স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘প্রকৃতির বন্ধু’ ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের খামার
প্রকাশিত : ১৩:২৮, ২৭ এপ্রিল ২০২২ | আপডেট: ১৩:৪৮, ২৭ এপ্রিল ২০২২
প্রকৃতিতে অনেক উপকারী পোকামাকড়ের একটি হচ্ছে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই। আদতে মাছি হলেও এটি কোনো রোগের বাহক নয়। জীবনচক্রের পুরো প্রক্রিয়াতেই এই পতঙ্গটি কোনো না কোনোভাবে প্রকৃতিতে উপকারী ভূমিকা রাখে।
একটা সময় পোলট্রি খাবার হিসেবে বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই এখন বাংলাদেশেও বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ হচ্ছে। স্বল্প পরিসরে হলেও এর খামার করে অনেকে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন। এমনই একজন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বারন্তী গ্রামের সুমন আহমদ। এই মাছির খামার তার বেকারত্ব দূর করেছে।
মাস ছয়েক আগে ইউটিউবে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই ও এর লার্ভার উপকারিতার বিষয়টি নজরে আসার পর খামার করতে উৎসাহিত হন তিনি।
এরপর এই পতঙ্গের দুই কেজি পিউপা (মাতৃ পোকা) সংগ্রহ করে শ্রীমঙ্গল কলেজ রোড এলাকায় ময়লার ভাগারের পাশে শুরু করেন খামার। বর্তমানে তার পিউপার পরিমাণ প্রায় ৩০০ কেজি।
সুমন আহমদ জানান, সিলেট বিভাগে দুটি খামার রয়েছে। একটি তার, আর আরেকটি রয়েছে ফেঞ্চুগঞ্জে।
সুমনের খামার থেকে এখন প্রতি কেজি লার্ভা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, পিউপা বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় এবং পোকা থেকে উৎপাদিত জৈব সার বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে।
যেভাবে প্রকৃতির বন্ধু
স্ত্রী ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই প্রতিমাসে পাঁচ থেকে ৮০০ ডিম দেয়। এই ডিম রাখতে হয় ময়লা বা মানুষের উচ্ছিষ্টে। এই উচ্ছিষ্ট খেয়ে কয়েকদিনেই লার্ভায় পরিণত হয়।
২১ দিন পর এই লার্ভা হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবারের উপযুক্ত হয়। এই সময়ে লার্ভা যে মলত্যাগ করে তা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার হয়।
লার্ভা মাতৃপোকায় পরিণত হওয়ার সময় তারা খাবার বন্ধ করে দেয় এবং তাদের চামড়া শক্ত হয়। পরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে পরিপূর্ণ ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই। পূর্ণবয়স্ক ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই তিন থেকে পাঁচ দিন বাঁচে।
উপকারী এই পতঙ্গটি আমাদের আশপাশে থাকলেও মানুষের সংস্পর্শে আসে না। এরা সাধারণত ময়লা-আবর্জনার কাছাকাছি ঝোপঝাড়ে বাস করে। পূর্ণাঙ্গ পোকা দেখতে অনেকটা মৌমাছির মতো তবে মাছির মতো কোনো রোগের বাহক নয়।
বর্তমান বিশ্বে খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়ে যায়। এ খাদ্য পচে পরিবেশ দূষণ করছে। এসব বর্জ্যই মূলত এই মাছির খাবার। আর হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা এবং গৃহপালিত প্রাণীর মল এর লার্ভার খাবার। এই পতঙ্গ জৈব আবর্জনার ৭১.৫ শতাংশ পর্যন্ত ভক্ষণ করতে সক্ষম।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শাখাওয়াত হোসেন জানান, ব্যাপকভাবে এ পতঙ্গের খামার গড়ে উঠলে দেশের পোলট্রিশিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
তিনি বলেন “বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের চাষাবাদ বাড়ানোর পাশাপাশি খামারিদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে সরকারের মৎস্য, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একসাথে কাজ করা দরকার। কারণ এটি থেকে মাছ পাবে পুষ্টিকর খাবার, এতে মাছের উৎপাদন বাড়বে। বাড়বে মাংস ও ডিমের উৎপাদন। অন্যদিকে এর মল থেকে উৎপাদিত জৈব সার দ্বিগুণ কৃষিপণ্য উৎপাদনে সহায়ক হবে।“
এসবি/এএইচএস
আরও পড়ুন