‘স্থিতিশীল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়তা করেছে’
প্রকাশিত : ২২:৪১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বৃদ্ধির হার দারিদ্রতা এবং সামাজিক বৈষম্য কমাতে সহায়তা করেছে।
আজ সোমবার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত আইসিসি বাংলাদেশের ২৫তম বার্ষিক কাউন্সিলে নির্বাহী বোর্ডের প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান একথা বলেছেন।
আইএলও-র প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এখন মহামারী ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে লড়াই করছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ঝুঁকিগুলি কেবল স্বল্প মেয়াদে সীমাবদ্ধ নয়, শ্রম ও মূলধন উভয় দিক থেকে ভবিষ্যতের বড় উৎপাদনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অর্থনৈতিক সংকট করপোরেট এবং গৃহস্থালি ঋণ খেলাপির মাধ্যমে আর্থিক সংকটে রূপান্তরিত হতে পারে বলে আইসিসি বাংলাদেশের প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির মতো বাংলাদেশকে কাঙ্খিত জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি মূল সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে: যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, টেকসই রফতানি, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং রেমিটেন্স প্রবাহ। বাংলাদেশে প্রায় ৭.৮ মিলিয়ন এন্টারপ্রাইজেজ রয়েছে, যার ৯০ শতাংশই মাইক্রো এন্টারপ্রাইজেজ। জিডিপিতে এই মাইক্রো এন্টারপ্রাইজগুলোর অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ যার পরিমাণ প্রায় ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে এই মাইক্রো এন্টারপ্রাইজগুলো চাপের মধ্যে পড়েছে। উপরন্তু, অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রচন্ড ধাক্কা খেয়েছে। এসময় আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান উল্লেখ করেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প খাতে দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৩০ শতাংশ সম্পৃক্ত।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ২০২৪ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হলে প্রধান রপ্তানী দেশগুলোতে বাণিজ্য অগ্রাধিকারসহ অন্যান্য অগ্রাধিকার হারাবে। সুতরাং বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রধান রপ্তানী দেশগুলোর সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির উপর জোর দিতে হবে।
আইসিসিবির নির্বাহী পর্ষদের প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ধাপ ইতিমধ্যেই ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে, যা অর্থনৈতিক মন্দাকে আরও দীর্ঘায়ীত করবে। অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির মতো বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং কাঙ্খিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে, যার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, টেকসই রফতানি, ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পর রক্ষণাবেক্ষণ, বৈদেশিক মূদ্রার সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য আটকে থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের তাদের কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানো অন্যতম। এছাড়াও, টেকসই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং সরবরাহ চেইনকে কার্যকরী ও ব্যায়সাশ্রয়ী রাখতে এমএসএমইগুলি (ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ) সংরক্ষণ করা খুবই জরুরী।
করোনা মহামারীটি একটি বিশাল অর্থনৈতিক সংকোচনের সৃষ্টি করেছে, যার ফলে বিশ্বের বহু অঞ্চলে আর্থিক সংকট দেখা দেবে, কারণ নন-পারফর্মিং কর্পোরেট ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো ‘দেউলিয়া’ হয়ে যেতে পারে। উন্নয়নশীল বিশ্বে সভরিন ডিফল্টস বেড়ে যেতে পারে। এই সঙ্কট সর্বশেষ সঙ্কটের মতোই পথ অনুসরণ করবে এবং সম্পদশালী দেশগুলোর চেয়ে নিম্ন-আয়ের দেশগুলিকে এবং নি¤œ আয়ের পরিবারগুলিকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ডব্লিউএইচও, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক গ্রুপ, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে জি-২০ দেশসমূহ মহামারীকে কাটিয়ে উঠতে সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স (আইসিসি) এ স্টেকহোল্ডারদের অনেকের সাথেই বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা হিসাবে সহযোগিতা করছে।
আইসিসিবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রচারের অংশ হিসাবে আইসিসি হেডকোয়ার্টার সরকারগুলোকে এই মর্মে উদ্বুদ্ধকরণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে যাতে কওে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প এবং তাদের কর্মীদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে স্টিমুলাস এফোর্টগুলো প্রত্যক্ষ এবং তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত প্রকৃত অর্থনীতির দিকে প্রবাহিত হয়।
সরবরাহ চেইনের আন্ত:সীমান্ত প্রকৃতি অনুযায়ী, এ জাতীয় প্রণোদনা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই সমন্বয় রেখে করতে হবে। বিশ্বজুড়ে দেশগুলো কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে তাদের অর্থনীতিকে সহায়তা করার জন্য জরুরী ব্যবস্থাসহ অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতি উদ্দীপনা বাস্তবায়ন করছে। এই ক্ষেত্রে, আইসিসি সংকটকালীন সময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের সংরক্ষণের জন্য বেশকিছু কর প্রণোদনা প্রদান এবং নগদ প্রবাহের ধারা অক্ষুন্ন রাখার উপর জোর দিয়েছে।
কাউন্সিল ২০১৯ সালের অডিটর রিপোর্টকে অনুমোদন দিয়েছে এবং ২০২০ সালের জন্য অডিটর নিয়োগ দিয়েছে।
এসি
আরও পড়ুন