পর্ব-৩
স্বর্ণের বাজারে ঠকছেন ক্রেতারা
প্রকাশিত : ১৯:০৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৩:২৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭
স্বর্ণের বাজারে দাম নিয়ে চলছে রীতিমতো স্বেচ্ছাচারিতা। বাজারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যত কোনো নজরদারি না থাকায় জুয়েলারি মালিকরা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছেন। বিশ্ব বাজারের সঙ্গে দামের নেই সামঞ্জস্য। যে কারণে বিভিন্ন দেশের চেয়ে ৪৩ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দাম দিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের স্বর্ণালংকার কিনতে হচ্ছে। এবাবেই প্রতিনিয়ত ঠকতে হচ্ছে ক্রেতা সাধারণের।
এছাড়া ওজনে কম দিয়ে প্রতিনিয়ত ক্রেতাকে ঠকান এ খাতের ব্যবসায়ীরা। সাধারণ ক্রেতা স্বর্ণের ওজনের প্যাচ-কৌশল ঠিকমতো বুঝতে পারেন না। আর এ সুযোগটি নেয় জুয়েলারি মালিকরা। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা অলংকারে খাদের পরিমাণ বেশি দিয়েও ঠকান ক্রেতাকে। শুধু তাই নয়, গয়না বিক্রি করার সময় জানানো হয় যে, ২৪ বা ২২ ক্যারেট স্বর্ণ দেওয়া হচ্ছে, বাস্তবে দেওয়া হচ্ছে ১৮ ক্যারেট বা তারও কম মানের। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব বাজারের দাম, দেশের বাজারের দাম এবং স্বর্ণের ক্যারেট সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে তবেই অলংকার কেনা ভালো।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস) সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত দেশে ৪ ধরনের স্বর্ণ বিক্রি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে উন্নতমানের ও দামি হচ্ছে ২৪ ক্যারেটের স্বর্ণ। এতে খাঁটি সোনা থাকে ৯৯.৯১ ভাগ। অবশ্য আমাদের দেশে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ ও এর গয়না বেশি বিক্রি হয়। ২২ ক্যারেটে ৯২ শতাংশ খাঁটি সোনা থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারেও ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ জনপ্রিয়। ২১ ক্যারেটে ৮৭ শতাংশ, ১৮ ক্যারেটে ৭৫ শতাংশ এবং সনাতনী স্বর্ণ পুরাতন গয়না ভেঙে বানানো হয়।
বর্তমানে দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের ১ ভরি স্বর্ণের দাম ৪৯ হাজার ২২২ টাকা। কিন্তু দুবাই, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার বাজারে এ মানের সোনার প্রতি ভরি ৩৫ হাজার ২০০ টাকা। এ হিসাবে বাংলাদেশে ভরিতে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে ১৪ হাজার ২২ টাকা। এছাড়া পাশের দেশ ভারতের বাজারেও এ ক্যাটাগরির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৩৭ হাজার ৬০৩ টাকা। এ হিসাবে ভারতের চেয়েও ভরিতে ১১ হাজার ৬১৯ টাকা দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে দেশের বাজারে।
স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণে ক্রেতাকে ঠকানোর বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সভাপতি এবং ভেনাস জুয়েলার্সের মালিক গঙ্গাচরণ মালাকার একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবসায়ীদের স্বর্ণ সরবরাহ করে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকই ঠিক করে দেয় প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম কতো হবে। আমরা কখনই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে দাম নির্ধারণ করতে পারি না। কারণ, আমরা ওই দামে স্বর্ণ পাই না। শুধু পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে কিছুটা সমন্বয় করতে হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে আমাদের মেলানো যাবে না। তিনি আরও বলেন, বৈধভাবে দেশে কোনো স্বর্ণ আমদানি হয় না। যারা বিদেশে যায়, তারা ট্যাক্স ছাড়া ১০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ কিনে আনতে পারেন। এর বাইরে স্বর্ণ আনতে হলে ভরিতে ৩ হাজার টাকা কর দিতে হয়। তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়লে তার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরাও দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়িয়ে থাকি। তবে ক্রেতারা স্বর্ণের অলংকার কিনে ঠকেন- এটি আমি বিশ্বাস করি না। কারণ সামান্য লাভ রেখে আমরা অলংকার বিক্রি করি। তবে ওজনে কম দেয়ার বিষয় সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারবো না। কেননা দেশের সব জুয়েলারি দোকানে তো আর আমরা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো ন।
বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই দেশীয় বাজারে বাড়ানো হচ্ছে স্বর্ণের দাম। কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম কমলে খুব সামান্যই সমন্বয় করা হয়। আবার অনেক সময় সমন্বয় করাই হয় না।
বাজুস সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাজারে সর্বশেষ দাম বাড়ানো হয়েছে গত ২৬ নভেম্বর। সেদিন ভরি প্রতি স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরের দিন থেকেই স্বর্ণের এই নতুন মূল্য কার্যকর হয় বলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি জানায়। তবে এবার বিশ্ব বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশে বাড়ানো হয়েছে এমনটি নয়, এবার দাম বাড়ানো হয়েছে দেশে তেজাবি বা সনাতনী স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে। বাজুসের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সর্বসম্মত মতামতের ভিত্তিতে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ী এখন দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬ গ্রাম) ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম পড়বে ৪৯ হাজার ২২২ টাকা। ২১ ক্যারেট ৪৭ হাজার ৫ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট স্বর্ণ বিক্রি হবে ৪১ হাজার ৪০৭ টাকায়। অন্যদিকে সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ভরিপ্রতি ২৫ হাজার ৩৬৯ টাকার বদলে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ হাজার ৯৫২ টাকায়। আর প্রতি ভরি ২১ ক্যারেট রূপার (ক্যাডমিয়াম) দাম ১ হাজার ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের ১ ভরি স্বর্ণের দাম ৪৯ হাজার ২২২ টাকা। কিন্তু দুবাই, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার বাজারে এ মানের সোনার প্রতি ভরি ৩৫ হাজার ২০০ টাকা। এ হিসাবে বাংলাদেশে ভরিতে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে ১৪ হাজার ২২ টাকা। এছাড়া পাশের দেশ ভারতের বাজারেও এ ক্যাটাগরির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৩৭ হাজার ৬০৩ টাকা। এ হিসাবে ভারতের চেয়েও ভরিতে ১১ হাজার ৬১৯ টাকা দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে দেশের বাজারে।
/ডিডি/ এআর