ঢাকা, বুধবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

হাসপাতালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা

প্রকাশিত : ১৪:৫৭, ৭ এপ্রিল ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

সরকারি পর্যায়ে উপজেলা, জেলা বা বিশেষায়িত হাসপাতাল যেখানেই চিকিৎসার জন্য যাওয়া হোক না কেন, ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি হতে ভোগান্তি, ভর্তি হওয়ার পর শয্যা পেতে ভোগান্তি, শয্যা পাওয়ার পর সেবিকা ও চিকিৎসকের দেখা ও সেবা পেতে ভোগান্তি। এরপর বিনামূল্যের ওষুধ পেতে ভোগান্তি, পথ্য পেতে ভোগান্তি, এমনকি শেষ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেতেও পোহাতে হয় ভোগান্তি। টাকা না দিলে পাওয়া যায় না স্ট্রেচার, হুইল চেয়ার এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ।

অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সেবা তো দূরের কথা, টাকা ছাড়া কোনো কথাই বলা যায় না। টাকা নিয়েও যে তারা ঠিকমতো চিকিৎসা বা সেবা দিচ্ছে তাও না।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে স্কুল পাস করেনি এমন সব লোককে চিকিৎসক সাজিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। মাঝে মাঝে এমন দু’একজন ধরা পড়লেও এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয় না।

শ্বাসকষ্ট নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে যান কুষ্টিয়ার মিছিরন। ৬৫ বছর বয়সী এ নারীর ফুসফুসে পানি জমাসহ কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে স্থানীয় হাসপাতাল থেকে তাকে রাজধানীর বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে রেফার করা হয়। মার্চের মাঝামাঝি দরিদ্র পরিবারের এ সদস্য সুস্থতার আশায় কিছু সম্পদ বিক্রি করে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আসেন। পরপর সাত দিন অসুস্থ শরীর নিয়ে ফজরের পর থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তিনি ভর্তি হতে পারেননি।

এমনকি বিভিন্ন পরিচয়ের সূত্র ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের দফতর থেকে সুপারিশ করিয়ে সেখানে চিকিৎসার সুযোগ পাননি মিছিরন। ১৭ মার্চ ভর্তি হওয়া এক রোগীকে ইনজেকশন পুশ করেছেন সুইপার! এমন অভিযোগ দেয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক রোগীকে জোর করে ছাড়পত্র দেয়ার অভিযোগ ওঠে। ২০ মার্চ হাসপাতালে গণশুনানিতে রোগী শাকেরা বেগমের মেয়ে কোহিনুর আকতার অভিযোগ করেন, তার মাকে মহিউদ্দিন নামে এক সুইপার ইনজেকশন পুশ করেন। পরে তদন্তে ঘটনার সত্যতা পায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে কোহিনুর জানান, অভিযোগ দেয়ার পর থেকে চিকিৎসকরা তাদের মানসিকভাবে হয়রানি শুরু করেন।

দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক তাকে বলেন, এভাবে অভিযোগ দিলে চিকিৎসা করতে পারব না। কিন্তু সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই ২৩ মার্চ সকালে তাকে বিভাগ থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।

মাত্র ১০০ টাকা না দিতে পারায় লাশ নামানোর স্ট্রেচার দেয়নি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চতুর্থ তলা থেকে মায়ের লাশ কাঁধে করে নামিয়েছেন ছেলে। ২১ মার্চ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। লালমনিরহাটের বাড়াইপাড়া গ্রামের এন্তাজ আলীর স্ত্রী বৃদ্ধ নছিরন অসুস্থ অবস্থায় আগের দিন বিকালে রংপুরে আসেন চিকিৎসা নিতে। চিকিৎসকরা জরুরি ভিত্তিতে তাকে রমেক হাসপাতালে ভর্তি করে দ্রুত অক্সিজেন দেয়ার পরামর্শ দেন। তাকে ভর্তি করা হলেও রাত ৩টা পর্যন্ত রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়নি। ভোরে মারা যান নছিরন। তার লাশ হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে নিচে নামাতে কর্মচারীদের অনুরোধ করলে তারা ১০০ টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় স্ট্রেচার পর্যন্ত দেয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত কাঁধে করে লাশ নিয়ে নিচে নামিয়ে আনে ছেলে শরিফুল। এ ধরনের ঘটনা একটি, দুটি বা তিনটিতে সীমাবদ্ধ নয়। দেশের প্রতিটি হাসপাতালে প্রতিদিনই এমন ঘটনা ঘটছে। গণমাধ্যমের কল্যাণে কিছু ঘটনা প্রকাশিত হলেও বেশর ভাগই থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ৫৫ ভাগ মানুষ এখনও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এসব মানুষের স্বাস্থ্যসেবার প্রধান মাধ্যম এলাকার ওষুধের দোকানদার ও নিজস্ব চিকিৎসা ব্যবস্থা। অর্থাৎ তারা কেউই নিবন্ধিত চিকিৎসকের সেবা পায় না। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বাধ্যকতা রয়েছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই ৫৫ ভাগ মানুষের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে দেশের ৬৭ ভাগ মানুষকে পকেট থেকে টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এর ফলে প্রতি বছর ৫ শতাংশ মানুষ সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ছে। যা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিপন্থী। সর্বোপরি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে কাউকে যেন পকেট থেকে ব্যয় করতে না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত সেবা প্রদানের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।

কিন্তু সরকার সেটা বাড়াচ্ছে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেসরকারি খাত স্বাস্থ্যসেবার নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। এসব কারণেই সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি সরকারি হাসপাতালে অর্থের বিনিময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে প্রাইভেট প্রাক্টিস করানোর যে প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে, এতে এ দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আমিনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সেবার মানে কোথাও কোথাও কিছু সমস্যা থাকতে পারে। সারা দেশে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকসহ সেবা সংশ্লিষ্ট পদে লোকবলের ঘাটতি রয়েছে। এসব পদে লোকবল নিয়োগ করতে পারলে সেবার মান বাড়ানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এটি একবারে সম্ভব নয়। তবে পর্যায়ক্রমে সেবার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

টিআর

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি