ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

হাসিনার আর্শিবাদে হাজার কোটি টাকার মালিক নাফিজ

রাজিব জামান

প্রকাশিত : ১১:৪৮, ১৯ আগস্ট ২০২৪ | আপডেট: ১১:৫১, ১৯ আগস্ট ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

হাজার কোটি টাকার মালিক হতে বেশি দিন লাগেনি। মাথার ওপর ছিল ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার আর্শিবাদ। ব্যাংক, পুঁজিবাজার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কীভাবে লুটপাট করা যায়, এর সবই জানেন এই ক্যারিশম্যাটিক মানিমেকার। বলছি, চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের অর্থ-বিত্ত বানানোর গল্প।

ব্যাংকপাড়ায় মাফিয়া-খ্যাত নাফিজ সরাফাতের দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ জমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে অনুসন্ধানও।

চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, প্রায় শূন্য থেকে কীভাবে হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া যায় তা করে দেখিয়েছেন তিনি। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট এই মানিমেকার দেশের ব্যাংক, পুঁজিবাজার ও আর্থিক খাতের মূর্তিমান আতঙ্ক।

নাফিজ সরাফাতের আগ্রাসী যাত্রায় নতুন গতি আসে ২০১৭ সালে। সীমাহীন লুটপাটে বেসরকারি খাতের সাবেক ফারমার্স ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ২০১৭ সালে পদ ছাড়তে বাধ্য হন তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এরপরই চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। ব্যাংকটির নাম পাল্টে পদ্মা ব্যাংক রাখা হয়। 

কিন্ত নাফিজ সরাফাত দায়িত্ব নেয়ায় পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। বরং উত্তপ্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পরে ব্যাংকটি। চেয়ারম্যান হয়েই ব্যাংটির ৮শ’ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন নাফিজ। 

সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেইসের মালিকানায় যুক্ত নাফিজ সরাফাত সদ্য গ্রেফতার সালমান এফ রহমানেরও ঘনিষ্টজন। তার সঙ্গে যোগসাজসে শেয়ারবাজার থেকেও ১ হাজার ৭শ’ কোটি বের করেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। 

বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংক দখলের পরিকল্পনাও ছিল নাফিজের। তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদকে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক বানিয়েছেন। আর রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে ছেলে চৌধুরী রাহিব সরাফাতকেও সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক করার খায়েশ ছিল তার। সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত কতো টাকা বের করেছেন তার হিসাব পাওয়া যায়নি।  

কোম্পানি আইন ও অর্থনীতি বিশ্লেষক ব্যারিস্টার এএম মাসুম বলেন, “যে কেউ যদি ফ্রড করে, কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী হয়, যে কেউ যদি ব্যাংক থেকে টাকা নেয় শুধু ফ্রড করার জন্য এক্ষেত্রে তাদের শাস্তির জন্য ব্যাংক কোম্পানিজ অ্যাক্ট অথবা আমাদের যে অর্থঋণ আদালত আইন এটা সময়োপযোগী নয়। সেটা পরিবর্তন করতে হবে।”

দুর্নীতি দমন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল টাওয়ার কোম্পানি, বিদ্যুৎ প্লান্ট, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, তারকা হোটেল ব্যবসায়ও বিনিয়োগ আছে নাফিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের। আর এসব ব্যবসার নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন নাফিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা। 

ব্যারিস্টার এএম মাসুম বলেন, “যারাই টাকা নিয়েছে এই ব্যাংক থেকে তারাই দুর্নীতি করেছে। দুর্নীতি দমন আইনের দুটি ধারায় তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা যাবে।”

দুদকের তথ্য বলছে, শেখ হাসিনার আমলে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন নাফিজ সরাফাত। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত নাফিজ সরাফাত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভয় দেখাতেন সবাইকে। 

গোপালগঞ্জে বাড়ি বলে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট আত্মীয় হিসেবেও পরিচয় দিতেন তিনি।

নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি আড়ালে রাখতে দৈনিক বাংলা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজ বাংলা ব্যবহার করেন নাফিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের সবার দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। তবে এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত বলতে নারাজ দুদকের দায়িত্বশীলরা। 

এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া দেননি তিনি।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি