স্বর্ণ-হীরা ধরতে মাঠে নামছে এনবিআর
প্রকাশিত : ১৬:২৬, ২১ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১৬:৫৪, ২১ জুন ২০১৯
স্বর্ণ আমদানি সহজ করতে ও এখাতে হাজার কোটি ঢাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অবশেষে সরকার আমদানি নীতিমালা তৈরি করছে। আগামী জুলাই থেকে এই নীতিমালা কার্যকর হবে। ফলে আগামী মাস থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত ব্যাংক ও ডিলাররা বার আকারে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবে।
শুধু জুয়েলার্স সমিতির সদস্যরা অনুমোদিত ডিলারদের কাছ থেকে সেই স্বর্ণ কিনতে পারবেন। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে স্বর্ণের বার আমদানি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। তবে নীতিমালায় আগে মজুদ করা স্বর্ণের বৈধতা দেয়ার দাবি জুয়েলার্স সমিতির।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সরকারের এমন নীতিমালা অবশ্যই ভাল উদ্যোগ। তবে যথাযথ বাস্তবায়ন না হলে স্বর্ণব্যবসায়ীকে জটিলতায় ফেলতে পারে। সরকারের উচিত সব স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে বৈধ ও নিয়মের মধ্যে আনতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণের পাশাপাশি ডায়মন্ড বা হীরার দিকেও নজর দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এখাতে কঠোর নজরদারি করলে বিপুল অংকের রাজস্ব সরকারের ঘরে আসবে। প্রাথমিকভাবে এবছরের জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে হীরা বা হীরার অলংকারের অবৈধ আমদানি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। এখন চোরাই পথেই এগুলো বেশি আসছে। হুন্ডির মাধ্যমে এসবের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে।
সর্বশেষ জুন ২০১৯ টার্গেট দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা অবৈধ সোনা-হীরা বৈধ করার সুযোগ দেয় এনবিআর। পাশাপাশি করমেলার মতো স্বর্ণমেলারও আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে অনুষ্ঠেয় এসব মেলায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের কাছে থাকা গচ্ছিত স্বর্ণ-হীরার হিসাব দিবেন এবং নির্ধারিত হারে কর পরিশোধ করবেন। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ২৩ থেকে ২৫ জুন এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ২৪ থেকে ২৫ জুন এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
এতে ভরিপ্রতি এক হাজার টাকা কর দিয়ে সোনা ও সোনার অলংকার, ক্যারেট প্রতি ছয় হাজার টাকা দিয়ে কাট ও পোলিশড হীরা এবং ভরিপ্রতি পঞ্চাশ টাকা দিয়ে রৌপ্য বৈধ করা যাবে। মেলা ছাড়াও আয়কর অফিসে গিয়ে কর পরিশোধ সাপেক্ষে ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুবিধা পাওয়া যাবে।
তবে এই সুযোগ শুধু নিবন্ধিত ব্যবসায়ী সমিতির বৈধ সদস্যদের জন্য দেওয়া হয়েছে। ফলে সারাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নিতে পারছেন না। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সদস্যদের জন্য এই সুযোগ দেওয়ায় দেশের প্রায় ২৫ হাজার সোনা ব্যবসায়ীর কাছে থাকা স্বর্ণ বৈধতার সুযোগ পাচ্ছে না।
কেউ কেউ বলছেন, এটি প্রকারান্তরে একটি সমিতির সদস্যপদ নিতে ব্যবসায়ীদের বাধ্য করার শামিল। সাধারণত ছোট পুঁজির ব্যবসায়ীরা এ ধরনের সংগঠন থেকে দূরে থাকেন, কারণ সংগঠন করার ক্ষেত্রে নানা বিপত্তি পোহাতে হয়। তাদের মতে, সরকার বেসরকারি খাত বিকাশের পক্ষে থেকেও এধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে সমর্থন করায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র সোনা ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে না।
যেখানে হাতে-কলমে কাজ শিখে কেউ হয়তো নিজেই গ্রামে একটি ছোট্ট দোকান খুলে সংসার চালাচ্ছে। তাদের ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট এমনকি কারো কারো টিআইএনও রয়েছে। তারা এখন অপেক্ষাকৃত বড় ব্যবসায়ীদের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। কেউ কেউ বলছেন, স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী ওই সমিতির সদস্যপদ না থাকলে আমদানির অনুমতিও মিলবে না। যা মুক্ত বাণিজ্যের পরিপন্থি।
আলী আহমেদ নামে ঢাকার একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেন, দেশব্যাপী ৩০ থেকে ৩৫ হাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ীর মধ্যে বাজুসের সদস্য ৪০ শতাংশের কম। একজন ব্যবসায়ীর ভ্যাট নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স এবং ডিসি অফিস কর্তৃক স্বর্ণ ব্যবসায়ের ডিলিং লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও কেন তাকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাজুসের সদস্য হতে হবে? আবার এখন বাজুসের সদস্য হতে গেলেও অনেককেই রহস্যজনক কারণে সদস্যপদ দিচ্ছে না।
ফলে ৩০ জুনের পর আমাদের মতো সব ব্যবসায়ী চোরাকারবারি আর বাজুসের সদস্যরা হবে বৈধ স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তিনি অভিযোগ করেন, ইস্যুটি নিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে একজন কর্মকর্তা তাকে বলেন, আপনি চোরাচালানকারী। আপনাকে পুলিশে ধরিয়ে দেব।
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, স্বর্ণ আমদানি নীতিমালায় সংগঠনের সদস্য হওয়ার বাধ্যবাধকতা একটি ভালো উদ্যোগকে জটিলতায় ফেলতে পারে। এই ধরনের শর্ত দিয়ে স্বর্ণ বৈধ করতে আসা ব্যবসায়ীদের আটকে রাখার সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। সরকারের উচিত হবে সব স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে বৈধ ও নিয়মের মধ্যে আনতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা।
টিআর/
আরও পড়ুন