ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

‘স্নোড্রপ চুম্বনেরা’ কাব্য সাহিত্যের নব সংযোজন

প্রকাশিত : ২৩:১৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২৩:২৭, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মিলটন রহমান, কবি, কথাসাহিত্যিক এবং প্রাবন্ধিক। পেশাগত জীবনে একজন সাংবাদিক। বর্তমানে বসবাস করছেন লন্ডনে। দেশ থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও ভৌগোলিক দূরত্বকে তিনি দূরত্ব বলতে চান না। ইন্টারনেটের কারণে কোন দূরত্বই এখন আর দূরত্ব নয়। ইংরেজদের দেশে বসবাস করলেও তাঁর আত্মিক সম্পর্ক বাংলাসাহিত্যের সাথেই। তাঁর সঙ্গে কথা হয় একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে। অমর একুশে বইমেলা ও তাঁর রচনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মাহমুদুল হাসান

প্রশ্ন: বইমেলায় এলেন না কেনো?
মিলটন রহমান: দেখুন, বইমেলায় গ্রন্থের উপস্থিতি জরুরি, লেখকের নয়। তবে হ্যাঁ লেখক এবং পাঠকের সম্মিলনের প্রয়োজন রয়েছে। যে কোন রচনা পাঠের আগে তার রচয়িতা সম্পর্কে সম্যক ধারাণা থাকলে পাঠকের পক্ষে পাঠোদ্ধার সহজ হয়। আগামীতে বইমেলায় থাকবো আশা করি। আমি পাঠকদের চেহারা থেকে নতুন উন্মাদনা অবিস্কারে বিশ্বাসী। ফলে পাঠকের কাছে থাকতেই পছন্দ করি।

প্রশ্ন: আপনার প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিলো ২০০২ সালে। দীর্ঘ বিরতির পর ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ। গল্প থেকে কবিতায়...
উত্তর: গল্প থেকে কবিতায় অবতীর্ণ হওয়ার মধ্যে কোন দোষ নেই। আমি লেখালেখির সূচনা করি গল্প দিয়ে। নব্বইয়ের দশকে আমি গল্পকার হিসেবেই নিজের অবস্থান চিহ্নিত করি। ২০০২ সালে প্রকাশিত হয় আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ব্রুটাস পর্ব এবং কর্তার শারীরিক অবনতি‘। সেই সময় কবিতা রচনার চেস্টা যে করি নি তা নয়। কিন্তু সে সময়ে হয়ে ওঠেনি।

২০০৭ সালে লন্ডনে আসার পর গল্পের পাশাপাশি কবিতা রচনার চেষ্টা অব্যহত রাখি। ২০০৮ সালের দিকে খেয়াল করলাম কবিতা আমাকে গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এতোদিন আমি যে প্রেম নিবেদন করে আসছিলাম তার উত্তর দিতে শুরু করেছে কবিতা। এই মুহুর্তটি আমার সাহিত্যজীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময়। সে সময় কিছু কবিতা ব্লগে পোস্ট করি। দেখি পাঠকরা গ্রহণ করছে আমার কবিতা। এই পাঠকরাই আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে আমার কবিতাকে বেঁচে থাকার প্রনোদনা যুগিয়েছে।

এদিকে ২০১০ সালে এসে আগামী প্রকাশনী আমার কাব্যগ্রন্থ ‘চূর্ণকাল‘ প্রকাশে ইচ্ছে পোষণ করে এবং প্রকাশ করে। সেই সাথে আমার গল্প নির্মাণের কাজও একসাথে করেছি। তারই ফসল ২০১৫ সালে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘নকশাপুরাণ‘। ওহে আপনি বলছিলেন দীর্ঘ বিরতির কথা-বিরতি কোথায়? আমিতো বিরাজমান ছিলাম আমার লেখালেখির ভেতর। বই প্রকাশিত না হলেইতো তাকে বিরতি বলা যাবে না। আর তাড়াহুড়ো করে বই প্রকাশতো একটি উন্মাদনা মাত্র। একটি গ্রন্থ কেবল প্রকাশ করলেইতো শেষ হয়ে যায় না। দেখতে হবে তার ভেতরে মশলা-পাতি কি রয়েছে। পাঠকের রুচিতে তা উপাদেয় হবে কিনা। এসব বিষয় লেখক হিসেবে ভাবতে হয়। গাদা গাদা বই প্রকাশ করার মধ্যে কোন মহত্ব নেই।

প্রশ্ন: আপনারতো প্রবন্ধগ্রন্থও রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে বলুন?
মিলটন রহমান: ঠিক বলেছেন, ‘কবি শহীদ কাদরী ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ আমার প্রথম এবং একমাত্র প্রবন্ধগ্রন্থ। এটি ২০১৭ সালে প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। ওই যে বলছিলাম, লেখালেখির শুরু থেকে আমার বসবাস গল্পের সাথে, সেই সাথে প্রবন্ধের সাথেও আমার বসবাস লেখালেখির সুচনা থেকে। মনে পড়ে নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় আমার কয়েকটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিলো। সে সময় সেখানে সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন শিশির দত্ত। তিনি আমাকে খুব উৎসাহ দিতেন। অবশ্য সে সময়ের কোন প্রবন্ধ আমার প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থে নেই। এখানে কিছু নির্বাচিত প্রবন্ধ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, টেড হিউজ, সিলভিয়া প্লাথ, সাটালান আলেক্সিয়ভিস, আবুল হাসান, হুমায়ূন আজাদ সংক্রান্ত প্রবন্ধ রয়েছে এ গ্রন্থে।

প্রশ্ন: বইমেলায় আপনার এবার কোন গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে?
মিলটন রহমান: এবার আগামী প্রকাশনী এনেছে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘স্নোড্রপ চুম্বনেরা’। এটি মূলত বিলেতে বসে রচিত কবিতাসম্ভার। তাই এর নামকরণেও ছাপ রয়েছে। আমি মনে করি এই কাব্যগ্রন্থটি বর্তমান সময়ের কাব্যধারায় ভিন্নচোখ তৈরী করবে। একাব্যের যে নিজস্ব একটি জগৎ রয়েছে কাব্যের যে ঝিমধরা ধ্যানি একটি মুহুর্ত রয়েছে, তার সাথে নতুন কাব্যভাষার উলম্ফনও রয়েছে এর মধ্যে। ফলে এ গ্রন্থটি বাংলা কাব্যসাহিত্যেও একটি অন্যতম সংযোজন বলে মনে করি।

প্রশ্ন: একুশে বইমেলার আয়োজন পাঠক এবং লেখকদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে বলে আপনি মনে করেন কি?
মিলটন রহমান: দেখুন ‘চাহিদা’ শব্দটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা হতে পারে। শিল্প-সাহিত্যে এটি যেভাবে ব্যবহৃত হয় তা কিন্তু বাজার অর্থনীতিতে ব্যবহৃত ‘চাহিদা’ থেকে ভিন্ন। ফলে সাহিত্যে একে ‘চাহিদা’ না বলে, বলা যেতে পারে ‘মেজাজ’। একটি উৎকৃষ্ট গ্রন্থ কিন্তু মানুষের মেজাজ তৈরী করে। আর মেজাজ তৈরী করতে পারা মানেই লেখকের চাহিদা পূরণ করা। বইমেলায় যে পরিমাণ গ্রন্থ প্রতি বছর প্রকাশিত হয়, তাতে তো পাঠকদের সেই মেজাজ তৈরী হবারই কথা এবং হচ্ছে বলে আমি মনে করি।

আর মেলা আয়োজনের বিষয়ে যদি বলেন,প্রথমেই বলবো সন্তোষজনক আয়োজন। পুরো মেলাকে ঘিরে প্রকাশক-লেখক-পাঠকদের মধ্যে যে প্রাণসঞ্চার হয় তা অভূতপূর্ব বলেই আমি মনে করি। তবে একুশে বইমেলাকে একটি আন্তর্জাতিক চেহারা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি। একে কেবল ঢাকা শহরে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। এর ডাক পৌঁছোতে হবে বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লেখক-প্রকাশকদের মেলায় অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। এতে করে বাংলাসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থসমুহের বিশ্ববাজার তৈরী হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। একইসঙ্গে বাংলাদেশের অনুবাদসাহিত্যও এর মধ্য দিয়ে নতুন গতি পাবে।

এমজে/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি