ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

হাঁচি আটকে রাখলে মারাত্মক ক্ষতি!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:২৯, ২৬ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১৭:৩৩, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

আপনি কি হাঁচির জন্য খুব বেশি বিরক্ত! ভাবছেন হাঁচি দিলে পাশের কেউ বিরক্ত হবে! হওয়াটাও স্বাভাবিক। তবে হাঁচি এমন একটি বিষয় যা সবারই কম-বেশি হয়। ঠাণ্ডা-সর্দির সমস্যায়ও হাঁচি হতে পারে। অ্যালার্জির কারণেও হাঁচি আসতে পারে। এটা এমন এক রিফ্লেক্স যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তবে দেহের জন্য জরুরি হলেই হাঁচি আসে। তাই হাঁচি আসলে হাঁচুন। মনে রাখবেন- হাঁচি আটকে রাখলে মারাত্মক ক্ষতি। এখন বুঝতে না পারলেও, পরে মাসুল গুণতে হবে। ডাক্তার গবেষকদের একাংশের মতে, হাঁচি চাপলে হতে পারে মারাত্মক বিপদ।

মাইকেল বেনিঞ্জার নামে এক চিকিৎসা বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, হাঁচির শব্দ নাক থেকে প্রচণ্ড গতিতে বেরিয়ে এসে বাতাসে মেশে। সেই গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ মাইল থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ মাইল পর্যন্ত হতে পারে। বেনিঞ্জারের বক্তব্য, বহির্মুখী এই চাপকে জোর করে শরীরের ভিতর গিলে নিলে ভিতরে ভিতরে বহু ক্ষতি হতে পারে। যেমন,  ল্যারিংসে ফ্র্যাকচার, কোমরে ব্যথা, মুখের নার্ভে ক্ষত।

এখানেই শেষ নয়। জোর করে হাঁচি চাপলে এর থেকেও বড় বিপদ ঘটতে পারে। কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বধির হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। হাঁচির বহির্মুখী প্রেসার শরীরের ভিতরে গেলে পাঁজর পর্যন্ত গুঁড়িয়ে যেতে পারে। হাঁচি চাপলে যখন তখন মাসলে মারাত্মক টান ধরতে পারে। বেনিঞ্জারের যুক্তি, হাঁচির প্রেসার বাইরে বেরিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক নিয়ম। বহির্মুখী সেই ফোর্স জোর করে শরীরের ভেতর চালান করলে তা মস্তিষ্ক ও দেহের বিভিন্ন জায়গায় তরঙ্গ তৈরি করে। ওই তরঙ্গের আঘাতে শরীরে প্রচুর ড্যামেজ হয়।

হাঁচির মাধ্যমে শরীর থেকে ভাইরাস বেরিয়ে যায়। হাঁচি নাকের ভিতরের নালি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানী বেনিঞ্জারের বক্তব্য, জোর করে হাঁচি চাপলে সংক্রামিত মিউকাস ইউস্ট্যাশিয়ান টিউবের মাধ্যমে কানের মধ্যে প্রবেশ করে। এত সব দিক বিবেচনা করে ডাক্তারদের পরামর্শ হাঁচির মতো প্রোটেক্টিভ রিফ্লেক্সকে উল্টো পথে চালনা না করাই ভালো।

এবার হাঁচি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জেনে নিন –

- আপনার হাঁচি ঘণ্টায় ১০০ মাইল বেগে বের হয়। তবে অনেকে আছেন যারা বহু কাঠখড় পুড়িয়ে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হাঁচি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৩৫ মাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারেন।

- হাঁচির মাধ্যমে বের হওয়া জীবাণু বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। হালকা-পাতলা হাঁচিতে জীবাণু চারদিকের ৫ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত ছড়াতে পারে। আর জোরেসোরে বের হওয়া হাঁচি তো ৩০ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত এলাকা দূষিত করে দেয়।

- সূর্যের আলোতেও অনেকের হাঁচি আসে। পাখির পাখনা, মরিচের গুড়ো, ঠাণ্ডা এবং সর্দিজনিত অ্যালার্জি হাঁচির কারণ। কিন্তু অদ্ভুত হলেও সত্য, প্রতি চারজনের একজন সূর্যের আলোর কারণে হাঁচি দেন। ফোটিক স্নিজ রিফ্লেক্স এক ধরনের প্রতিক্রিয়া যার ফলে সূর্যের আলোতে হাঁচি আসে। তবে বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি পরিষ্কার নন যে, সূর্যের আলো কেন হাঁচির কারণ। তবে ধারণা করা হয়, উজ্জ্বল সূর্যের আলো নাসারন্ধ্রে সংকোচনের সৃষ্টি করে যার মাধ্যমে মস্তিষ্কে হাঁচির নির্দেশ চলে যায়।

- পরপর দুই বা তিনবার হাঁচি হওয়াটা স্বাভাবিক। নাসারন্ধ্রের মধ্যে সুড়সুড়ি বা চুলকানি বা সংবেদনশীনতার কারণে যে হাঁচি হয়, তা নাসারন্ধ্রের অলি-গলিতে ঘুরপাক খেয়ে ঠিকভাবে বের হয়ে আসতে পারে না। তখন একাধারে আরো এক বা দুইবার প্রয়োজন পড়ে হাঁচি দেয়ার।

- হাঁচির সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে আপনার দুই চোখ বন্ধ হয়ে আসে। প্রচণ্ড বেগে হাঁচি বের হওয়ার সময় মানুষের পক্ষে চোখ খুলে রাখা সম্ভব হয় না। এটাকে বলে ইনভলেন্টারি রিফ্লেক্স। একই ধরনের রিফ্লেক্স হয় ডাক্তার যখন হাতুড়ি দিয়ে হাঁটুতে আস্তে আস্তে বাড়ি দিয়ে পরীক্ষা করেন।

- হাঁচির সময় চোখ বন্ধ হয়ে যায়, প্রচণ্ড বেগে বায়ু বের হয়ে আসে, কিন্তু হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বন্ধ হয় না। সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় হৃদযন্ত্র কোনো কারণে বন্ধ হয় না বা হঠাৎ একটি স্পন্দন মিস করে না। তা ছাড়া হাঁচির আগে মানুষ বড় আকারের শ্বাস টেনে নেয়। ফলে হাঁচির মুহূর্তে নার্ভের সংকোচন-প্রসারণ বোঝা যায় না। তাই এ সময় মানুষ হৃদযন্ত্রে তেমন কিছু অনুভব করে না।

- কিছু সময় হঠাৎ করে হাঁচি চলে আসে। আবার কিছু সময় এমন বোধ হয় যে হাঁচি আসবে। এমন কিছু পরিবেশ রয়েছে যেখানে শব্দ করে হাঁচি দেয়াটা অস্বস্তিকর হতে পারে। এসব পরিস্থিতিতে আমরা নাক ধরে হাঁচিটিকে সামাল দেয়ার চেষ্টা করি। এটা খুবই বাজে একটি কাজ। এতে চোখের রক্তের ধারকগুলো ফেটে যেতে পারে, মস্তিষ্কের রক্তের ধারকগুলো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং কানে শোনার জন্য যে ড্রাম রয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

- কিছু পদ্ধতি রয়েছে যা ব্যবহার করে হাঁচি হতে পারে এমন বোধ হওয়ার সময় তা সামাল দেয়া যেতে পারে। এ সময় নাক ডলাডলি করতে পারেন, উপরের ঠোঁটটি নীচের ঠোঁট দিয়ে নীচের দিকে টেনে ধরে বড় করে নিঃশ্বাস বের করে দিন। এতে হাঁচিটিকে দমন করা যায়।

সূত্র : জি নিউজ

এসএ/ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি