স্বপ্ন জয়ের পেছনের কারিগর
প্রকাশিত : ১৬:২৪, ২ নভেম্বর ২০১৯
টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ। দর্শকে পরিপূর্ণ গ্যালারি। সবাই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে প্রিয় দলকে সমর্থন জোগাতে। দৃষ্টি সবার খেলোয়াড়দের দিকে। কখনো বা অর্জিত হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য আবার কখনো বারবার আক্রমণ করেও অর্জন থেকে বেশ দূরে থাকতে হচ্ছে খেলোয়াড়দের। কিন্তু পরতে পরতে বদলে যাচ্ছে খেলার মোড়।
বুঝে উঠা যাচ্ছে না, আসলে কোন টেকনিক অবলম্বন করে খেলছে পুরো টিম। দলের সবাই একই সাথে কখনো বা হয়ে উঠছে আক্রমণাত্মক আবার কখনো খেলছে ধীরগতিতে, আবার কখনো বেশ টেকনিক্যালভাবে গুছিয়ে নিয়েই চলছে পুরো ম্যাচ। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে সবাই একে অন্যকে বুঝতে পারছে? কিভাবে সবাই এক মুহূর্তে বদলে ফেলছে খেলার ধরণ? কে দিচ্ছে তাদের দিক নির্দেশনা? কার নির্দেশনায় অর্জন করছে সফলতা!
এমন কেউ তো অবশ্যই আছে ,যার নির্দেশনায় চলছে এই পুরো কারবার।
হ্যাঁ, খেলার মাঠে এমন মানুষ থাকে যার চেয়ারে বসার ধরণ, চুইংগাম খাওয়ার স্টাইল, বা শারীরিক অঙ্গভঙ্গি যা কিনা পরতে পরতে বদলে দেয় খেলার মোড়। এছাড়াও খেলার মাঠের বাইরে থাকে এমন কিছু মানুষ যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে একটি শক্তিশালী টিম।
কিন্তু তারা চিরজীবনই থাকেন পর্দার আড়ালে। কেউ তাদের তেমন চেনেন না। তবে এ নিয়ে তাদের কোনো কষ্টও নেই ! তাদের টিম যখন বিজয়ের গৌরব অর্জন করে তখন তাদের থেকে বেশি খুশি বুঝি আর কেউ হয় না। বুঝতেই পারছেন কাদের কথা বলছি!
হ্যাঁ,তারা আর কেউ নয় , তাদের কেউ দলের কোচ, কেউ বা টিমের ম্যানেজার আবার কেউ বা স্বেচ্ছাসেবক। এমনই একদল স্বপ্নজয়ের পেছনের মানুষের গল্প শোনাবো যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তাদের টিম গণ বিশ্ববিদ্যালয় আজ খেলাধুলার জগতে একটি শক্তিশালী ইউনিটে পরিণত হয়েছে।
যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, আলাদা কিছু টেকনিক, নিজেদের মধ্য খুব ভালো বোঝাপড়া আর সময়মত সঠিক সিদ্ধান্ত জোরে ৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া বঙ্গবন্ধু আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টে তাদের টিম ছেলেদের ফুটবল, মেয়েদের ফুটবল, মেয়েদের ক্রিকেট, মেয়েদের বাস্কেটে চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বর্ণ পদক অর্জন করেছে।
এছাড়াও বা সোনালী অতীত ক্লাবের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হওয়া ফারাজ আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল গোল্ডকাপে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছনে ফেলে শিরোপা জেতার পাশাপাশি ক্লেমন ইনডর ক্রিকেটে রয়েছে তাদের আধিপত্য।
নিজদের বিভিন্ন অর্জন ও টিমকে ঘিরে অজানা অনেক অনুভূতি,পাওয়া না পাওয়ার অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ হয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া জগতের জয়ের পেছনের কারিগরদের সাথে।
টিমকে ঘিরে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া দলের কোচ মো. হাবিব উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘কোচিং প্রফেশন অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। প্রতিটি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হয়। কোনো সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়, তবে দল ভাল কিছু করলে অনেক ভাল লাগে।’
তিনি বলেন, “কোচিং প্রফেশন মানেই একটা থ্যাংক্সলেস জব। তবে স্যাটিসফেকশন আছে, যে কাজটি করছি, সে কাজ করে যদি আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় সেটা অনেক বড় পাওয়া। আর কোনো একটি দল একবারেই ভাল করতে পারেনা, দীর্ঘদিন অনুশীলন করার মধ্য দিয়ে একটি টিম কম্বিনেশন গড়ে উঠে। আমাদের বেলাতেও সেটাই ঘটেছে, আমাদের টিমে প্রফেশনাল খেলোয়াড় খুব বেশি না থাকা স্বত্বেও টিম কম্বিনেশন থাকার কারণে ছেলেমেয়েরা অনেক ভাল করছে। অনেক দূর এগিয়ে যাবে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়রা ।”
গবি ক্রীড়া দলের স্বেচ্ছাসেবক মহসিন হোসেন বলেন, “সত্যি বলতে যখন টিম জয় লাভ করে তখন আমার আনন্দের সীমা থাকে না। কেউ আমাকে স্বরণ করুক আর নাই করুক দলের বিজয় আমাকে সব থেকে বেশি উল্লাসিত করে।
খেলাধুলাকে খুব বেশি ভালোবাসি, যখন আমি টিমের সঙ্গে থাকবো না, তখন যদি কখনো আমার কাছে খবর আসে যে গবি টিম জয় লাভ করেছে অবশ্যই তখন অতীতের কথা মনে করে কষ্ট লাগবে আবার আনন্দ ও লাগবে এই জেনে যে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম জয় লাভ করেছে।
কিছু মানুষ পিছনে থেকেই তৈরি করে স্বপ্ন জয়ের পদচারণা। সামনের পর্দায় তাদের দেখা না গেলেও তারা ঠিক জায়গা দখল করে রাখেন স্বপ্নজয়ের সারথীদের মনের মণিকোঠায়। স্বপ্নজয়ের পেছনের এই কারিগরদের হাত ধরেই আসবে অনেক বড় বড় অর্জন, এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
আই/
আরও পড়ুন