ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

সুদের হার এক মাসের মধ্যে সিঙ্গেল ডিজিটে আসবে: অর্থমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫৭, ১ এপ্রিল ২০১৮

আগামী এক মাসের মধ্যে ব্যাংক ঋণে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে জনতা ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মুসলিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম আজাদ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদে অর্থ (আমানত) নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দিচ্ছে। এটা ব্যাংক খাতের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ জায়গা থেকে বের হয়ে আসার জন্য ক্যাপিটাল মার্কেট সৃষ্টি করতে হবে। আমি ঠিক করেছি আগামী দুই এক মাসের মধ্যে ছোট একটি গ্রুপকে দায়িত্ব দেবো। যারা ক্যাপিটাল মার্কেট শক্তিশালী করবে বা ক্যাপিটাল মার্কেট গড়ে তুলবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের বছরে অনেকেই অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কথা বলেন। কিন্তু অস্থিতিশীল কিছু হওয়ার মতো আমি দেখি না। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো রয়েছে। দেশের চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে সাত শতাংশ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সুদের হার বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, কী কারণে সুদের হার বাড়লো তা নিয়ে আমি নিজেও সংশয়ে আছি। এখন ব্যাংকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারল্য সংকট বেড়ে গেছে। এ কারণে সুদের হার বাড়তে পারে। তবে মনে রাখতে হবে নির্বাচনের বছর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতের ৫০ শতাংশ সরকারি ব্যাংকে এবং বাকি ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা হবে।

তিনি বলেন, প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীর সেবা দেওয়ার মনোভাব থাকা উচিত। সরকারি চাকরি হুকুম দেওয়ার জন্য নয়, জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য। তিনি আরো বলেন, এবিআর পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাংকের দায়ের করা মামলার জট কমানোর সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায় বাড়বে। যারা ঋণখেলাপি তারাও খেলাপির বদনাম থেকে মুক্তি পাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির তার বক্তব্যে বলেন, ব্যাংকের উন্নতির জন্য বড় অর্থের লোন দিতে খুব একটা আগ্রহী না হলেও চলবে। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি লোন বেশি দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা কমিয়ে নিতে একটি অ্যাকশন প্লান নিতে হবে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। গর্ভন্যান্স ইস্যু আরও জোরদার করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহা বলেন, তথ্য প্রযুক্তিতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা যুগোপযোগী করতে সব ধরনের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এরমধ্যে সাইবার হুমকি থেকে রক্ষার জন্য ব্লকচেইনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে সক্ষম হব। গ্লোবাল ব্যাংকিং পরিস্থিতিতে জাল জালিয়াতি প্রতিরোধ এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসে অর্থায়নসহ অর্থ পাচার বন্ধে প্রযুক্তি নির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা তথা সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। নগদ অর্থ লেনদেনে নিরুৎসাহিত করতে ভবিষ্যতে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তি নির্ভর সেবা চালুর কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।

ব্যাংকের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুছ ছালাম আজাদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ২০১৭ সালে এক হাজার ৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জনতা ব্যাংক পরিচালন মুনাফা অর্জন করে এক হাজার ১৭১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১১২ শতাংশ। বিগত বছর এই অর্জন ছিল এক হাজার চার কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে পরিচালন মুনাফা ১৬৭ কোটি টাকা বেশি অর্জিত হয়। ২০১৮ সালের জন্য পরিচালন মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ২০০ কোটি টাকা নির্ধারিত হলেও আমরা এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ২০১৭ সালে ঋণ ও অগ্রিমের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৪৫ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা; যা লক্ষ্যমাত্রার ১০১ শতাংশ। ২০১৬ সালের তুলনায় ঋণ ও অগ্রিমের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ০৩ শতাংশ। ২০১৮ সালে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ ও অগ্রিমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়েও আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ আমাদের আমানতের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত ছিল ৬২ শতাংশ। ২০১৭ সালে এটিকে আমরা প্রায় ৭১ শতাংশে এ উন্নীত করতে পেরেছি।

সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের আওতায় জনতা ব্যাংক কর্তৃক ‘‘জনতা ব্যাংক গ্রিন কমিউনিকেশন (জেবিজিসি)’’ এর মাধ্যমে অনলাইনে কৃষি ঋণের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমটি অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইতোমধ্যে নাগরিক সেবায় ‘‘শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন’’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। বোর্ড অব ডিরেক্টরসের বলিষ্ঠ দিক নির্দেশনা অনুসরণ, ঋণ আদায়ে মাঠ পর্যায়ে তদারকির মাত্রা বৃদ্ধির ফলে জনতা ব্যাংক সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরেছে।

আরকে// এআর

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি