপূর্ণ করে তোলে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সর্ম্পক যত গভীর, মমতাপূর্ণ, পারস্পরিক আচার-আচরণে যত ইতিবাচক, সুশৃঙ্খলও সুপরিকল্পিত হবে জীবনে তত সুখ, পরিতৃপ্তি ও সার্থকতা আসবে। সুখী পরিবারের ভিত্তি হচ্ছে ভালোবাসা, মমতা, শ্রদ্ধা, শৃঙ্খলা ও আত্মিক একাত্মতা। সব সময় মনে রাখতে হবে, পরিবারে নারী ও পুরুষ একে অপরের পরিপুরক। এই পরিপুরক একাত্মতাই সুখ সমৃদ্ধির ভিত্তি। তাই পরিবারের সদস্যদের পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস, দৃস্টিভঙ্গি, অভ্যাস ও আচরণে যত প্রো- একটিভ ও সুশৃঙ্খল হবে ততই পরিপুরক একাত্মতা সৃষ্টি হবে, জীবনে আসবে স্বর্গীয় প্রশান্তি।

সফল পরিবার গঠনে নারী ও পুরুষ উভয়ের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে, আচরণে, সন্তান পালনে, সামাজিক ক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে, বন্ধুত্বসহ নানা ক্ষেত্রে করণীয়সমূহ।

ব্যক্তি জীবনে-
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ/ থ্যাংকস গড/ হরি ওম/ প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ। জীবনে কী নেই তা নিয়ে না ভেবে কী আছে তা নিয়ে ভাবুন। স্রষ্টায় অবিচল বিশ্বাস ও আস্থা রাখুন। নিয়মিত অবশ্যিক ইবাদত/ উপাসনা করুন। সব ব্যাপারে সময় ও নিয়মানুবর্তী হোন। পরিকল্পিতভাবে সব কাজ করুন। শুদ্ধ ও সুন্দর ভাষায় কথা বলুন। পরচর্চা ও গীবত করবেন না। মিথ্যা বর্জনে সচেষ্ট থাকুন। নিয়মিত আত্মপর্যালোচনা করুন।

আচরণে-
সব সময় প্রো-একটিভ থাকুন ও হাসিমুখে কথা বলুন। পরিবারের মধ্যে সালাম চর্চা করুন। রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন। কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করুন। নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। রাগ ও ক্রোধের বশে কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। বিতর্ক ও ঝগড়া কৌশলে পরিহার করুন। আবেগ প্রকাশে কুশলী হোন। কর্মচারী ও গৃহকর্মীর সঙ্গে মানবিক আচরণ করুন। কাউকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও ঠকানোর চেষ্টা করবেন না। কারো প্রতি ক্ষোভ ও ঈর্ষা পোষণ করবেন না। স্বজ্ঞানে অন্যের ক্ষতি করবেন না। জীবনের সর্বক্ষেত্রে অপচয়কে পরিহার করুন। অহংকার ও লোক দেখানো আচরণ না করে আন্তরিক ও বিনয়ী হোন।

পারিবারিক জীবনে-
সব সময় ‘কী পেতে পারি’ নয়, কী দিতে পারি -এ চিন্তা করুন। পরস্পরকে বুঝতে চেষ্টা করুন। পরিবারিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সবার মতামতকে গুরুত্ব দিন। অন্যের কথায় কান দেবেন না। ভুল বোঝাবুঝি নিজেরাই আলাপ আলোচনা করে দূর করুন। তৃতীয় কাউকে এতে জড়াবেন না। একান্নবর্তী পরিবার হলে সবার সন্তানকেই একই নজরে দেখুন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিয়মিত আত্ম উন্নয়নমূলক আলোচনার আয়োজন করুন। পরিবার ও সমাজের চোখে দৃষ্টিকটু সম্পর্ক বর্জন করুন। গৃহকর্মীদেরকে নিজেদের সমমানের খাবার প্রদান করুন। পরিবারকে ধূমপান ও নেশামুক্ত রাখুন। পরস্পরের জন্য নিয়মিত দোয়া করুন।

সন্তান পালনে-
ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে সমান দৃষ্টিতে দেখুন। এক সন্তানকে অন্য সন্তানের সঙ্গে তুলনা করবেন না। সন্তানকে নেতিবাচক কথা বলে তিরস্কার করবেন না, ধমকে কথা বলবেন না। রাগের মাথায় অভিশাপ দেবেন না। অন্যের সামনে সন্তানকে বকবেন না, ভুল ধরিয়ে দেবেন না। সন্তানকে ছোট থেকেই কষ্টসহিষ্ণু ও সাবলম্বী করে গড়ে তুলুন। সন্তানকে সব সময় আদেশ না করে তার করণীয় কাজ যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিন। ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করুন। সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন। তাদের বন্ধুদের ব্যাপারে সজাগ থাকুন। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করুন ও নিজেদেরকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করুন। সারাক্ষণ শুধু পড়ার কথা না বলে খেলাধূলা, বেড়ানো, বই পড়া ইত্যাদি সুস্থ বিনোদনের সুযোগ করে দিন। সন্তান কোন কিছু চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে তা দেওয়ার অভ্যাস পরিহার করুন। তাদের অন্যায় আবদার পুরণ করবেন না। সন্তানের বয়স ১৮ হলে পারিবারিক পরামর্শে তাকে অংশীদার করুন। বিনোদনের নামে সন্তান অপসংস্কৃতি ও মাদকাশক্তির শিকার হচ্ছে কি-না, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। চাকরির পরিবর্তে সন্তানকে স্বাধীন পেশা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করুন। সন্তানকে জীবনের লক্ষ্য চাপিয়ে দেবেন না।

সামাজিক ক্ষেত্রে-
আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখুন। অসুস্থ বা সমস্যাগ্রস্ত বন্ধু, আত্মীয় ও প্রতিবেশীর খোঁজখবর নিন, দোয়া করুন। উৎসবে বন্ধু ও আত্মীয়দের সাধ্যমতো উপহার দিন। গৃহকর্মী ও নিরক্ষরদের অক্ষরজ্ঞান দানে সচেষ্ট হোন। নিজের মত তর্ক বা জোর করে অন্যের ওপর চাপানোর চেষ্টা করবেন না। অহেতুক অন্যের প্রতি সমালোচনামূলক মানসিকতা পরিহার করুন। সামাজিক অনুষ্ঠানে উপহার দেওয়া-নেওয়ার প্রথা বর্জন করুন। সামাজিক মেলামেশা, কথাবার্তা ও আচার-আচরণে স্থান কাল পাত্র বিবেচনা করুন। স্বার্থান্বেষী প্রতারক ও অন্যায়কারী পরিচিতদের সঙ্গে মানসিক সম্পর্ক ছেদ করুন।

কর্মক্ষেত্রে-
সবাইকে আগে সালাম দেওয়া ও হাত মেলানোয় অভ্যস্ত করে তুলুন, পেশাগত ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির রাখুন। পেশাগত দক্ষতা অর্জনে সর্বদা সচেষ্ট থাকুন। লক্ষ্য অনুসারে কর্মকৌশল নির্ধারণ করুন। বিনয়ী থাকুন। স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন। কোন অন্যায় কাজে সঙ্গী হবেন না। কর্মক্ষেত্রে নিজ দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতার পরিচয় দিন।

বন্ধুত্বে-
বন্ধুত্ব নির্বাচনে সতর্ক থাকুন। চিন্তা, মত ও লক্ষ্যে মিল রয়েছে এমন কারো সঙ্গেই বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন। ওয়াদা ও আমানতদারি রক্ষা করুন। প্রতিদানের আশা না করে সাধ্যমতে সহযোগিতা করুন। অন্যের প্ররোচনায় সিদ্ধান্ত নেবেন না, সম্পর্কচ্ছেদ করবেন না। ইর্ষান্বিত হবেন না। ভুল বোঝাবুঝি আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলুন। অতিরিক্ত বন্ধুবাৎসল দেখাতে গিয়ে নিজের জীবনের লক্ষ্যকে বিসর্জন দেবেন না।

খাবারদাবার-
পরিমিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারকে প্রাধান্য দিন। ফাস্ট ফুড, রেস্টুরেন্টের খাবার যত কম খাওয়া যায় তত ভালো। কৃত্রিম ও কোমল পানীয় এবং দুধ-চা পুরোপুরি বর্জন করুন। প্রার্থনা করে খাবার শুরু করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।


এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি