সোমবার থেকে রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়ার দাবি
প্রকাশিত : ২২:৫৭, ২২ মে ২০২১ | আপডেট: ২২:৫৯, ২২ মে ২০২১
করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের হোটেল-রেস্তোরায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি।
সংগঠনটির নেতারা বলেন, করোনায় সারাদেশে প্রায় ৩০ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। অর্ধেক মালিকানা বদল হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসিয়ে গ্রাহকদের খাবার খাওয়াতে এবং বিক্রি করতে চান মালিকরা।
করোনা রোধে বিধিনিষেধ থাকুক বা না থাকুক সোমবার থেকে এই অনুমতি দাবি করেন তারা। আর সেটা না করলে থালা-বাটি নিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
চলমান বিধিনিষেধ শেষের এক দিন আগে শনিবার (২২ মে) সংগঠনের পল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
এসময় মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি, মহাসচিব ইমরান হাসান, উপদেষ্টা খন্দকার রুহুল আমিন, প্রথম যুগ্ন মহাসচিব ফিরোজ আলম সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ আন্দালিব ও কোষাধ্যক্ষ তৌফিক এলাহীসহ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান বিধি নিষেধের মেয়াদ ২৩ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে গত ১৬ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ।
এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, খাবারের দোকান ও হোটেল-রোস্তোরাঁগুলো কেবল খাদ্য বিক্রি ও সরবরাহ করতে পারবে। এই বিক্রির ক্ষেত্রে অনলাইন কিম্বা সরাসরি কিনে নিয়ে আসার সুযোগ পেয়েছেন গ্রাহকরা। রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আগের মতো স্বাভাবিকভাবে হোটেল খোলা রেখে সেখানে বসে ক্রেতাদের খাওয়ার সুযোগ চান মালিকরা। তারা শ্রমিকদের প্রণোদনা সুবিধা এবং মালিকদের এসএমই খাত থেকে স্বল্প সুদে ঋণ চান। একই সঙ্গে ঘর ভাড়া, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুত বিল মওকুফসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছেন রেস্তোরাঁ মালিকরা।
তারা বলেন, দেশব্যাপি হোটেল রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকানে ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমান ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় অনলাইনে বেচাকেনা হয়েছে। তা খুবই সামান্য। একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ খাত ধ্বংসের পায়তারা করছে। হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন মরার আগে বাঁচার জন্য খাত রক্ষার্থে খুলে দেওয়ার দবি জানান তারা।
লিখিত বক্তব্যে মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, সরকার কর্তৃক ঘোষিত নির্দেশনা মেনে, স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারির মাধ্যমে ব্যবসাকে সীমিত রাখা হয়েছে। এ ব্যবসা মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ। সংগঠনের নেতারা মনে করেন, বর্তমানে অনলাইনে সরবরাহ সুযোগ দিয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার ঘোষণাটি দূরভীসন্ধি মূলক। এতে দেশ-বিদেশি স্বার্থেন্বেষী মহলের হাত রয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সব বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও উপজেলা শহর মিলে হোটেল-রেস্তোরাঁর সংখ্যা ৬০ হাজার। এতে শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ৩০ লাখ। সব মিলিয়ে রেস্তোরাঁ খাতে প্রায় ২ কোটি মানুষ নির্ভরশীল। এতগুলো মানুষ এখন বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। করোনায় যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারমধ্যে হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
মহাসচিব বলেন, দেশের ১২টি সংস্থা থেকে অনুমতি নিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। তবে এ খাতকে শিল্প ঘোষণা না করায় কোনো সংস্থা থেকে সহায়তা বা সুযোগ-সুবিধা পাননি। শিল্প, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নাকি অন্য কোন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে এ খাত। তা সুনির্দিষ্ট নয়। এ কারণে প্রণোদনার সুবিধা তো দূরের কথা দুর্যোগ পরিস্থিতিতে করোনাকালে ১ কেজি চালও সহায়তা পাননি কোনো মালিক বা শ্রমিকরা।
সভাপতি ওসমান গনি বলেন, করোনাকালীন মহামারিতেও ক্ষতিগ্রস্থ এ খাত থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নেওয়ার জন্য জোর-জুলুম চলছে। এ ভ্যাটের হার সম্পহৃর্ণ অনৈতিক। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের থালাবাটি নিয়ে রা¯øায় নামা ছাড়া উপায় নেই। আমাদের দাবি না মানলে সারাদেশে আমরা অবস্থান কর্মসহৃচি পালন করব।
সংগঠনের দাবিতে জানানো হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের মতো হোটেল খোলা রাখা সম্ভব না হলে ৫০ শতাংশ আসনে বসিয়ে চালু করতে চান ব্যবসায়ীরা। এছাড়া হোটেল রেস্তোরাঁ খাতে কর্মরদের সম্মুখযোদ্ধা ঘোষণা দিয়ে দ্রুত করোনার টিকা দেওয়ার নির্দেশনা চান। ভ্যাট-ট্যাক্স কর্মকর্তাদের অসহনীয় আচরণ বন্ধসহ বর্তমান বিধি নিষেধগুলো তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক ও রেস্তোরাঁয় মালিক সমিতির উপদেষ্টা খন্দকার রুহুল আমিন বলেন, রেস্তোরাঁয় খাতে দুর্দিন যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, করোনার শুরু থেকে রেস্তোরাঁয় বন্ধ থাকার পরেও প্রতি মাসে গড়ে ১ থেকে ২ লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হয়েছে। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল ও শ্রমিকের মজুরি ব্যয় রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন শ্রমিক ছাটাই হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই খাতে প্রণোদনার সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত কোন রেস্তোরাঁ মালিক এই সুবিধা পাননি। এ খাতের সুরক্ষা প্রণোদনা সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ফিরোজ আলম সুমন বলেন, অনলাইন বিক্রিতে ২৫ শতাংশ সরবরাহ চার্জ দিতে হয়। বিশ্বের কোন দেশে এত বেশি চার্জ নেই। ভারতে মাত্র ১০ শতাংশ চার্জ। উল্টো ফুড পান্ডা এখন ৩৫ শতাংশ ডেলিভারি চার্জ ছাড়া চুক্তি করছে না। ফলে অনলাইন নির্ভর এ ব্যবসা চালানো সম্ভব হবে না। এ জন্য রেস্তোরাঁ খুলে সেখানে বসে গ্রাহকদের খাওয়ানোর সুযোগ চান তারা।
কেআই//
আরও পড়ুন