সৌরশক্তি চালিত নৌযান: এখনো বাকি অনেকটা পথ!
প্রকাশিত : ১৭:০৬, ২০ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৯:৫০, ২০ মার্চ ২০২০
সৌরশক্তি চালিত নৌযান- সংগৃহীত
বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেনি পরীক্ষামূলকভাবে স্রেডার তৈরি সৌরশক্তিচালিত নৌযান। প্রয়োজনীয় জ্বালানি চাহিদা সৌরশক্তির মাধ্যমে মেটানো সম্ভব না হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণ বলে জানিয়েছে এ সংস্থা। এ জন্য নতুন প্রযুক্তিতে কার্যকর সৌরশক্তি চালিত নৌযান তৈরির কথা ভাবছে স্রেডা।
পরিবেশ দূষণ কমানোর পাশাপাশি আমদানিকৃত জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে ২০১৭ সালে ইউএনডিপরি সহায়তায় সোলার পিভি চালিত নৌযান তৈরির উদ্যোগ নেয় স্রেডা। সোলার ই টেকনোলজি বাংলাদেশ লিঃ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পাচটি বোটই স্রেডার কাছে হস্তান্তর করে। সে সময় বেশ আলোড়ন তুলেছিল নতুন ধরণের এইসব পরিবেশ বান্ধব নৌযান।
কিন্তু এক বছর পরীক্ষামূলকভাবে চলার পর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত নৌযানটির ফলাফল এ প্রকল্প নিয়ে স্রেডাকে নতুন করে ভাবাতে বাধ্য করেছে।
পাঁচটি নৌযানের মধ্যে শুধুমাত্র রাজধানীর হাতিরঝিলে দেয়া নৌযানটিই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এখানে প্রতিটি নৌযান ঘণ্টা প্রতি ১৫ কিলোমিটার গতিতে চলে। কিন্তু সৌর শক্তি চালিত নৌযানটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টা প্রতি ১০ কিলোমিটার। ফলে বাড়তি গতি তোলায় প্রয়োজনীয় জ্বালানি চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ মেটাতে পেরেছে এর সৌর প্যানেলগুলো।
তবে চট্টগ্রামের ফয়েস লেকে যে তিনটি নৌযান দেয়া হয়েছিল সেগুলো জ্বালানি চাহিদার সবটাই সৌর প্যানেল থেকে মেটাতে পেরেছে। কারণ পর্যটনের কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় এগুলোর বাড়তি গতির প্রয়োজন হয়নি।
অন্যদিকে সোনারগাঁওয়ে দেয়া অন্য নৌযানটি নাব্যতা সংকটের কারণে চালানোই সম্ভব হয়নি।
তবে এখনি সৌরশক্তি চালিত নৌযান প্রকল্প সম্পূর্ন ব্যর্থ বলতে রাজি নন স্রেডার সদস্য সালিমা জাহান।
তিনি বলেন, নৌযানগুলো স্টিলদিয়ে তৈরির কারণে ওজন বেশি ছিল, এখন আমরা ফাইবার দিয়ে এ ধরণের নৌযান তৈরি করবো। ওজন কমে গেলে তার জ্বালানি চাহিদাও কমে যাবে।
তারপরও সম্পূর্ন জ্বালানি চাহিদা সৌর শক্তি থেকে মেটানো সম্ভব না হলে, সে ক্ষেত্রে চার্জিং এর ব্যবস্থা বা ডুয়েল ফুয়েল থাকবে। অর্ধেক জ্বালানি ও যদি সৌর শক্তির মধ্যে সাশ্রয় করা সম্ভব হয় সেটি বা কম কী? যোগ করেন তিনি।
স্রেডার গবেষণা বলছে, দেশে বর্তমানে পাঁচ লাখ নৌযান আছে যার সবই ডিজেল ইঞ্জিন চালিত। এসব নৌযান সম্পূর্ণ রূপে সৌর শক্তিতে চালানো সম্ভব হলে প্রতিটি সোলার বোট বছরে গড়ে ছয় টন কার্বনডাইক্সাইড নির্গমন কমাতে পারবে।
এ ধরণের নৌযানকে জনপ্রিয় করতে আর্থায়নও একটি বড় সমস্যা। স্রেডার তৈরি বড় বাণিজ্যিক মডেলের বোটগুলোতে খরচ হয়েছে ৬ লাখ ৮০ হাজার থেকে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আর ছোট বোটগুলোর ক্ষেত্রে এ ব্যয়, ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা।
বাণিজ্যিকভাবে নির্মাণ করলে খরচ আরও কিছুটা কমবে কিন্তু তারপরও তা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের লাভজনক হবে না, জানান স্রেডার এ প্রকল্পের পারিচালক তায়বুর রহমান।
এ জন্য এ ধরণের বোট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ অর্থ অনুদান ৪০ শতাংশ অর্থ ছয় শতাংশ সুদে ঋণ এবং বাকি ২০ শতাংশ অর্থ ইক্যুইটি হিসাবে বিনিয়োগের সুযোগ রাখার সুপারিশ করেছে স্রেডা, যোগ করেন তিনি।
তবে সৌর প্রযুক্তির ব্যয় দিনকে দিন কমে আসার পাশাপাশি এর উৎপাদনশীলতাও বাড়ছে, সে ক্ষেত্রে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা নতুন প্রযুক্তি পাব, জানান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সোলার ই টেকনোলজির পরিচালক আহমেদুল কবির।
তখন প্রচলিত ডিজেল চালিত নৌযানের সাথে সোলার বোট প্রতিযোগিতা করতে পারবে এবং বাণিজ্যিকভাবেও লাভজনক হবে, যোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন