ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

‘হুমায়ূন অাহমেদের সামনে ১০ টাকার নোটের বস্তা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:০৫, ১৯ জুলাই ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

অাশির দশকের প্রথম দিকে অামি হুমায়ূন অাহমেদের একটি বই পড়ি। বইয়ের নাম শঙ্খনীল কারাগার। তারপরে পড়ি নন্দিত নরকে। তখন থেকে অামি হুমায়ূন অাহমেদের লেখার সঙ্গে পরিচিত। অামি থাকতাম শহীদুল্লাহ হলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ি। স্যারও তখন শহীদুল্লাহ হলে ছিলেন। সেই সুবাদে স্যারের সঙ্গে অামার মাঝে মধ্যে দেখা হয়েছে। কিন্তু খুব কাছে যাওয়ার সুযোগ ঘটেনি।

অামি একটা মঞ্চ নাটকের দলে কাজ করতাম। একটি নাটকের মঞ্চায়নের অাগে অামরা হুমায়ূন অাহমেদ- স্যারের কাছে গিয়েছিলাম স্যারকে অনুষ্ঠানে অতিথি করে নেওয়ার জন্য। তখন দুটো বিষয় কাজ করেছিল। একটা হলো অামি চাচ্ছিলাম স্যার নাটকটা দেখুক। দ্বিতীয় বিষয়টা হলো এই সুযোগে স্যারকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হবে। অামরা গিয়ে স্যারের সঙ্গে দেখা করলাম। কিন্তু তিনি বললেন অামরা যে সময়টায় তাকে অতিথি করেছি সেই সময়টায় তার অন্য অারেকটি প্রোগ্রাম অাছে। তাই তিনি সময় দিতে পারবেন না। এটা ১৯৮৬ সালের কথা। তারপর বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তাকে দেখতাম। এর মধ্যে তার অারও কিছু বই পড়ার সুযোগ হয় অামার। ২১`র বইমেলায় তাকে দেখতাম।

১৯৯৬ সালে অামরা `অন্যদিন` পত্রিকা করি। তখনো পর্যন্ত ওই মানের কোন পত্রিকা প্রকাশিত হতো না। `অন্যদিন` বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটা হৈ চৈ পড়ে। `বিচিত্রা` বন্ধ হওয়ার ছয় সাত মাস অাগে `অন্যদিন` বের হয়। তখন হুমায়ূন অাহমেদ `নক্ষত্রের রাত` নাটকের শুটিং করছিলেন। অামরা সিদ্ধান্ত নিলাম হুমায়ূন অাহমেদের নক্ষত্রের রাত নিয়ে প্রচ্ছদ রচনা করবো। কিন্তু তার কাছে যাব কীভাবে? যেতে হলে তো একটা মাধ্যম লাগবে। চ্যানেল অাইয়ের ফরিদুর রেজা সাগরের সঙ্গে অামার ভালো জানাশোনা ছিল। অামি তাকে অনুরোধ করলাম, যেন হুমায়ূন অাহমেদের সঙ্গে অামাদেরকে একটা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেন। সেই অনুযায়ী অামরা ডিএফপি`তে গেলাম। হুমায়ূন অাহমেদ- একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিলাম। তবে এই পরিচয়টাও ওখানে শেষ। এর সূত্র ধরে বেশি এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

এরপর অামরা ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করা শুরু করলাম। তখন ঈদ সংখ্যায় লেখার জন্য তাকে অামরা চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তিনি অামাদের কোন সাড়া দেননি। ১৯৯৭ সালে অামরা প্রকাশনা ব্যবসায় অাসি। `অন্যপ্রকাশ` নামে অামরা বাজারে অাসি। প্রথম বইমেলায় অামরা স্টল সাজিয়ে বসে অাছি বাংলা একাডেমীতে। অামাদের স্টলে কোনো কাস্টমার অাসে না। কেউ অাসে না। এদিকে হুমায়ূন অাহমেদ মেলায় অাসলেই সেই স্টলে প্রচণ্ড ভীড় হয়। মানুষ উপচে পড়ে। অামরা মনে মনে ভাবতাম, " ইস! যদি অামরা হুমায়ূন অাহমেদ- এর একটা বই অামরা ছাপাতে পারতাম!" কিন্তু জানতাম যে এটা বাস্তবে সম্ভব না।

কিন্তু এরপরও লেখক মঈনুল অাহসান সাবেরকে বললাম, অামরা হুমায়ূন অাহমেদের একটা বই ছাপাতে চাই। (এখানে ওনার প্রতি অাামার অাবেগ বা ভালোবাসা যেমন ছিল তেমনি বাণিজ্যিক উদ্দ্যেশ্য কম ছিল না।) মঈনুল অাহসান সাবের অামাদের জানালেন তিনি ( হুমায়ূন অাহমেদ) অামাদেরকে একটি বই দিতে রাজী হয়েছেন। তবে শর্ত হলো তাকে ১০ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিতে হবে। একথা শুনে অামাদের মাথায় হাত! ১০ লক্ষ টাকা অামরা কোথায় পাব। অামরা তখন মাত্র নতুন ব্যবসা শুরু করেছি। অাবার এই সুবর্ণ সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাচ্ছি না। তখন অামরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার করে ১০ লক্ষ টাকা জোগাড় করি। এর মধ্যে অামরা জানলাম, হুমায়ূন অাহমেদ নগদ টাকা পছন্দ করেন। চেক পছন্দ করেন না।

হুমায়ূন অাহমেদের বিভিন্ন লেখালেখিতে দেখেছি, তিনি মানুষকে চমকে দিতে পছন্দ করেন। নিজেও মুগ্ধ হতে পছন্দ করেন। অামরা ব্যাংক থেকে দশ- বিশ টাকার নোট নিলাম। সব কচকচে নতুন নোট। এগুলো একটা বস্তায় ভরলাম। এই বস্তা নিয়ে তার সামনে গেলাম। ওনাকে মুগ্ধ করার যে অাইডিয়াটা, এটাকে উনি বেশ পছন্দ করলেন। বললেন, শোন অামি ১০ লাখ টাকা কোন বইয়ের জন্য নেই না। অামি অগ্রীম নেই দুই লাখ টাকা। তিন লাখ টাকাও নিয়ে থাকি। ১০ লাখ টাকা বলার উদ্দেশ্য হলো তোমরা অামাকে বিরক্ত করবে না। এজন্য তোমাকে ১০ লাখ টাকার কথা বলেছি। তোমরা সত্যি সত্যি ১০ লাখ টাকা নিয়ে চলে এসেছ। এতে অামি সত্যি অাশ্চর্য্য হয়েছি। অামি তোমাদের কে লেখা দেব। তোমরা অামার বই কর। এই হচ্ছে হুমায়ূন অাহমেদের সঙ্গে অামাদের চলা। হুমায়ূন অাহমেদের মোট ১১৭টি বই অামরা প্রকাশ করেছি।

অনু লেখক: অালী অাদনান।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি