ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

সুফি সাধক শামস-ই তাবরিজি ও প্রেম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৪৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

শামস-ই তাবরিজি বা শামস আল দিন মোহাম্মদ ছিলেন একজন ইরানি সুফি সাধক। তিনি বিখ্যাত মুসলিম জ্ঞান তাপস জালালউদ্দিন রুমির শিক্ষক ছিলেন।

হজরত শামস তাবরিজি সম্পর্কে আজও বিশ্ব ইতিহাসে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তেমন পাওয়া যায় না। জালালউদ্দিন রুমির লেখার মাধ্যমে শামস-ই তাবরিজির নাম বিশ্বব্যাপী আমরা জানতে পারি।

জালালউদ্দিন রুমি যখন তুরস্কের কোনিয়ায় মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন তখন বিশ্বব্যাপী তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আধ্যাত্মিক চর্চা করতেন। একদিন পথে এক জীর্ণ পোশাকধারী ব্যক্তির সাক্ষাৎ পান। সে ব্যক্তির প্রশ্ন ছিল- হে রুমি, ইমানের সংজ্ঞা কী? হজরত রুমি নানাভাবে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন ইমানের সংজ্ঞা। কিন্তু সেই জীর্ণ পোশাকধারী ব্যক্তি তার উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তিনি বললেন, রুমি, ইমানের সংজ্ঞা হচ্ছে, নিজের থেকে নিজেকে পৃথক করে ফেলা। তার উত্তর শুনে হজরত রুমি তার অনুগত হয়ে গেলেন। তিনিই হজরত শামস-ই তাবরিজি। যার সঙ্গে রুমি গভীর ধ্যান সাধনায় লিপ্ত থাকতেন।

রুমির সঙ্গে যখন শামস তাবরিজির পরিচয় হয় তখন তাবরিজির বয়স ষাটের কোঠায়। তাবরিজি একধরনের সমাজ-বিরোধী এবং জেদি মানুষ ছিলেন। তবে বিস্ময়করভাবে তাবরিজি ছিলেন খুবই শক্তিশালী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ। তিনি সবসময় একজন পরম জ্ঞানী শিষ্য খুঁজতেন। তার একজন যোগ্য উত্তরসূরি প্রয়োজন ছিল। শেষ পর্যন্ত রুমির মধ্যে সেই গুণ খুঁজে পা্ওয়ার পর বোঝা গেল আসলেই তাবরিজি কি খুঁজছিলেন।

অনেকেই বিশ্বাস করেন, হজরত শামস-ই তাবরিজির সঙ্গে খাজা কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকির আধ্যাত্মিক সম্পর্ক ছিল। জালালউদ্দিন রুমি যখন হযরত শামস-ই তাবরিজির সংস্পর্শে সংসারের প্রতি মনোসংযোগ হারিয়ে ফেললেন, তখন সবাই পরিব্রাজক হযরত শামস-ই তাবরিজিকে দায়ী করেন।

তাবরিজির প্রতি অতল ভালবাসা এবং নিজের এলাকায় আশ্রয় দেওয়ায় ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়েন রুমি। এমন সংকটে শেষ পর্যন্ত  তাবরিজিকে কোনিয়ায় ফিরে যেতে হয়েছিল।

তবে প্রথাগত সংস্কৃতির ভয়ে শিষ্য রুমি মোটেই দমেননি। কিছুটা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন মাত্র। সামাজিক সীমাবদ্ধতার তুলনায় রুমি তার শক্তির ব্যাপারে পুরোপুরি সচতেন ছিলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, তাবরিজিকে তার পরিবারে তার সমাজে যে করেই হোক স্থান দেবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রুমি তার মেয়ে কিমিয়াকে শামস তাবরিজির সঙ্গে বিয়ে দেন।

তখন কিমিয়ার বয়স মাত্র পনেরো। কথিত আছে, কিমিয়ার সঙ্গে বিয়ের পরই  তাবরিজি জীবনে প্রথম প্রেমে পড়েন। এতে রুমির প্রতি তাবরিজি আরও বিস্মিত, মুগ্ধ হন। পরিস্থিতির শিকার হয়ে শিষ্যের কন্যাকে বিয়ের ঘটনা তার জীবনে এক স্মরণীয় মুহূর্ত। বিয়ের মাত্র কয়েক মাস পর কিমিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। স্ত্রী বিয়োগের বিষয়টি গভীর আঘাত হানে তার জীবনে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তাবরিজির সঙ্গে রুমির সম্পর্কের প্রায় ছেদ ঘটে।

কথিত আছে, কিমিয়ার মৃত্যুর পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাবরিজি অদৃশ্য হন। এভাবে তাবরিজি রহস্যময় হয়ে গেলেন। হারিয়ে গেলেন নাকি কোনও পক্ষ তাকে গুপ্ত-হত্যার মাধ্যমে দুনিয়া থেকে অদৃশ্য করে ফেলেছিল- এমন গুঞ্জন ওই সময় বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

অনেক ইতিহাসবিদের মতে, কয়েকজন হিংস্র মানুষ হজরত শামস-ই তাবরিজিকে হত্যা করেন। জালালউদ্দিন রুমি (রহ.) তার বিখ্যাত পুস্তক দিওয়ানে শামসে তাবরেজ তার গুরুকে হারানোর যন্ত্রণার কথা বর্ণনা করেন। এই বইটি পাঠ করলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন গুরু-শিষ্যের মধ্যে পবিত্র আধ্যাত্মিক বন্ধন ভেঙে গেলে একজন প্রেমিক শিষ্য কী যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকেন।

একই যন্ত্রণার কথা তিনি মালাকাতে শামসে তাবরেজ পুস্তকে বর্ণনা করেছেন। হজরত শামস-ই তাবরিজি সম্পর্কে বলা হয়, তিনি ছিলেন সেই সময়ের আধ্যাত্মিক জগতের সম্রাট। তিনি নির্জনতা প্রিয় ছিলেন এবং একা ছিলেন। পরিব্রাজক ছিলেন বলে তাকে পারিন্দা বলা হতো। তিনি এক জায়গায় স্থির থাকতেন না।

যতদূর জানা যায়, শামস তাবরিজি ১১৮৫ সালে ইরানে জন্মেছিলেন।১২৪৮ সালে ইরানের খৈয় এলাকায় তার মৃত্যু হয়। তার সমাধি রয়েছে তুরস্কের তাবরেজ নগরীতে।

একে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি