ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

সুনামগঞ্জেও আছে ’আইফেল টাওয়ার’

সাদ্দাম উদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত : ১৯:৫৮, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | আপডেট: ২১:০৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

আঁকাবাঁকা মেঠোপথ যে কাউকে নিয়ে যাবে এক অন্য জগতে। মনে হবে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে সেই সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্য দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে জাদুকাটা নদীসংলগ্ন বারিক্কা টিলায়। বারিক্কার টিলা স্থানীয়ভাবে ‘আইফেল টাওয়ার’ নামে খ্যাত।

সুনামগঞ্জের আইফেল টাওয়ার খ্যাত বারিক্কা টিলা থেকে ১২ মাস বিভিন্ন রূপবৈচিত্র্য উপভোগ করা যায়। এই টিলা বাংলাদেশের মানচিত্রে যেন স্বর্গের অংশ। টিলায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় একদিকে সবুজ পাহাড় অন্যদিকে হাওরে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। অনেক উঁচু এই টিলার ওপর দাঁড়ালে পাশের গ্রামগুলো সমতল ভূমির মতো মনে হয়। টিলার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে অপরূপা সীমান্ত নদী জাদুকাটা। এই নদীর পানি এমনই স্বচ্ছ, নিচের বালি স্পষ্ট দেখা যায়। যেন বালি ও পানি খেলা করছে।

বর্ষায় উত্তর দিকে মেঘালয় পাহাড়ে মেঘগুলো মনে হয় হাত বাড়ালেই ধরা যাবে। পাহাড়ের গায়ে মেঘের খেলা। মেঘ কখনো সবুজ পাহাড়কে ডেকে দিচ্ছে, আবার কখনো বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে তার আপন ভালোবাসায়। পাহাড় আর মেঘের সম্মিলনে এক অপরূপ শোভা। 

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে আপনি যখন বারিক্কা টিলায় উঠবেন তখন আপনার মনে হবে আপনি বাংলার আইফেল টাওয়ার থেকে পুরো তাহিরপুর উপজেলাকে দেখছেন। একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে গ্রামগুলো দাঁড়িয়ে আছে। সবকিছু তখন আপনার চোখের সামনে অপার্থিব হয়ে উঠবে।

বারিক্কা টিলায় গেলে পাবেন সীমান্ত পিলার। দেখতে পাবেন দুই দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা নদীতে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মব্যস্ত জীবন। নদী থেকে বালু-পাথর তোলার এক নয়নাভিরাম দৃশ্য।

বর্ষায় পাহাড়ি রূপবতী জাদুকাটার বুকে স্রোতধারা। আর হেমন্তে শুকিয়ে যাওয়া জাদুকাটার বুকজুড়ে ধুধু বালুচর। টিলায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত দেখে মনে হবে আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটা দিন, যা আপনাকে বারবার স্মৃতির পাতায় নিয়ে যাবে। 

কিভাবে যাবেন
বারিক্কা টিলা দেখতে যেতে হলে প্রথমে সুনামগঞ্জ যেতে হবে। প্রতিদিন ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ভাড়া লাগবে প্রায় ৭০০ টাকা, আর সুনামগঞ্জ পৌঁছাতে প্রায় ছয় ঘন্টা সময় লাগবে।

তারপর সুনামগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি কিংবা মোটরসাইকেল ভাড়া করে বারিক্কা টিলায় যাওয়া যায়। মোটরসাইকেল ভাড়া নিবে ২০০-২৫০ টাকার মত। এক মোটরসাইকেলে দুইজন উঠা যাবে। সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখতে বারিক্কা টিলায় উঠে পড়ুন। আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে।

কোথায় থাকবেন
বারিক্কার টিলা দেখতে আসা পর্যটকরা সাধারণত এখানে অবস্থান করেন না। এখানে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। তবুও প্রয়োজনে থাকতে হলে বারিক্কার টিলার কাছে বড়ছড়া বাজার গিয়ে থাকতে পারবেন। বড়ছড়া বাজারে থাকার জন্যে কয়েকটি মোটামুটি মানের আবাসিক হোটেল আছে। তবে রাতে থাকার জন্য সুনামগঞ্জে ফিরে আসাই সবচেয়ে ভাল হবে। সুনামগঞ্জে সর্বনিম্ন ২০০ টাকার মধ্যেও এটাস্ট বাথরুম সহ ১ বেডের হোটেল রুম পাওয়া যাবে। 

কোথায় খাবেন
বারিক টিলা পাহাড় পাশে জাদুকাটা নদীর ও লাউড়ের গড়। লাউড়ের গড় বাজারে মোটামুটি মানের দেশিয় খাবার পাবেন। বারিক টিলার নিচে নাস্তা করার ছোট হোটেল আছে। এছাড়া প্রয়োজন হলে সাথে কিছু শুকনো খাবার রাখতে পারেন। ভালো খাবার খেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সুনামগঞ্জ শহরে ফিরে এসেই খেতে হবে।

তবে সবচেয়ে ভাল হয় টাঙ্গুয়ার হাওর দেখে টেকেরঘাট গিয়ে সেখান থেকে নীলাদ্রী লেক ও বারেক টিলা দেখে শিমুল বাগান ও যাদুকাটা নদী দেখে সুনামগঞ্জ ফিরে আসতে পারেন। এতে যেমন খরচ সাশ্রয় হবে তেমনি অল্প সময়ে এক সাথে ভ্রমণ করে ফেলতে পারবেন পছন্দের জায়গাগুলো। 

ভ্রমণ টিপস

  • দিনে দিনে ঘুরে আসতে চাইলে সুনামগঞ্জ থেকে সকাল সকাল ভ্রমন শুরু করুন।
  • থাকতে চাইলে বড়ছড়া চলে যাবেন। ভাড়ার ক্ষেত্রে দরদাম করুন ভালো মতো।
  • খরচ কমাতে চাইলে অফ সিজনে ভ্রমণ করুন।
  • নদী থেকে পাথর ও বালি উত্তোলনের ফলে অনেক গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়, পানিতে নামলে সাবধান থাকবেন।
  • শুকনো কালে নদীতে হাটু পানি থাকে। কিন্তু বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে অনেক স্রোত থাকে।
  • বাংলাদেশ বর্ডার অতিক্রম করবেন না।
  • স্থানীয় মানুষদের সাথে ভালো আচরণ করুন।

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি