ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

সুস্থ বার্ধক্যের প্রস্তুতি শুরু হোক শৈশবেই : ডা. দেবব্রত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫৬, ৫ জুলাই ২০১৮

সাধারণত ৪০ এর পর থেকেই নানা রকম রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে থাকে মানুষ। এর কারণ হলো একটা সময় পর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই শৈশব থেকেই নজর দিলে শেষ জীবনেও সুস্থ, সচল থাকা সম্ভব। এজন্য দরকার সংযম ও সচেতনতার। এমনটিই মনে করেন ভারতের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। আনন্দবাজারকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এই মত দেন। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: বয়স বাড়লেই নানা শারীরিক সমস্যা শুরু হবে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বেশ কম বয়স থেকেই নানা শারীরিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে আজকাল। এটা কেন হচ্ছে?

উত্তর: শরীরের সমস্যা নানা কারণে হতে পারে। তবে সবার আগে খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিতে হবে। আরও সহজ কথায় বললে খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা চাই। পরিমিত আহার করতে হবে। বেশি খেলেই কিন্তু সমস্যা। কম বয়স থেকেই খাদ্যাভ্যাসে সংযম আনতে হবে। এর মধ্যেই আগামী দিনের সুস্থতার বীজ লুকিয়ে আছে। শুরুটা কিন্তু শৈশবেই করা যায়।

প্রশ্ন: আধুনিক জীবনযাপন প্রণালী কোনো সমস্যা ডেকে আনছে কি?

উত্তর: নিশ্চয়ই আনছে। আগে কত কাজ পায়ে হেঁটে সারতে হত! সারা দিনে কাজের প্রয়োজনেই কত হাঁটাচলা হত। এখন আর সেদিন নেই। যাঁরা চাষবাস করেন, তাঁরা না হয় মাঠেঘাটে কাজ করছেন। কিন্তু আমাদের অধিকাংশকেই চেয়ারে বসে বা ল্যাপটপে কাজ করতে হয়। ফলে শিরদাঁড়ায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে। স্পন্ডিলোসিস হচ্ছে।

বিশেষ করে মেয়েরা ভুগছে। তাই নিয়মিত হাঁটা এবং কিছু যোগব্যায়াম করা দরকার। তা হলে শরীরের সহনশীলতা বাড়বে। সমস্যা কমবে। মনে রাখা দরকার বেশি বয়সে শরীরকে সচল রাখতে গেলে প্রথম থেকেই হাঁটাচলা ও ব্যায়ামের দিকে নজর দিতে হবে। আজকের পরিশ্রম আগামী দিনে সুস্থতার ভিত গড়ে দেবে।

প্রশ্ন: অনেকেই আছেন, ৫০ বছর পর্যন্ত সুস্থ রয়েছেন। কোনো রোগবালাই নেই। কিন্তু বয়স হচ্ছে বলে ভাবতে শুরু করেছেন। আগামী দিনে তাঁরা কী ভাবে শরীরকে ঠিক রাখবেন?

 

উত্তর: কিছুই না। পরিমিত আহার করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে হবে না। তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সব থেকে ভাল যদি এক জন প্রশিক্ষক রেখে তাঁর তত্ত্বাবধানে ব্যায়াম করা যায়। তিনি বলে দেবেন, কোন ব্যায়াম কতক্ষণ বা কত বার করে করা দরকার।

আমাদের অন্যতম সমস্যা, ব্যালান্সড ডায়েট সম্বন্ধে অধিকাংশের কোনো সম্যক ধারণা নেই। যত রকমের ফাস্ট ফুড আছে সবগুলিতেই শর্করা বেশি থাকে। তাই সবার আগে শর্করা বেশি আছে এমন খাবার বর্জন করতে হবে। জানতে হবে, ভাত খেলে সুগার বাড়তে পারে, আবার রুটি খেলেও। কিন্তু ভাতে যত ক্যালোরি, রুটিতে তার থেকে কম। আবার শশা খেলে আরও কম। তাই কী খেতে হবে তা ডায়েটিসিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে খেলে ভাল হয়।

প্রশ্ন: আজকাল অনেকেই সত্তর বছরের বেশি বাঁচেন। সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকতে তাঁদের করণীয় কী?

উত্তর: আগে মানুষ বেশি বয়সে কুঁজো হয়ে যেত। এখন অনেকে সচেতন হয়েছেন। এই বয়সে হাড়ের ক্ষয় হয়। কাজ না করলেও হাড়ের ক্ষয় হতে পারে। তাই ৫০বছরের পরে ক্যালসিয়াম সাবস্টিটিউট, ভিটামিন-ই নেওয়া দরকার। নিয়মিত স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ, উপযুক্ত খাবারের প্রয়োজন। বয়স বাড়লে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। ফলে, অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তবে সবই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করবেন।

প্রশ্ন: দীর্ঘায়ুদের কি বিশেষ কোনো সমস্যায় পড়তে হয়?

উত্তর: তেমন কিছু নয়। কোনও ব্যক্তি দীর্ঘদিন নীরোগ অবস্থায় বেঁচে আছেন। খোঁজ নিলে দেখবেন তাঁর পরিবারের অনেকেই সুস্থ ভাবে দীর্ঘদিন বেঁচে ছিলেন। মানে ব্যাপারটি কিছুটা বংশগত। তবে সব সময়ে আগে থেকে সচেতন থাকতে হবে।  আর শুরুটা ছোট বয়স থেকেই করতে হবে। তবেই বৃদ্ধ বয়সে সুস্থ

থাকা যায়।

প্রশ্ন: বাঙালি ভাত না খেয়ে থাকতে পারে না। এর জন্য বেশি বয়সে কোনও সমস্যায় পড়তে হয় কি?

উত্তর: বাঙালির ভাত না খেলে চলে না এটা কিন্তু ঠিক নয়। বাইরে গেলেই দেখা যায়, সেই বাঙালিই তিন বেলা রুটি খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে। শরীর সচল রাখতে গেলে ভাত কম খাওয়াই ভাল। সারা দিন কাজ করতে গেলে ভাত না খাওয়াই ভাল। বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) ২৪-২৫ আটকে রাখতে হবে।

প্রশ্ন: বয়স হলে আর কী সমস্যা হয়?

উত্তর: বয়স হলে সুগার বাড়ে। কারণ, কাজ কম হয়। তা ছাড়া শরীরে ক্যালসিয়াম কমে যায়। হরমোনের প্রভাবের হেরফের ঘটে। থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। কিডনির রোগ হয়। দু’টি কথা মনে রাখা দরকার। প্রথমত, বেশি করে জল খেতে হবে। দ্বিতীয়ত, ফল খাওয়া বাড়াতে হবে।

প্রশ্ন: মানুষ কী ভাবে সচেতন হবে?

উত্তর: প্রতিটি সমাজে এক-দু’জনকে ভার নিতে হবে। মানুষকে শিক্ষার আলো দেখাতে হবে। শরীর ও জীবনযাপন সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলতে হবে। চিনে এমন ব্যবস্থা আছে। পড়াশোনা না করলে স্বাস্থ্য সচেতনতা আসবে না। সরকারের উদ্যোগের অভাব নেই। সরকারি হাসপাতাল আছে। সেখানে চিকিৎসকেরা আছেন। মনে প্রশ্ন এলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

সূত্র : আনন্দবাজার।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি