ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

স্রষ্টার প্রিয়ভাজন করবে দান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫৪, ১৯ এপ্রিল ২০২১ | আপডেট: ১২:২১, ১৯ এপ্রিল ২০২১

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজে সেই মানুষেরই একটা অংশ গরীব-দুস্থ। তারা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গরীব-দুস্থসহ সমাজের আশ্রয়হীন, দুর্বল ও অসহায় মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা সকল ধর্মের অন্যতম বিষয়। সব ধর্মই দানের শিক্ষা দেয়। অসচ্ছল, বিপদগ্রস্ত এবং অভাবী মানুষের সাহায্যে কেউ এগিয়ে এলে আল্লাহ খুব খুশি হন। করোনার এই সময় অসংখ্য মানুষ কর্ম হারিয়ে অসহায় জীবন কাটাচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়ান মানবিক দায়িত্ব।

তাই গরীব-অসহায়, দুস্থের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা প্রদর্শন ও সহানুভূতিশীল হওয়া অত্যাবশ্যক। ভ্রাতৃত্বের নৈতিক ও মৌলিক দাবি হল, একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং বিপদাপদে পাশে দাঁড়ানো। সহায়তা ও সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করা। 

কোনো ভাই অসুস্থ বা আহত হলে কিংবা কোনো ক্ষতি বা বিপদের সম্মুখীন হলে অপর ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। কারণ দুনিয়ায় কোনো মানুষের পক্ষে একাকী বাস করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন প্রয়োজনে একে অপরের সাহায্য ছাড়া মানুষ চলতে পারে না।

এ ছাড়া বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে। কেন না, কোনো মানুষ যখন কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়, সে তখন সবচেয়ে বেশি অসহায়ত্ব অনুভব করে। ওই সময় সে আন্তরিকভাবে অন্যের সাহায্য প্রত্যাশা করে।

হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বোখারি, হাদিস : ১৭৩২)

মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৬)

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও  বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বান্দার সাহায্যে ততক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ সে অপর ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩১৪)

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত : ১৯)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে অন্যত্র এরশাদ করেন, ‘তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে।’ (সূরা দাহর, আয়াত : ৮)

রাসূল (সা.) বলেন, ‘হে বনি আদম! যদি উদ্বৃত্ত অর্থ দান কর, তাহলে ভালো হবে আর আটকে রাখলে ক্ষতি হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৯৬৪)

মহাবিচার দিবসে মহামহিম আল্লাহ অনুযোগ করবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম। তুমি আমাকে দেখতে যাও নি।’ 

অভিযুক্ত তখন আরজ করবে, ‘প্রভু হে! তুমি তো মহাবিশ্বের প্রতিপালক। (তুমি কীভাবে অসুস্থ হতে পারো?) আমি কোথায় তোমাকে দেখতে যাব?’ 

আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, অমুক অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাও নি। তুমি কি জানতে না যে, তাকে দেখতে গেলে সেখানেই আমাকে পেতে?’ 

আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম। তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাও নি।’

অভিযুক্ত তখন আরজ করবে, ‘হে মহান অন্নদাতা! তুমি যেখানে সবার অন্নের ব্যবস্থা করো, সেখানে আমি তোমাকে কীভাবে খাওয়াব?’ 

আল্লাহ বলবেন, ‘অমুক তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাও নি। তুমি কি জানতে না যে, তখন যদি তুমি তাকে খাবার দিতে, তাহলে তার পুরস্কার আমার কাছ থেকে পেতে?’ 

আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম। তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে পানি দাও নি।’ 

অভিযুক্ত তখন আরজ করবে, ‘হে মহান তৃষ্ণা নিবারণকারী! তুমি যেখানে মহাবিশ্বের সবার তৃষ্ণা নিবারণ করো, সেখানে আমি তোমাকে কীভাবে পানি পান করাব?’ 

আল্লাহ বলবেন, ‘অমুক তৃষ্ণার্ত তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পানি পান করাও নি। তুমি কি জানতে না যে, তখন তুমি তাকে পানি পান করালে এখন আমার কাছ থেকে এর পুরস্কার পেতে?’
—আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম

চলছে রমজান মাস। করোনা কালের এ মাসে অসহায়, অভাবিদের দানের ফজিলত অনেক বেশি। এ জন্য অন্য ১১ মাসের তুলনায় এ মাসে অধিক দান-সদকা করা উচিত। কারণ রোজা রাখার ফলে কোনো কোনো সময় রোজাদার অভুক্ত উপবাস থাকার যে কষ্ট অনুভব করে থাকে তাতে অধিকাংশ সময় সেই অভাবি-অভুক্তদের অবস্থা স্মরণ হতে থাকে এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তাদেরকে দয়া, অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখতে অভ্যস্ত হয়। রোজার আরও একটি উপকার এই যে, ফকির-মিসকিনদের অনুসরণে রোজাদারও তাদের ন্যায় কষ্ট ভোগ করে এবং এতে আল্লাহ তাআলার দরবারে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি